চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
জমি-জমার বিরোধ সর্বত্রই রয়েছে। জমি-জমার বিরোধকে কেন্দ্র করে সমাজে নানান ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। কোনো কোনো জায়গায় হতাহতের মতো ঘটনাও ঘটে। জমি-জমার বিরোধকে কেন্দ্র করে, মারামারি হানাহানির ঘটনায়, কোর্ট-কাচারিতে মামলা-মোকদ্দমার সংখ্যাও কম নয়। যারা অন্যায় ভাবে জমি-জমা জবর দখল করেছে, অন্যের উপর জুলুম করেছে, ধর্মীয় বিধি বিধানের সীমালংঘন করেছে, আল্লাহ তায়ালা তাদের ওপর কঠিন আযাব-গজব নাজিল করেছেন। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আমি তাদের ওপর আসমান থেকে আযাব নাযিল করলাম, তাদের সীমালংঘন করার কারণে।’ (সূরা বাকারা:৫৯)। ‘তারপর যারা জুলুম করেছে তাদের বলা হবে, স্থায়ী আযাব ভোগ কর। তোমরা যা অর্জন করতে তোমাদেরকে বেকল তারই প্রতিদান দেয়া হচ্ছে।’ (সূরা ইউনূছ:৫২)। ‘আর যারা জুলুম করেছে, তাদের ব্যাপারে তুমি আমার কাছে কোনো সুপারিশ করো না। নিশ্চয়ই তাদেরকে ডুবানো হবে’ অর্থাৎ ধ্বংস করা হবে। (সূরা হুদ: ৩৭)।
জমি কিংবা বসত ভিটার সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে বিরোধ, দুর্বল, ইয়াতিম, সংখ্যালুঘু সম্প্রদায় ও বিধবার সম্পত্তি জবর-দখল করা, সরকারী খাস জমি, পুকুর, খাল, নদ-নদী ও জলাশয় দখল করে দোকানপাট ও মার্কেট নির্মান করা, জোর পূর্বক উচ্ছেদ করা, ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা, অন্যের সীমানার ওপর বাড়ি ঘর নির্মান করাসহ সমাজে জুলুম নির্যাতন ও দখল বে-দখলের ঘটনা অহরহই ঘটছে। ভ‚মি দস্যুতার ভয়াবহ প্রভাব সমাজ, পরিবার ও পরিবেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। ভ‚মি দস্যুতার কবলে পড়ে, অনেকে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। জাল-দলিল তৈরী করে কিংবা ভ‚য়া আম-মোক্তার সেজে জমি ক্রয়-বিক্রয় করার মতো ঘটনা অহরহই ঘটছে। যারা এ ধরনের প্রতারণার সাথে সম্পৃক্ত থাকবে কিয়ামতের দিন তাদেরকে শাস্তি ভোগ করতে হবে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা) এরশাদ করেছেন, ‘জুলুম’ কিয়ামতের দিন অনেকে অন্ধকার রূপ ধারণ করবে। ( বোখারি:২২৮৫)।
হযরত সাঈদ বিন জায়েদ (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কারো এক বিঘত জমিন জোর পূর্বক অন্যায় ভাবে দখল করবে কিয়ামতের দিন সাত স্তবক (সাত স্তর বিশিষ্ট) জমি হতে ঐ জমিটুকু তার গলায় বেড়ি রূপে পড়িয়ে দেয়া হবে। (বোখারী ও মুসলিম:২২৯১)। হযরত সালিম তার পিতা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) হতে বর্ণনা করেন যে, হযরত রাসূল (সা) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি অন্যায় ভাবে কারো কিছু জমিন নিবে, কিয়ামতের দিন তাকে সাত স্তবক জমিন পর্যন্ত মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। (মিশকাত:২৮২৩)। হযরত ইয়ালা বিন মুররা (রা) হতে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি অন্যায় ভাবে কারো জমিন দখল করে, তাকে আল্লাহ পাক তা সপ্ত স্তর পর্যন্ত খনন করতে বাধ্য করবেন, তারপর তার গলায় তা বেড়ি রূপে পরায়ে রাখা হবে-সকল মানুষের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত। (মিশকাত:২৮৩১)।
জোর পূর্বক জমি-জমা দখল করার মতো গোনাহের কাজ থেকে সকলকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া জোর পূর্বক জমি-জমা দখলকারীকে সহযোগিতা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা) এরশাদ করেছেন, এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করবে না এবং তাকে জালিমের হাতে সোপর্দও করবে না। (বোখারি:২২৮০)। পরকালে জান্নাতের পথে বাধা হয়, এ জাতীয় কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য আল্লাহ তায়ালা সকলকে তৌফিক দান করুক। আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।