পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্বপ ছিল এ বছর পিতাকে পবিত্র হজ্বব্রত পালনের জন্য পাঠাবেন। অল্প অল্প করে গুছিয়ে নিচ্ছিলেন সব কিছু। নতুন বাড়ি করতে ইটও কিনেছিলেন। আসছে শবে বরাতের ছুটিতে তোড়জোড় চলছিল বিয়ের। ছবির মতই সাজানো ছিল পরিবারটি। তবে হঠাৎ ঝড়ে এলোমেলো হয়ে যায় পরিবারটির স্বপ্ন। ঢাকার বনানীতে এফ আর টাওয়ারের ভয়াবহ আগুনে নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে গেছে রাব্বী ও তার পরিবারের স্বপ্ন। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে দিশেহারা বাবা-মা।
বারবার চোখের পানি মুছতে মুছতে আকাশের দিকে তাকিয়ে বাবা আইয়ুব আলী বললেন, মৃত্যু অবধারিত। কিছু মৃত্যু পাথরের মতো ভারি আর কিছু মৃত্যু পাখির পালকের মতো হালকা। পিতার কাছে পুত্রের লাশ পাথরের মতোই ভারি। কথাগুলো বলতেই নিথর পাথরের মতো চুপ হয়ে গেলেন তিনি।
সাঁথিয়া উপজেলার আর আতাইকুলা ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের কৃষিজীবী আইয়ুব আলীর একমাত্র ছেলে আমির হোসেন রাব্বি ছিলেন তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড়। শহীদ বুলবুল কলেজ থেকে এইচএস সি ও এডওয়ার্ড কলেজ থেকে অর্থনীতিতে এম এ পাশ করে চাকরিতে যোগদেন ঢাকা বনানীর এফ আর টাওয়ারের ১১ তলার ইকোলাইন বিডি লিমিটেড নামের একটি কোম্পানিতে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে পাবনাতে এসে বাবা-মায়ের সাথে সময় কাটিয়ে গেছেন রাব্বি। বাড়ির কাজে হাত দিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন বলে বেশ কিছু ইটও কিনে বাড়ির পাশে রেখে বাবা-মায়ের দোয়া নিয়ে চলে যান ঢাকায়। ছেলের জন্য এরই মধ্যে কনে দেখাও শুরু করেছিলেন বাবা আইয়ুব আলী মা রহিমা খাতুন ও আত্মীয়-স্বজন। কথা ছিল আসছে শবে বরাতের ছুটিতে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করে ফেলবেন। কিন্তু ২৮ মার্চে বনানীর এফ আর টাওয়ারের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে অকালে তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। তিনি বাড়িতে আসলেন কিন্তু লাশ হয়ে।
ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ও বিনয়ী হিসেবে গ্রামের মানুষের কাছে অনেক আদরের ছিলেন রাব্বি। এমন অনাকাঙ্খিত মৃত্যু যেন নাড়া দিয়েছে তার পুরো গ্রামের মানুষকে। একমাত্র সন্তানের এমন মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ রাব্বির বাবা আইয়ুব আলী ও মা রহিমা খাতুন।
স্তব্ধতা ভেঙে রাব্বির বাবা আইয়ুব আলী জানান, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে পাবনায় গ্রামের বাড়িতে এসেছিলো রাব্বী। বিয়ে করবে বলে ঘর করতে কিছু ইটসহ সরঞ্জাম কিনে বাড়িতে রেখেছে। এ সপ্তাহে বাড়িতে আসার কথা ছিল তার। কিন্তু আমার ছেলেকে কবরের গহীন অন্ধকারে রেখে আসব ভাবতে পারিনি।
নিহত রাব্বির ছোট বোন ফারজানা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার পিতাকে ভাইয়া হজ্বে পাঠাতে চেয়েছিলেন। আমার ভাইয়ের সেই স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন করা হলো না। শবে বরাতের ছুটিতে এসে বাড়ির কাজ শেষ হলে আমরা তাকে বিয়ে দেওয়ার কথা চিন্তা করছিলাম। সেই স্বপ্নও বনানীর আগুন কেড়ে নিলো।
রাব্বির চাচা আব্দুর রশিদ বলেন, ঢাকায় একের পর এক আগুনে আর কত প্রাণ গেলে হুশ ফিরবে কর্তৃপক্ষের এমন প্রশ্নের উত্তর জানা নেই তার কাছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।