Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আল্লাহ্র অস্তিত্ব : আধুনিক বিজ্ঞান ও দর্শন তত্ত¡

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

 

তিন
সুতরাং একথা বলা যেতে পারে যে, দর্শনে আস্তিক্যবাদী এবং নাস্তিক্যবাদী দুই ধারার দার্শনিক থাকলেও প্রভাবশালী আস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী দার্শনিকদের সংখ্যা কম নয়। আরো মজার ব্যাপার হলো, দার্শনিক স¤প্রদায়ের মধ্যে এমন অনেক দার্শনিকের পরিচয় মেলে যাঁরা জীবনের প্রথম পর্যায়ে নাস্তিক্যবাদী চিন্তাধারার পরিপোষকতা করলেও পরবর্তীকালে তাঁদেরকে আস্তিক্যবাদী চিন্ত-চেতনার সাথে কিছুটা আপোষরফা করে চলতে দেখা যায়। “আমিনুল ইসলাম, জগৎ জীবন দর্শন, পৃ. ২৬৭-২৬৮” এখন এখন বিজ্ঞানীদের মধ্যে আল্লাহ্র অস্তিত্ব বিষয়ে ধারণা কী-এ বিষয়ে আলোকপাত করা হচ্ছে।
দর্শনের ন্যায় বিজ্ঞানেও আল্লাহ্ সম্পর্কিত ধারণার পক্ষ-বিপক্ষ আছে। বিশেষ করে বিজ্ঞানীদের মধ্যে যাঁরা মনে করেন, “প্রকৃত জ্ঞান মাত্রই অভিজ্ঞতার সাথে এমনভাবে সম্পর্কিত থাকে যে, তার সত্যতা যাচাই করা কিংবা প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ প্রমাণ লাভ করা সম্ভব।” এঁরা নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী। এঁরা আরো মনে করেন, “ঘটনারাজি যদি প্রাকৃতিক কারণে ঘটে তাহলে তো তা অতিপ্রাকৃতিক কারণে ঘটে না”। “ড. ওয়াহীদুদ্দীন খান, আধুনিক চিন্তাধারা বনাম ধর্ম, পৃ. ৫”
অন্য আর একদল বিজ্ঞানী মনে করেন, বাহ্যিক ঘটনার কিছু বর্ণনা দিলেই তো একটা ঘটনার মূল কারণ আবিস্কৃত হয়ে যায় না। উদাহরণ স্বরূপ তাঁরা বলতে চান যে, “খাদ্য হজম হওয়া এবং তা দেহের অংশে রূপান্তরিত হওয়ার বিষ্ময়কর ক্রিয়াকন্ডকে প্রথমে আল্লাহ্র দিকে সর্ম্পকিত করা হত। কিন্তুু এখন আধুনিক পর্যবেক্ষণের সাহয্যে ঐ রাসায়নিক ক্রিয়াকর্মের ফলশ্রæতি মানুষেরই দৃষ্টিগোচর হয়, তাই বলে কি আল্লাহ্র অস্তিত্বের বিষয়টি নেতিবাচক হয়ে দাঁড়াল? কোন সেই চূড়ান্ত শক্তি, যে রাসায়নিক উপাদনসমূহকে বাধ্য করল অনুরূপ উপকারী ক্রিয়াকান্ড ঘটাতে? খাদ্য মানুষের দেহে প্রবেশ করার পর একটি বিষ্ময়কর স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার অধীন যেভাবে বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে তা নিরীক্ষণ করার পর এ কথাটি একেবারে আলোচনা বহির্ভূত হয়ে দাঁড়ায় যে, এ বিষ্ময়কর ব্যবস্থা শুধুমাত্র ঘটনা পরস্পরায় অস্তিত্ব লাভ করেছে। প্রকৃত অবস্থা এই যে, এই নিরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণের পর এটাঁ আরো জরুরী হয়ে দাঁড়ায় যে, আমরা স্বীকার করবো, আল্লাহ্ তাঁর মহান নীতি অনুসারে এই কর্মকান্ড ঘটিয়ে থাকেন এবং এর অধীনেই তিনি জীবনকে বিকশিত করেন। প্রাগুক্ত, পৃ. ১৩”
এখানে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে যে, বিজ্ঞানীদের প্রথম দলটি নাস্তিক্যবাদে বিশ্ববাসী হলেও দ্বিতীয় দলটি আস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী। আস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী এই বিজ্ঞানীরা আল্লাহকে নিছক একটি শক্তি অথবা প্রথম বা আদি নিমিত্ত (ঋরৎংঃ ঈধঁংব) অথবা বিশ্বজাহানের আত্মা মনে করে না। বরং এঁরা আল্লাহকে সর্বজ্ঞ, শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী এবং ইচ্ছাশক্তির অধিকারী বলেই মনে করেন। এঁরা এও মনে করেন যে,আল্লাহ একবার সৃষ্টি করেই বসে নেই, বরঙ প্রতি মুহূর্তে সৃষ্টি করে চলেছেন। “জন ক্লোভার মোনজমা ঃ সম্পাদনা, অনুবাদক-সৈয়দ রেদওয়ানুর রহমান, চল্লিশ জন সেরা বিজ্ঞানীর দৃষ্টিতে আল্লাহ্র অস্তিত্ব (মদীনা পাবলিকেশন্স, ঢাকা : ত্রয়োদশ সংস্করণ-২০০০) পৃ. ৫”
এ প্রসঙ্গে আরো একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন বলে মনে হয়, আর তা হলো, নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসীদের মধ্যে অনেক বিজ্ঞানী প্রথম দিকে প্রকৃতির বাহ্যদিকের প্রতি দৃষ্টিক্ষেপ করে এক আল্লাহকে অস্বীকার করলেও পরে তাঁরা এক আল্লাহতে বিশ্বাস করেন। “প্রাগুক্ত, পৃ. ১৮”
এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, মধ্যযুগে সমগ্র খ্রীষ্টান জগতে বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তিদের উপর পুরোহিতততন্ত্র এমনভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল যার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ একদল বিজ্ঞানী নাস্তিক্যবাদ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এ কথার সমর্থনে ড. মরিস বুকাইলির মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তাঁর মতে, “মধ্যযুগটা ছিল খ্রীষ্টান জগতের জন্য অচলায়তনের কাল; আর একই আবর্তে ঘুরপাক খাওয়ার যুগ। বলে রাখা ভাল যে, ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানদের ধর্মীয় কিতাবেও বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রতি কোন অনীহা ছিল না’ কিন্তুুু সেকালে ঐ দুই ধর্মের সেবক হিসেবে যাঁরা নিজেদের পরিচয় দিতেন, তাঁরা বৈজ্ঞানিক গবেষণার পথে সৃষ্টি করে রেখেছিলেন নানা প্রতিবন্ধকতার। এরপর এল রেনেসাঁর যুগ। সেই রেনেসাঁর যুগে বিজ্ঞানীরা স্বভাবতই ধর্মীয় কর্মকর্তাদের উপরে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ পেয়ে গেলেন”। “ড. মরিস বুকাইলি, বাইবেল কুরআন ও বিজ্ঞান, রূপান্তর ঃ আখতার-উল-আলম (রংপুর পাবলিকেশন্স লিমিটেড, ঢাকা : তৃতীয় সংস্করণ-১৯৮৯), পৃ. ১৮২”।
সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, প্রখ্যাত সব বিজ্ঞানীদের মধ্যে অধিকাংশই আল্লাহ্র অস্তিত্বে বিশ্বাসী। দর্শন ও বিজ্ঞানে আল্লাহ্র ধারণা আলোচনার পর এখন বিভিন্ন ধর্মে আল্লাহ্র ধারণা বিষয়ে কি বক্তব্য রয়েছে তা দেখা প্রয়োজন।
প্রথমেই উল্লেখ করা হয়ে যে, মানুষ মাত্রই কমবেশী ধর্ম ভাবাপন্ন। এ দৃশ্যমান জগতের অন্তরালে যে এক পরম সত্তা আল্লাহ্র অস্তিত্ব রয়েছে, সেই আদিম যুগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সব মানব সমাজে তা কমবেশী জাগ্রত। যদিও বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন ধর্মে, আল্লাহ্কে এক এক নামে ডাকা হয়েছে। তবে বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধটিতে আল্লাহ্ বলতে লা-শরীক বা অংশীদার বিহীন এক, অদ্বিতীয়, শাশ্বত আল্লাহকে বোঝানো হবে। এবং এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন ধর্মে আল্লাহ্র যে ধারণা পেশ করা হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হবে যে, আদিতে সব ধর্মই ছিল মূলত তৌহিদবাদী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ