পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর বনানী এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে অন্যের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন বিলিয়ে দিলেন ফায়ার ফাইটার সোহেল রানা। গত রোববার রাত সোয়া ২টার (বাংলাদেশী সময়) দিকে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। দীর্ঘ ১২ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে জীবনের কাছে হার মানলেন সাহসী এই যোদ্ধা। আজ (গতকাল) রাতেই তার লাশ সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় আনার কথা রয়েছে।
সোহেলের মৃত্যুতে পরিবার ছাড়াও পুরো ফায়ার সার্ভিস বিভাগে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে এক ফায়ার ফাইটারের মৃত্যুতে মানুষের মুখে মুখে ফায়ার সার্ভিসের প্রতি প্রশংসা ও ভালোবাসা বইছে। এদিকে, সোহেল রানার মৃত্যুতে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান শোক প্রকাশ করেছেন। এর আগে গত ২৮ মার্চ এফ আর টাওয়ারে লাগা আগুন নিভাতে গিয়ে গুরুতর আহত হন সোহেল রানা।
ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, আজ রাতেই (গতকাল) সিঙ্গাপুর থেকে সোহেলের লাশ ঢাকায় আনা হবে। সিঙ্গাপুরে কিছু ফরেনসিক ফরমালিটিজ রয়েছে, সেগুলো সম্পন্ন হয়েছে। ইসলামিয়া বাস্কেট কোম্পানির কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকা সিএমএইচ মরচুয়ারিতে নেয়া হবে লাশ। সোহেল রানার পরিবারকে খবর দেয়া হয়েছে। তারা ঢাকার এসেছেন। আজ মঙ্গলবার ঢাকায় জানাজার ব্যবস্থা করা হবে। এরপর ফায়ার ফাইটার সোহেল রানার লাশ গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার চৌগাংগা গ্রামে। পাঠানো হবে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে মুন্সিগঞ্জের কমলাঘাট নদী ফায়ার স্টেশনে দায়িত্বপালনের মাধ্যমে কর্মজীবনের শুরু সোহেল রানার। এর কয়েক মাস পরেই বদলি হন কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনে। তার সঙ্গে একসঙ্গে থাকতেন কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনের ফায়ারম্যান রনি বিশ্বাস। তিনি বলেন, আমরা ফায়ারম্যানরা এক সঙ্গে ব্যারাকে থাকতাম। আমি সোহেল রানার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলাম। আমাদের অনেক কথা হতো। একই রুমে ঘুমাইতাম। একসঙ্গে সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বঙ্গভবনসহ অনেক ভিআইপি ডিউটি করেছি। সে খুবই নম্র ছিল। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত। রোজা রাখত। কাজ নিয়ে পেশাদার ছিল। কোনো কিছু না ভেবেই ঝাঁপিয়ে পড়ত। সোহেলের মৃত্যুতে শোক নেমে আসে পুরো ফায়ার সার্ভিসেই।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) খন্দকার আবদুল জলিল বলেন, ওই দিন আমি ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই সোহেল সেখানে আহত হয়। আমি অন্যের জন্য জীবন বিলিয়ে দেয়া সোহেলের পুরো ঘটনাটি শুনে মর্মাহত হই। আজ আরো বেশি খারাপ লাগছে তার জন্য। ফায়ার সার্ভিসে তার মতোই সাহসী বীর দরকার।
ফায়ারম্যান সোহেল রানার বাড়িতে শোকের মাতম
কিশোরগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফায়ারম্যান সোহেল রানার মৃত্যুর খবরে তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার চৌগাঙ্গা ইউনিয়নের কেরুয়াইল গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। গরিব পরিবারটির ভরসা একমাত্র উপার্জনক্ষম লোকটি চলে যাওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাদের ভবিষ্যৎ ও স্বপ্ন। কোনো সান্ত¦নায় শান্ত হতে পারছেন না স্বজন হারানোর কষ্টে দিশেহারা পরিবারটি।
তিন ভাইয়ের পড়াশোনা আর পুরো পরিবারের খরচ সবই ছিল সোহেল রানার কাঁধে। তাছাড়া জরাজীর্ণ বাড়িটি ভেঙে নতুন করে বাড়ি করার কথা চলছিল। তাকে বিয়ে দেওয়ারও কথা হচ্ছিল। কিন্তু সোহেলের এক কথা, ভাইদের প্রতিষ্ঠিত না করে বিয়ে করবেন তিনি। এসব কথাই বুক চাপড়ে বিলাপ করে বলছিলেন মা হালিমা খাতুন। প্রিয় সন্তানকে ফিরিয়ে দিতে আবদার করছেন লোকজনের কাছে।
চার ভাইয়ের মধ্যে সোহেল ছিলেন সবার বড়। ছোটভাই রুবেল ও উজ্জ্বল স্নাতকের ছাত্র। সবার ছোটভাই দিলুয়ার আগামী বছর এসএসসি দেবে। তাদের সবার আশা ও ভরসার জায়গা ছিল তাদের প্রিয় বড় ভাই সোহেল। ছুটি কাটিয়ে গত ২৩ মার্চ কর্মস্থলে ফিরে যান সোহেল রানা। যাওয়ার আগে তিন ভাইকে ভালোভাবে পড়াশোনার করা কথা বলে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন টাকা-পয়সা নিয়ে চিন্তা না করতে। তিনি বেঁচে থাকলে সবই হবে। পয়লা বৈশাখ বাড়িতে ফিরে সবাইকে নিয়ে বৈশাখি উৎসব করবেন। কিন্তু ভাইকে হারিয়ে যেন নির্বাক হয়ে পড়েছেন সবাই।
বাবা নূরুল ইসলাম অসুস্থ ও মায়ের শরীরেও বাসা বেঁধেছে নানা অসুখ-বিসুখ। বাবাকে হজ করিয়ে আনার কথা বলেছিলেন সোহেল। দুর্ঘটনার পর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠানোয় বাবা-মা দুজনই আশা করছিলেন তাদের সন্তান সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে।
২০১৫ সালে ফায়ারম্যান হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন সোহেল রানা। সর্বশেষ কাজ করতেন কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনে। স্বজনরা বলছেন, দেশের জন্য প্রাণ দিলেও তাদের পুরো পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে গেছে।
সোহেলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো এলাকার লোকজন পরিবারটিকে সান্ত¦না দিতে তাদের বাড়িতে সকাল থেকে ভিড় জমায়। স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে পাড়া-প্রতিবেশিদের কাঁদতে দেখা যায়।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ মার্চ রাজধানীল বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডে উদ্ধার কাজ চালাতে গিয়ে গুরুতরভাবে আহত হন সোহেল। গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়। সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া দুইটার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সোহেলের লাশ বাংলাদেশে পৌঁছবে। সেখান থেকে রাতেই লাশ বাড়িতে পাঠানো কথা রয়েছে। আজ গ্রামের বাড়িতে তার লাশ দাফনের কথা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।