Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আখাউড়া-সিলেট রেলপথ : অনুমোদন পাচ্ছে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ডুয়েলগেজ প্রকল্প

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:১৮ পিএম

আখাউড়া-সিলেট মিটারগেজ রেলপথটি ডুয়েলগেজে উন্নীত করা হবে। তবে সিঙ্গেল লাইন প্রকল্প হওয়ায় বিদ্যমান রেলপথের পাশে অস্থায়ী মিটারগেজ আরেকটি লাইন নির্মাণ করতে হবে। আর বিদ্যমান রেলপথ ডুয়েলগেজে রূপান্তরের পর তা তুলে ফেলা হবে।

অর্থ অপচয়ের এমনই এক প্রকল্প প্রস্তাব জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আজকের সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে এটি হবে রেলের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ডুয়েলগেজ রূপান্তর প্রকল্প। যদিও প্রকল্পটি নিয়ে কয়েক দফা আপত্তি তুলে পরিকল্পনা কমিশন। এরপরও প্রকল্পটি অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জানা গেছে, আখাউড়া-সিলেট মিটারগেজ রেলপথটি ডুয়েলগেজে রূপান্তরে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ১১০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এতে কিলোমিটারপ্রতি যে ব্যয় পড়ছে তা অন্যান্য প্রকল্পের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। যদিও একই ব্যয়ে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া রেলপথটি ডাবল লাইনে উন্নীত করতে পরবর্তীতে পৃথক প্রকল্পও নিতে হবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে।

প্রকল্পটির আওতায় ২৩৯ দশমিক ১৪ কিলোমিটার মিটারগেজ রেলপথ ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হবে। এর মধ্যে ১৭৬ দশমিক ২৪ কিলোমিটার মূল রেলপথ ও ৬২ দশমিক ৯০ কিলোমিটার লুপ লাইন রয়েছে। জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। দরপত্র ছাড়াই দরকষাকষির মাধ্যমে এ ঠিকাদার চূড়ান্ত করা হয়েছে।

আখাউড়া-সিলেট মিটারগেজ রেলপথটি ডুয়েলগেজে রূপান্তরের চুক্তি মূল্য ধরা হয়েছে ১৪৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশ তথা ১২৭ কোটি ২৯ লাখ ডলার বা প্রায় ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দেবে চীন। আর চুক্তি মূল্যের বাকি অর্থ ও অন্যান্য ব্যয় বাবদ পাঁচ হাজার ৪১০ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার সরবরাহ করবে।

সূত্রমতে, সারা দেশের সব রেলপথ পর্যায়ক্রমে মিটারগেজ থেকে ডুয়েলগেজে রূপান্তরের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এরই অংশ হিসেবে সিলেটের সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সংযোগ রেলপথ ডুয়েলগেজ করা হবে। এরই মধ্যে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ ডুয়েলগেজে রূপান্তর করার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ অংশটি ট্রান্স-এশিয়ান রেল রুটের অন্তর্ভুক্ত। তবে কুলাউড়া থেকে আখাউড়া ও সিলেট পর্যন্ত রেলপথ এখনও মিটারগেজ। তাই সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আখাউড়া-সিলেট রেলপথ ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পটির ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, রেলপথ নির্মাণে মূল ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ২৮৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর সঙ্গে দর সমন্বয় যুক্ত হবে ২৭ শতাংশ। আর অনিশ্চিত ব্যয় রয়েছে আরও দুই শতাংশ। রয়েছে অন্যান্য খাতের ব্যয়ও। সব মিলিয়ে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৯৬৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়বে ৫৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

যদিও রেলওয়ের চলমান ও প্রক্রিয়াধীন সমমানের প্রকল্পগুলো ব্যয় অনেক কম। প্রস্তাবিত ঈশ্বরদী-জামালপুর ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১ কোটি টাকা।

এদিকে চলমান কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ ডুয়েলগেজ রূপান্তরে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে ১০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ৫২ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার এ রেলপথ রূপান্তর প্রকল্পে ব্যয়ে হবে ৫৪৪ কোটি ৮৬ লাখ ৭৭ হাজার ৬৪০ টাকা। ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর এ-সংক্রান্ত চুক্তি সই করা হয়। এ হিসেবে আখাউড়া-সিলেট রেলপথ ডুয়েলগেজে রূপান্তরে ব্যয় সাড়ে পাঁচগুণ বেশি পড়ছে।

ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণের অন্যান্য প্রকল্পেও ব্যয় আখাউড়া-সিলেটের চেয়ে অনেক কম। এর মধ্যে রয়েছে পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত ৬৬ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার নতুন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ। এতে ব্যয় হচ্ছে এক হাজার ১২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এতে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে ১৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

আবার আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত বিদ্যমান ৯২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার রেলপথ ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন আরও ৯২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এ কাজের চুক্তি মূল্য তিন হাজার ৪৯৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এতে নতুন রেলপথ নির্মাণসহ কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে ১৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

নতুন রেলপথ নির্মাণের চেয়ে আখাউড়া-সিলেট ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্পটিতে ব্যয় বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, আখাউড়া-সিলেট রেলপথটি পাহাড়ি ও ঢালু। এতে মাটির কাজও বেশ জটিল। আবার বিদ্যমান রেলপথের পাশে অস্থায়ী লাইন করে ট্রেন চলাচল চালু রাখতে হবে। নতুন করে সব সেতু-কালভার্ট নির্মাণ করতে হবে। পরে নতুন রেলপথ নির্মাণ করতে হবে। এরপর অস্থায়ী অংশ তুলে ফেলতে হবে। এসব কারণে ব্যয় অনেক বেশি হবে।

যদিও এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, আখাউড়া-সিলেট রেলপথ নির্মাণে অর্থের প্রচুর অপচয় করা হবে। কারণ অস্থায়ী রেলপথ নির্মাণ করে পরে তুলে ফেলা কখনও যৌক্তিক নয়। বরং আখাউড়া-লাকসাম প্রকল্পের মতো প্রথমে নতুন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ করে পরে বিদ্যমান মিটারগেজ রেলপথটি ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা যেত। এতে পৃথক দুটি প্রকল্প দরকার হতো না।

তারা বলছেন, প্রকল্পটি বাতিলে কয়েক দফা প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা মানা হয়নি। বরং জোর করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আবার পরবর্তীতে ডাবল লাইন করতে পৃথক প্রকল্প নেওয়া হবে। এজন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮০ কোটি ডলার বা ১৫ হাজার ১২০ কোটি টাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেলওয়ে


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ