পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীসহ সারাদেশে সড়ক ও নদীর দখল হওয়া জমি উদ্ধারে দৃশ্যমান অভিযান শুরু হলেও রেলের জমি উদ্ধারে তেমন তৎপড়তা দেখা যাচ্ছে না। বর্তমান সরকার নতুন করে ক্ষমতায় আসার পর রেল, নদী ও সড়কের অবৈধ দখলকৃত জমি উদ্ধারে ১০০ দিনের বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেয়। এই কর্মসূচির শুরুর পর এক মাসে (ফেব্রæয়ারি-মার্চ) সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ১৮শ’ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে। এতে বেদখল হওয়া ২০০ কোটি টাকা মূল্যের জমি উদ্ধার হয়। কিন্তু এ সময়ে রেলের জমি উদ্ধারে কয়েকটি অভিযান চললেও উল্লেখ করার মতো কোন উচ্ছেদ হয়নি। রেল মন্ত্রী নিজেও দখলকৃত জমি উদ্ধারে অভিযান শুরু না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে শীঘ্রই অভিযান শুরু হবে বলে তিনি জানান।
নগর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নদী দখলের মতো কয়েক যুগ ধরে অবৈধভাবে রেলের জমি বেদখল হলেও এ বিষয়ে মাথা ব্যাথা নেই রেল সংশ্লিষ্টদের। তাদের দীর্ঘদিনের নিষ্ক্রিয়তায় ইতোমধ্যে অনেক জায়গা পুরোপুরি বেদখল হয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালীরা কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এ দখল চালিয়ে যাচ্ছে। এসব দখলদাররা অবৈধভাবে দখলকৃত জায়গায় কাঁচা-পাকা স্থাপনা এবং অবৈধ দোকান ও বস্তি বসিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। বিভিন্ন সময়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হলেও কার্যত কোন সফলতা আসেনি। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় প্রভাবাশালী ও পুলিশের অসাধু সিন্ডিকেট মাসোয়ারা নিয়ে স্থায়ীভাবে এ দখল টিকিয়ে রেখেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে লাঘাতর লোকসানের মধ্যে পরে থাকলেও রেলের পক্ষে লাভের মুখ দেখা সম্ভব হচ্ছে না।
নগর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু দখল করেই ক্ষ্যান্ত নয়, দখলের সাথে সাথে রেল লাইনের দু’ধারে বড় বড় মাদকের আখড়া গড়ে তুলেছে সিন্ডিকেটেরা। এতে একদিকে রেল লাইনে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি যেমন বেড়েছে তেমনি জমি থেকে প্রাপ্ত বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এছাড়া এসব আখড়া থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে মাদক ছড়িয়ে পড়ায় যুব সমাজ ক্রমশঃ ধ্বংশের দিকে যাচ্ছে। নাগরিক ও নগরদিদের দাবি, দেশে চলমান নদীখেকো ও নদী তীর দখলকারীদের উচ্ছেদে সরকার অনেক সফলতা পেয়েছে। এতে নদী তীরবর্তী অবৈধ দখলকৃত অনেক জায়গা উদ্ধারসহ অনেক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। রেলের জায়গা দখলকারীদের বিরুদ্ধে ঠিক এ রকম একটি শক্তিশালী ও জোড়ালো অভিযান শুরু করলে খুব শীঘ্রই রেলের দখলকৃত জমি উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, রেল সেক্টরটি বর্তমানে অগোছালো অবস্থায় রয়েছে। প্রথমত এই সেক্টরটিকে গোছানোর কাজ চলছে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য কাজ শুরু করা হবে। মন্ত্রী বলেন, রেলকে গুছিয়ে একটি সুন্দর অবস্থায় ফেরানোর আগে জমি উদ্ধারে গেলে কোন সুফল আসবে না। কেননা দখলের সাথে শক্তিশালী সিন্ডিকেট জড়িত। প্রশাসন একদিক দিকে জমি উদ্ধার করলে প্রভাবশালীরা একদিন পরেই আবারও দখল শুরু করে। যার কারণে কার্যত কোন সুফল আসে না। তিনি আরও বলেন, রেলের বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে ইতোমধ্যে একটি বৈঠক করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। এছাড়া উদ্ধারের কাজ অনেক ব্যয়বহুল। যার কারণে সব কিছু গুছিয়ে খুব শীঘ্রই দখলকৃত জমি উদ্ধারে অভিযান শুরু করা হবে বলে তিনি জানান।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা বলেন, রেললাইনের দুপাশে ১০ ফুট জায়গা খালি রাখার নিয়ম রয়েছে। সরকারী নির্দেশনা ছাড়াও যে কোন দুর্ঘটনা এড়ানো ও বাড়তি সতর্কতার জন্য এমন বিধান। অথচ রাজধানীর মতো দেশের জেলা শহরগুলোর কোথাও এমন খালি রাখার চিত্র তেমন চোখে পড়ে না।
সরেজমিনকালে দেখা গেছে, ঢাকার নারায়ণগঞ্জ, গেÐারিয়া, শ্যামপুর, জুরাইন, শাহজাহানপুর, মালিবাগ, মগবাজার, কারওয়ানবাজার, তেজগাঁও, নাখালপাড়াসহ উত্তরা ও টঙ্গীর বিভিন্ন অংশে রেললাইনের দু’ধারে বস্তি, দোকান, বাজার, ছাপড়া ঘর, রাজনৈতিক দল ও অঙ্গ সংগঠনের নামে-বেনামে পাকা ও আধা-পাকা স্থাপনা রয়েছে। এর বাইরে অনেক এলাকায় সরকারী-আধা সরকারী প্রতিষ্ঠান ও বাস-ট্রাকের স্ট্যান্ড বানিয়ে দখল করা হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের সূত্র বলছে, সারা দেশে রেলওয়ের মালিকানাধীন জমি রয়েছে প্রায় ৬১ হাজার ৬০৫ দশমিক ৮৪ একর। এর মধ্যে রেলওয়ে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করছে ৩১ হাজার ৩১১ দশমিক ৫০ একর জমি। এ ছাড়া ৭৯৫ দশমিক ১৯ একর মৎস্য, ৩০ দশমিক ৫৫ একর নার্সারি, ১২ দশমিক ৪৭ একর সিএনজি, ৪৫ দশমিক ৬৭ একর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ২১০ দশমিক ৬৯ একর সরকারি-আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কাছে লাইসেন্সের মাধ্যমে ইজারা দেওয়া আছে। বাণিজ্যিক লাইসেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেওয়া হয়েছে ৯০৯ দশমিক ৮৪ একর জমি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত রেলওয়ের প্রায় ৪ হাজার ৪৬৫ দশমিক ৬২ একর জমি বেহাত হয়ে গেছে। এর মধ্যে শুধু পশ্চিমাঞ্চলেই দখল হয়েছে ৩ হাজার ৩৮৭ দশমিক ২৭ একর। আর পূর্বাঞ্চলে ১ হাজার ৭৮ দশমিক ১৫ একর। প্রকৃত চিত্র এর চেয়ে আরও ভয়াবহ বলে দাবি করেছেন রেলের ভূমি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত নানা সূত্র ও নগরবিদরা। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে খাতা-কলমে (শক্ত ডকুমেন্ট ছাড়া) লিজ বা ইজারা দেওয়া আছে ১২ হাজার ৭২১ দশমিক ৪ একর জমি। আর বর্তমানে রেলের দখলে অব্যবহৃত জমি রয়েছে মাত্র ১৩ হাজার ১০৭ একর। এর মধ্যে কৃষি জমি ১০ হাজার ৭১৬ দশমিক ৮১ একর।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার রেললাইনের দুই পাশের প্রায় দু’শো একর জমি দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এ পথে ছোট-বড় বাজার ও দোকানের সংখ্যা প্রায় হাজারখানিক। কোথাও জাল দলিল ও কাগজপত্র তৈরি করে আবাসন কোম্পানির ভবনও তোলা হয়েছে। এছাড়া বিমানবন্দর ও তেজগাঁও রেলস্টেশন এলাকায় ১৯ একর এবং নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের বাইরে ২৯ একর জমি দখল হয়ে গেছে।
ঢাকা ছাড়া চট্টগ্রামে রেলের ২১৫ থেকে ২৩০ একর জায়গা দখল হয়ে আছে। এর মধ্যে অবশ্য ১৫০ একরই বিভিন্ন সরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের দখলে। আর বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দখলে আছে ৭৩ একর জমি। পাকশীতে দখল করা জমির মধ্যে ২ হাজার ৫৮ একরই বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের দখলে। লালমনিরহাটে রেলের ৮৪১ একর জমি বিভিন্ন ব্যক্তির দখলে আছে।
একইভাবে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেললাইনের দুই পাশের অনেক জায়গা দখল হয়ে গেছে। সিলেটের শায়েস্তাগঞ্জ, জামালপুরসহ বিভিন্ন স্থানেও একই অবস্থা। কোথাও মার্কেট আবার কোথাও বাড়ি-ঘর ও বস্তি বানিয়ে এসব জায়গা দখল করা হয়েছে। এদিকে লাখো কোটি টাকার এসব জমি উদ্ধারে রেল যেমন ব্যর্থ হচ্ছে তেমিন বছরে হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
রেলের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ১৯৭৬ সালে রেলওয়েতে পৃথকভাবে পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার কার্যালয় করা হলেও জনবল অনেক কম। যার কারণে রেলের সম্পদের ওপরে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া প্রতিনিয়ত দলীয় ক্ষমতাশালী ও প্রভাবশালীরা নানা অজুহাতে রেলের জায়গা লিজ নিয়ে দখলের চেষ্টা চালু রেখেছে। এছাড়া ১৯৬০ সালে ফুলবাড়িয়া থেকে রেলস্টেশন কমলাপুরে স্থানান্তরিত হওয়ার পরে সেখানকার বিপুল পরিমাণ জমি সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখল করে নেয়।
ঢাকা বিভাগের রেলওয়ের ভূসম্পদ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, টঙ্গী থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত অনেক জায়গা দখল হয়ে আছে। অনেক সময় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু পরে আবারও দখল হয়ে যায়। তিনি বলেন, আগে সরকারি জায়গা দখল করার এত প্রবণতা ছিল না। কিন্তু এখন সেই প্রবণতা বেড়েই চলছে। এদিকে রেল লাইনের পাশে থাকা বস্তিুগলো নিয়ে আদালতের একটি নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেগুলো নিয়ে কিছু করা যাচ্ছে না বলে জানা গেছে।
রেল সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ১১ মার্চ চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর সেগুনবাগান এলাকায় রেলওয়ের জমি দখল করে গড়ে তোলা ২২টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে করে প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী হাসানের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে সেগুনবাগানের এফ-৪ বাংলো সংলগ্ন রেলওয়ের মালিকানাধীন জমিতে তৈরি সেমিপাকা ও টিন শেড ২২টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এ সময় দখলকৃত শূন্য দশমিক পনের একর সরকারি জমি উদ্ধার করা হয়।
রাজধানীর বিশিষ্ট নাগরিক ও নগরবিদরা মনে করেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রেল, সড়ক ও নদীর অবৈধ দখলকৃত জমি উদ্ধারে ১০০ দিনের বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেয়। এই কর্মসূচির শুরুর পর গত এক মাসে (ফেব্রæয়ারি-মার্চ) সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ১৮শ’ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে। এতে বেদখল হওয়া ২০০ কোটি টাকা মূল্যের জমিও উদ্ধার করতে সক্ষম হয় সরকারী সংস্থাটি। নগরবিদরা মনে করেন, দেশে চলমান নদীখেকোদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানের ন্যায় রেলের জায়গা অবৈধভাবে দখলদারদের বিরুদ্ধে জোড়ালো অভিযান চালানো উচিত। তবে উচ্ছেদের সাথে দখলদারদের স্থায়ীভাবে প্রতিহত করা সম্ভব হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।