পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীসহ সারাদেশে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় গত ১৯ বছরে শত শত মানুষের প্রাণহানি ও হাজার হাজার মানুষ আহত হয়ে নিঃস্ব জীবন যাপন করলেও দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি। কদাচিত দু’একটি অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মামলা হলেও সাজার নজির একেবারে নেই বললেই চলে। আর এসব অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিরা অবলিলায় পার পেয়ে যাচ্ছে। তবে চলতি বছরে রাজধানীতে সংঘটিত ভয়াবহ দু’টি অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনা ঘটলেও এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বহাল তবিয়তে। তাদের বিরুদ্ধে কোন বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি, এমনকি মামলায় আসামিও করা হয়নি। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
ফায়ার সার্ভিসের সূত্র মতে, ২০০১ সাল থেকে ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত ১৫টি বড় ধরণের অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৫৮৬ জন নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। এ সময় বেশ কয়েক হাজার লোক আহত ও হাজার কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও বিভিন্ন সংস্থার হিসাব মতে, গত দুই দশকে বাংলাদেশে শিল্প কারখানায়ই ২৬টির বেশি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দুই হাজারের মতো শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ। হতাহতের দিক থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ ১৫টি অগ্নিকান্ডের মধ্যে মাত্র দুটি অগ্নিকান্ডের পর মামলা হয়েছে।
এসব দুর্ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অগ্নিকান্ডে জান-মালের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও দোষীদের চিহ্নিত করা গেলেও তারা সব সময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রে ভবন মালিক বা প্রতিষ্ঠানের মালিকের অব্যবস্থাপনা অনেকাংশে দায়ি। এ ক্ষেত্রে ভবনের মালিকের পাশাপাশি বহুতল ভবনে যারা অফিস করেন তাদেরও অগ্নিকান্ড প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা তাদের দায় এড়াতে পারেন না। তবে মানুষ নিজে সচেতন না হলে কাউকে আইন মানতে বাধ্য করা কঠিন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেন, বিভিন্ন অগ্নিকান্ডের তদন্ত প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, মালিকপক্ষের অবহেলায় বিভিন্ন অগ্নিকান্ডে শ্রমিকের প্রাণহানি অনেক বেড়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শ্রমিক হত্যার বিচার হয় না। বিচার না হলে মালিকপক্ষের কাছে নজির সৃষ্টি হবে না। ফলে তারা শ্রমিকের প্রতি যে কোনো অবহেলা করতে দ্বিধা করবে না। এ বিষয়ে জড়িত সকলেই বিচারের আওতায় আনা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মিকো সোয়েটারে গুজবে পদদলিত
২০০১ সালের ৮ আগস্ট ঢাকার মিরপুরের মিকো সোয়েটার লিমিটেডে আগুন লাগার গুজবে ভিড়ে পায়ের নিচে চাপা পড়ে নিহত হন ২৪ শ্রমিক। এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।
শিবপুর ট্র্যাজেডি
নরসিংদীর শিবপুরে গার্মেন্ট কারখানায় ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে অগ্নিকান্ডে ৪৮ শ্রমিক নিহত হন। এ ঘটনায় কোনো মামলা করা হয়নি।
নারায়ণগঞ্জ ট্র্যাজেডি
নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি সান নিটিং নামে একটি গার্মেন্ট কারখানায় আগুনে ২০ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি বা কোনো বিচার হয়নি।
চট্টগ্রামে গার্মেন্টে অগ্নিকান্ড
২০০৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের কেটিএস অ্যাপারেলস মিলে অগ্নিকান্ডে ৬৫ শ্রমিক পুড়ে মারা যান। এ ঘটনায় কোনো মামলা বা সাজা হয়নি।
গাজীপুরে অগ্নিকান্ড
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে গাজীপুর সদরের গরিব অ্যান্ড গরিব সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকান্ডে মারা যান ২১ শ্রমিক। এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।
হা-মীমে অগ্নিকান্ড
২০১০ সালের ১৪ ডিসেম্বর আশুলিয়ায় হা-মীম গ্রুপের গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকান্ডে ৩০ শ্রমিক মারা যান। এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।
টঙ্গী ট্র্যাজেডি
২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর টঙ্গীর ট্যাম্পাকো ফয়েলস নামে একটি প্যাকেজিং কারখানার বয়লার বিস্ফোরণের পর সৃষ্ট অগ্নিকান্ডে ৪০ বছরের পুরোনো ভবনটি ধসে পড়ে। এতে নিহত হন ৩৫ জন। এ ঘটনাও কোনো মামলা হয়নি।
নিমতলী ট্র্যাজেডি
২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীর নবাব কাটরায় রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের গুদামে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত হন নারী ও শিশুসহ ১২৪ জন। নিমতলীর ৪৩ নম্বর বাড়িতে রাত ৯টায় ভয়াবহ এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় ছয়তলা বাড়ির নিচতলায় দুই বোন রুনা আর রত্মা এবং পাশের বাড়িতে আসমা নামে এক মেয়ের বিয়ের আয়োজন চলছিল। কনেরা পার্লারে সাজছিল। আর বাড়ির নিচতলায় রান্না চলছিল। রান্নার জায়গার পাশেই ছিল কেমিক্যালের গুদাম। প্রচন্ড তাপে গুদামে থাকা কেমিক্যালের প্লাস্টিক ড্রাম গলে যায়। এরপর মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে দরজা-জানালা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। এ ঘটনায় কোন মামলা বা দায়ীদের কোন শাস্তি হয়নি।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনস কারখানায় ভয়াবহ আগুনে অন্তত ১১২ জন নিহত ও দুই শতাধিক শ্রমিক আহত হন। ওই দুর্ঘটনার পর মামলা হয়েছে, কিন্তু বিচার শেষ হয়নি আজও। তাজরীন ফ্যাশনসের অগ্নিকান্ডের পরদিন আশুলিয়া থানার এসআই খায়রুল ইসলাম অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০১২ সালের ২২ ডিসেম্বর সিআইডির পরিদর্শক একেএম মহসিনুজ্জামান খান যে অভিযোগপত্র দাখিল করেন, সেখানে প্রতিষ্ঠানের এমডি দেলোয়ার হোসেন ও চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তারসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৮ জুন রাজধানীর মোহাম্মদপুরে স্মার্ট এক্সপোর্ট গার্মেন্টস লিমিটেডে আগুনে পুড়ে ৭ নারী পোশাক শ্রমিক নিহত হন।
চকবাজারের চুড়িহাট্টা
চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়। রাত পৌনে ১১টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এতে একাধিক বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে। জানা যায়, সেখানে কেমিক্যালের গোডাউন থাকায় আগুন বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এ অগ্নিকান্ডে ৭২ জন নিহত হন। শতাধিক আহত হন। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়। ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকের দুই ছেলেকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
বনানী এফআর টাওয়ার
গত ২৮ মার্চ রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটের দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন প্রায় ৭০ জন। ফায়ার সার্ভিস, সেনা, নৌ, বিমান এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ৭ ঘণ্টা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করার পর রিমান্ড শেষে ভবনের বর্ধিত অংশের মালিক তাসভির উল ইসলাম ও ভবনের জমির মালিক প্রকৌশলী এস এম এইচ আই ফারুকে গতকাল কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে অগ্নিকান্ডে চলতি বছরে ২জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ২০১৮ সালের ১৯ নভেম্বর একই বস্তিতে লাগা আগুনে প্রাণ হারান ১১ জন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।