Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চায়ের বাজার বেজায় তেজী উৎপাদন ও দাম বেড়েছে : ১১শ’ কোটি টাকার চা বিক্রি

প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ২:১৫ পিএম, ১৭ নভেম্বর, ২০১৬

শফিউল আলম
পাটের পর দেশের সুপ্রাচীন ও অন্যতম কৃষিজ পণ্য চায়ের বাজার এখন বেজায় তেজী। সর্বশেষ গত ১৫ নভেম্বর (মঙ্গলবার) পর্যন্ত চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ২৮তম আন্তর্জাতিক চা নিলাম বাজারের দর অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, চলতি ২০১৬ সালে দেশে চায়ের উৎপাদন ও দাম দুই-ই বেড়েছে। বেচাকেনা হয়েছে প্রায় ১১শ’ কোটি টাকার পাতা ও গুঁড়ো চা। গতকাল (বুধবার) সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে আরো জানা গেছে, এ বছরে এ যাবত মোট ৪ কোটি ৬১ লাখ ৫৭ হাজার কোটি কেজি চা পাতা বিক্রি হয়েছে। যার মূল্য ১ হাজার কোটি ৭৮ লাখ টাকা। অন্যদিকে গত বছর (২০১৫ সাল) একই সময়ে ৭৬১ কোটি টাকার ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫৮ হাজার কেজি পরিমাণ চা বিক্রি হয়।
‘লট’ হিসেবে বাজারে গত বছরের তুলনায় প্রায় ৬৬ লাখ কেজি অতিরিক্ত চা বিক্রি হয়েছে। এতে করে বাড়তি আয় এসেছে প্রায় ২৪০ কোটি টাকা। চলতি বছরে এ পর্যন্ত চায়ের কেজিপ্রতি গড় মূল্য দাঁড়িয়েছে ২১৬ টাকা ৮২ পয়সা। গত বছর একই সময়ে গড় মূল্য ছিল ১৯২ টাকা ৩৮ পয়সা। অর্থাৎ কেজিপ্রতি চায়ের দাম বেড়েছে ২৪ টাকা ৪৪ পয়সা। চায়ের অভ্যন্তরীণ বাজার তেজী হওয়ায় বাগান মালিক, শিল্পোদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী-ব্রোকারস হাউস, পাইকারি ও খুচরা বাজারের সাথে সংশ্লিষ্টরা খুশি। তবে খুচরা দরে অতি মুনাফা লোটার কারণে সাধারণ ক্রেতারা অসন্তুষ্ট। কারণ বাজারে প্রতি কেজি ৩শ’ টাকার নিচে মোটামুটি ভালো মানের চা কিনতে পাওয়া যায় না। এদিকে দেশে চায়ের উৎপাদন ও মূল্য সমানতালে বাড়লেও রফতানি সর্বনি¤œ পর্যায়ে রয়েছে। এ যাবত রফতানির জন্য চট্টগ্রামস্থ আন্তর্জাতিক চা নিলাম বাজারে বিক্রি হয়েছে মাত্র দশমিক শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ। ৯৯ দশমিক ৯০ ভাগই অভ্যন্তরীণ ভোক্তাদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে ফুরিয়ে যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে উৎপাদিত চায়ের পুরনো ক্রেতা দেশ আফগানিস্তান, রাশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, পাকিস্তান, জাপান ইতোমধ্যে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক চলতি চা বাজার চাহিদা অনুযায়ী ‘রঙ, ঘ্রাণ ও স্বাদ’ আরো উন্নততর করে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আবাদ ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। তবে দেশে চায়ের ফলন বেড়ে গেছে। এ বছরে গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত দেশে চা উৎপাদিত হয়েছে ৫ কোটি ৮৩ লাখ কেজি। গত বছর একই সময়ে চা উৎপাদনের পরিমাণ ৪ কোটি ৪৪ লাখ কেজি। অর্থাৎ এবার এক কোটি ৩৯ লাখ কেজি চা অতিরিক্ত উৎপাদিত হয়েছে।
গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক নিলাম বাজারে মোট ৪০ হাজার ২৯৪ ব্যাগ (প্রতিটি ৫৫ কেজির) পাতা চা এবং ৬ হাজার ৩শ’ ব্যাগ গুঁড়ো চা বিক্রির জন্য দেশের বাগানগুলো থেকে আনা হয়। তবে এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ চা বেচাকেনা হলেও অবশিষ্ট চা প্রত্যাহার করা হয়। এ নিলামে চায়ের দর আগের তুলনায় ছিল কিছুটা নি¤œমুখী। বিক্রীত চায়ের মধ্যে প্রতি কেজিতে প্রকারভেদে ২ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত দর কমেছে। প্রতি কেজি বেস্ট ব্রোকেনস বিক্রি হয়েছে ১৯০ থেকে ২০২ টাকায়, গুড ব্রোকেনস ১৮০ থেকে ১৮৯ টাকায়, মিডিয়াম ১৬৫ থেকে ১৭৯ টাকায়, প্লেইন ১৩৪ থেকে ১৬৪ টাকায়। ফ্যানিংস বেস্ট বিক্রি হয় ১৯০ থেকে ২১০ টাকা, গুড ১৮১ থেকে ১৮৯ টাকা, মিডিয়াম ১৬৮ থেকে ১৮০ টাকা এবং প্লেইন ১৩৭ থেকে ১৬৭ টাকা দরে। বিভিন্ন চা বাগান থেকে বিশেষভাবে চয়নকৃত চায়ের দর ছিল বেশ চাঙ্গা। এর মধ্যে জিওবিপি ব্রোকেনস ক্লিপডন বিক্রি হয় কেজি ২৪৯ টাকা, ওয়েব ক্লিপডন ২৫৫ টাকা, মধুপুর ডাস্ট ক্লোন ২৫৫ টাকা এবং মধুপুর আরডি ক্লোন ২৩৫ টাকা দরে।
আন্তর্জাতিক ও দেশীয় চা বাজার বিশেষজ্ঞ কাজী মোহাম্মদ কেফায়েত উল্লাহ দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, দেশের চা বাগানগুলোতে আবাদ ও উৎপাদনের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি, সর্বাপেক্ষা উন্নত (লিকার, ঘ্রাণ ও স্বাদের ক্ষেত্রে) জাতের চা আবাদ করে যুগোপযোগী চাহিদা পূরণ এবং বহির্বিশ্বে ‘ব্র্যান্ড নেইম’ তুলে ধরে ব্যাপক সুনাম নিশ্চিত করা সম্ভব হলে ঐতিহ্যবাহী চা শিল্পে যুগান্তকারী সম্ভাবনা খুলে যাবে। এর ফলে কর্মসংস্থান বাড়বে, ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা আসবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চায়ের বাজার বেজায় তেজী উৎপাদন ও দাম বেড়েছে : ১১শ’ কোটি টাকার চা বিক্রি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ