বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
উৎপাদন না বড়েলেও তিন বছরের ব্যবধানে দেশের চা বাগান মালিকদের আয় বেড়েছে এক-তৃতীয়াংশের বেশি। চা আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের ফলে দেশীয় চায়ের দাম প্রতি বছরই বাড়ছে। এ কারণে বাগান মালিকদের লাভের পরিমাণও বাড়ছে।
ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ নিলাম বর্ষে (২০১৮-১৯) ২ হাজার ৮৫ কোটি ৯৫ লাখ ২০ হাজার টাকার চা বিক্রি হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৪৫২ কোটি ৬০ লাখ ৫৭ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বাগানগুলোর চা বিক্রি থেকে আয় বেড়েছে ২৮ শতাংশ। আমদানি কমে যাওয়ায় প্রতি বছরের মতো সর্বশেষ নিলাম বর্ষেও চায়ের দাম ছিল চড়া। এ কারণে প্রায় সমপরিমাণ চা উৎপাদন করেও বাগানগুলো পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৪৫০ কোটি টাকার বেশি আয় করেছে। আমদানি প্রক্রিয়া শিথিল না হলে দেশের বাগানগুলোর চা বিক্রি আড়াই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ মৌসুমে চা বিক্রির গড় মূল্য (প্রতি কেজি) ছিল ১৮৭ দশমিক শূন্য ৮ টাকা। পরের মৌসুমে (২০১৬-১৭) গড় মূল্য ছিল ১৯১ দশমিক শূন্য ১ টাকা, ২০১৭-১৮ মৌসুমে যা বেড়ে হয় ২১৪ টাকা। তবে সর্বশেষ নিলাম মৌসুমে চায়ের কেজিপ্রতি গড় মূল্য আবার সব রেকর্ড ভেঙে ২৬২ দশমিক ৯২ টাকায় উঠে যায়। অর্থাৎ এক বছরে চায়ের গড় মূল্য বেড়েছে কেজিতে ৪৮ দশমিক ৯২ টাকা। চায়ের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে উৎপাদন না বাড়ায় প্রতি বছর ঘাটতি তৈরি হচ্ছে দেশে। এ কারণে দেশীয় চায়ের দামও বাড়ছে হু হু করে। তবে দাম বাড়লেও দেশীয় চায়ের গুণগত মান বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ব্র্যান্ডিং কোম্পানিগুলোর।
জানা গেছে, ২০১৫-১৬ মৌসুমে নিলামে চা বিক্রি হয় ৬ কোটি ২৭ লাখ কেজি। এর পরের মৌসুমে বিক্রি হয় ৭ কোটি ৭৩ লাখ কেজি। ২০১৭-১৮ মৌসুমে নিলামে চা বিক্রি হয় ৭ কোটি ৬৬ লাখ কেজি, আর সর্বশেষ মৌসুমে নিলামে বিক্রীত চায়ের পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ৯৪ লাখ কেজি। যদিও এ সময়ে দেশে চায়ের বার্ষিক চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি কেজির বেশি। ৪ শতাংশ হারে চায়ের চাহিদা বাড়লেও পণ্যটির উৎপাদন বাড়ছে ২ শতাংশ হারে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চা আমদানিতে ট্যারিফ মূল্য ধরা হয় ১ ডলার ৬০ সেন্ট ও সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ। আমদানি কমিয়ে দেশে উৎপাদিত চায়ের বাজার বিস্তারের লক্ষ্যে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পণ্যটির ট্যারিফ বাড়িয়ে ধরা হয় ২ ডলার ৫০ সেন্ট এবং সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়। এর পর থেকেই দেশের বাজারে চায়ের দাম বাড়তে থাকে। মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানতে আসন্ন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে চা আমদানিতে বিদ্যমান শুল্কহার না কমানোর আভাস থাকায় নিলামেও চায়ের দাম েেড়ছে। যার সুফল ভোগ করছেন দেশের ১৬৬টি বাগানের মালিকরা।
২০১৬ সালে দেশে ৮ কোটি ৫০ লাখ ৫০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়, যা দেশে চা উৎপাদনের সর্বোচ্চ রেকর্ড। সর্বশেষ ২০১৮ সালে চা উৎপাদন হয়েছে ৮ কোটি ৩০ লাখ কেজি। তবে চাহিদা ৯ কোটি কেজি ছাড়িয়ে যাওয়ায় উচ্চমূল্যে আমদানি ছাড়াও দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় ভারত থেকে চোরাই পথে চা সংগ্রহ বেড়ে গেছে। গত কয়েক বছরে আখাউড়া, যশোর, সাতক্ষীরা, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় ভারত থেকে চোরাই পথে আসা চা জব্দ করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় উৎপাদন না বাড়ায় চোরাই পথে আসা চায়ের কারণে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নিলামে বিক্রি হওয়া চায়ের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ সর্বমোট ১৬ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হয় ক্রেতাদের। এই হিসাবে সর্বশেষ নিলাম বর্ষে বিক্রি হওয়া চায়ে সরকার ৩৫০ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে। আমদানি শুল্ক কমিয়ে আনার পাশাপাশি স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানো গেলে দেশে চা বাজারের বিদ্যমান অস্থিরতা কমে আসবে বলে মনে করছেন তারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।