Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মোস্তাফিজার যখন বুঝলেন তখন সময়-কথা বলা শেষ

মো. আবুল খায়ের, পীরগঞ্জ (রংপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স তাদের অনুসন্ধান শেষ করে এফ আর টাওয়ারের অগ্নিকান্ডের ব্যাপারে গণমাধ্যমকে প্রাথমিক তথ্য জানিয়েছিল। আর সেটি হচ্ছে টাওয়ারের অষ্টম তলা থেকেই আগুনের সূত্রপাত। সেই ফ্লোরেই চাকরি করতেন রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মোস্তাফিজার রহমান।
রাজধানীর বনানী এফ আর টাওয়ারের অষ্টম তলায় দু’টি প্রতিষ্ঠানের অফিস। একটি হচ্ছে স্পেক্ট্রা এসএন টেক্সটাইল। অপরটি এম্পায়ার এব্রোসিভ ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড। এম্পায়রে ম্যানেজার পদে চাকরি করতেন মোস্তাফিজার। ফায়ার সার্ভিস তাদের প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে বলেছে স্পেক্ট্রা এসএন টেক্সটাইলের অফিসে বৈদ্যুতিক কেটলি শর্ট সার্কিট হয়ে আগুন লাগে। সেই আগুনে যেসব জীবন নিভে গেছে তাদের পরিবারে নেমে এসেছে শুধুই অন্ধকার।
নিহতদের একজন মোস্তাফিজার অষ্টম তলায় কর্মরত ছিলেন। মার্চের ২৮ তারিখ দুপুরে অষ্টম তলায় পাশের অফিসে আগুন লাগলেও মোস্তাফিজার টের পাননি। যখন ফ্লোরের অভ্যন্তরে সবাই ‘বাঁচও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছিল তখন মোস্তাফিজার দ্রুত নিজের রুম থেকে বের হন। ঘটনার বিবরণ দিয়ে মোস্তাফিজারের ভগ্নিপতি প্রকৌশলী আবু বক্কর বলেন, মোবাইল ফোন পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সব শেষ হয়ে যায়। মোস্তাফিজার যখন বুঝতে পারেন যে নিচে নামা কিংবা উপরের দিকে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই তখনই মোবাইলে ফোন করেন। তার কথাগুলো ছিল, ‘পাশের অফিসে আগুন লেগেছে। আগুন আমাদের অফিসেও ছড়িয়ে পড়েছে। ভেতরে আগুন আর কালো ধোয়া।’ আবু বক্কর ফোনে দ্রুত বের হওয়ার জন্য বললেও মোস্তাফিজার হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। আর বলছিলেন, বাইরে বের হওয়ার কোনো পথ নেই। চার পাশে আগুন। মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি। আমার স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে সবাই দেখে রাখবেন। আমি বাঁচতে পারলাম না। যদি পারেন আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন।
এরপর মোবাইল ফোনে কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। মোস্তাফিজারের আর সাড়া পাওয়া যায়নি। ভগ্নিপতিকে ফোন করার আগে তিনি দুই বোন ফাহিমা ও রহিমাকেও ফোন করে বাঁচার আকুতি জানিয়েছিলেন। এফ আর টাওয়ারের অষ্টম তলায় লাগা আগুন সব শেষ করে দ্রুত উপরের দিকে উঠছিল।
আর ওই ফ্লোরের চারদিকে সব তিনি ওই টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের সময় সে অফিসেই ছিল। চারিদিকে আগুনের লেলিহান শিখায় আটকে পড়ে মোস্তাফিজার বাঁচার আকুতি জানিয়ে ভগ্নিপতি প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক ও দু’বোন ফাহিমা এবং রহিমাকে ফোনও করেছিল। এরপর তার আর কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
আগুন নেভানোর পর সিএমএইচএ থেকে মোস্তাফিজারের লাশ সনাক্ত করে গ্রামের বাড়ি পীরগঞ্জের কাঙ্গুরপাড়ায় এনে দাফন করা হয়। পরিবারের লোকজন জানান, তিনি কর্মস্থলে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতেন। প্রতিদিন স্ত্রীকে ফোন করে মেয়ের দিকে খেয়াল রাখতে বলতেন। অফিস থেকে বের হতে দেরি হবে কারণ ম্যানেজারের দায়িত্ব। এ নিয়ে স্ত্রী কখনো অভিযোগ বা অভিমান করেননি। উল্টো স্বামীর কর্তব্যপরায়নতায় গর্ববোধ করতেন।
স্বামীর এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না স্ত্রী জিনিয়া সুলতানা সনি। যতক্ষণ জেগে থাকেন শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। পাঁচ বছরের কন্যা মুজবিহা জাইন নিধিকে বুকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ফেলেন। এ বাবা কান্নার শেষ কোথায় কেউই জানে না। চিরদিনের মতো গভীর ঘুমে থাকা বাবাকে ডেকেও শিশু নিধি কোন সাড়া পায়নি। অন্যান্য দিনের মতো বাবা তাকে কোলে নিয়ে আদর করেনি। সে বুঝতে পারছে না তার কতবড় ক্ষতি হয়েছে। বাবার ঘুম কোনদিনও ভাঙ্গবে না সে কথাও জানে না নিধি। সংসারের উপার্জনক্ষম স্বামীর অকল্পনীয় মৃত্যুতে একমাত্র শিশু কন্যাকে নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তায় সারাক্ষণ কেঁদেই চলেছেন স্ত্রী। কে জানে, তার এ কান্নার শেষ কোথায়?



 

Show all comments
  • Azad MD Abul Kalam ১১ এপ্রিল, ২০১৯, ২:০৮ এএম says : 0
    আল্লাহ অনাকে বেহেশত দানকরুন। আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Pritom Shing ১১ এপ্রিল, ২০১৯, ২:০৮ এএম says : 0
    আত্তার শান্তি কামনা করছি
    Total Reply(0) Reply
  • Anowar Hossain ১১ এপ্রিল, ২০১৯, ২:০৮ এএম says : 0
    আল্লাহ আপনি তাকে শহিদ হিসাবে কবুল করে নিন। আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Md Abdus Salam ১১ এপ্রিল, ২০১৯, ২:০৯ এএম says : 0
    আল্লাহ এই ভাইকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন।আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Rajib Raj ১১ এপ্রিল, ২০১৯, ২:০৯ এএম says : 0
    Allah pak tomar abong tomar porebar k santi noseb koruk....
    Total Reply(0) Reply
  • Mijanur Sumon ১১ এপ্রিল, ২০১৯, ২:১১ এএম says : 0
    আল্লাহ আমাদের হেদায়েত দান করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Shafiqul Haque ১১ এপ্রিল, ২০১৯, ২:১২ এএম says : 0
    তোমরাই জাতীয় বীর। গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে দেশ মা তোমাকে। তোমার আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং জান্নাতের সর্বোচ্চ স্হানের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Saud Talukder ১১ এপ্রিল, ২০১৯, ২:১২ এএম says : 0
    কিন্তু মৃত্যুর এই চিরন্তন মহাবাস্তবতা থেকে তো আমরা রেহাই পাবো না। মহৎ কীর্তি তাকে পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রাখবে। মহান আল্লাহ তাকে তার কর্মের উত্তম প্রতিদান দান করুন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অগ্নিকান্ড


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ