পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চলতি অর্থবছরে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী পাঁচ দেশের একটি হবে বাংলাদেশ। এমন পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলেছে, এ বছর প্রবৃদ্ধি হতে পারে সাত দশমিক তিন শতাংশ। বাংলাদেশের চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হবে এমন বাকি চার দেশের মধ্যে আছে ইথিওপিয়া, রুয়ান্ডা, ভুটান ও ভারত।
গতকার বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রকাশ করেছে। এ উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। বক্তব্য রাখেন কান্ট্রি ডিরেক্টর রবার্ট জে সউম।
প্রবৃদ্ধি টেকসই রাখতে সংস্কারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার তাগিদ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি মনে করে, ব্যাংক খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম দুর্বল খাত। বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ, আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। রাজস্ব আদায়ে জোর দিতে হবে।
জাহিদ হোসেন ব্যাংক খাতে শঙ্কার কথা উল্লেখ করে বলেন, খেলাপি ঋণ বাড়লে ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়ে। এতে ঘূর্ণিঝড় নয়, মেঘ ঘনীভ‚ত হবে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) গত বুধবার পূর্বাভাস দিয়েছিল, চলতি অর্থবছরে (২০১৮-১৯) মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি আট শতাংশ হবে। এডিবি বলছে, ব্যাপক ভোগ চাহিদা ও সরকারি বিনিয়োগের কারণে এই প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে। এ ছাড়া রফতানি ‘পারফরম্যান্স’ প্রবৃদ্ধিতে বাড়তি অবদান রাখছে।এর পাশাপাশি শিল্প খাতের সম্প্রসারণ প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০১৯ প্রকাশ করে এডিবি। সেখানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়।
তবে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে সাত দশমিক তিন শতাংশ প্রবৃদ্ধিও ‘অনেক’ মন্তব্য করে বিশ্ব ব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট জে সম বলেছেন, বিশ্বে সবচেয়ে দ্রæত বাড়তে থাকা পাঁচ অর্থনীতির একটিতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।
গত অর্থবছর সাত দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পাওয়ার পর ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে সাত দশমিক চার শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছিল সরকার। কিন্ত অর্থবছরের প্রথম আট মাসের (জুলাই-ফেব্রæয়ারি) তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো যে প্রাক্কলন করেছে, তাতে অর্থবছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে রেকর্ড আট দশমিক ১৩ শতাংশ।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, এটা তাদের কাছে জানতে চাইতে পারেন, আমাদের হিসেবে আমরা এটা পেয়েছি।
বিশ্ব ব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট জে সম এ সময় বলেন, এই প্রবৃদ্ধি অনেক, বিশ্বে যে পাঁচ দেশের জিডিপি সবচেয়ে দ্রæত বাড়ছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে ইথিওপিয়া (৮ দশমিক ৮ শতাংশ), রুয়ান্ডা (৭ দশমিক ৮ শতাংশ), ভুটান (৭ দশমিক ৬ শতাংশ) এবং ভারতের (৭ দশমিক ৫ দশমিক) জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারই কেবল বাংলাদেশের চেয়ে বেশি।
জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখতে ব্যাংক খাতের সংস্কার, রাজস্ব আদায় বাড়ানোসহ অর্থনীতির বড় বড় খাতের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন বিশ্ব ব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি।
বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির ধারা শক্তিশালী ও স্থিতিশীল। বাংলাদেশ বাজেট ঘাটতি পাঁচ শতাংশের নিচে রাখতে পেরেছে এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে উৎপাদন ও অবকাঠামো নির্মাণের হার বেড়েছে। অন্যদিকে, ভোক্তা ও রাফতানিও বেড়েছে। রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে গ্রামীণ অর্থনীতি দ্রæত বাড়ছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ কৃষি উৎপাদনেও বাংলাদেশ অগ্রগতি দেখিয়েছে। এসব কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকারও দ্রæত বাড়ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ এখনও কম। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়লেও তা এখনও জিডিপির এক শতাংশের কম। বস্ত্র, তৈরি পোশাক, ওষুধ বা প্যাকেজিংয়ের মতো শিল্প খাতগুলোতে যন্ত্রপাতি আমদানির হারও কমেছে। ভ‚মি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো গেলে বাংলাদেশ শিল্প খাতের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠতে পারে।
বাংলাদেশের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কিছু সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি দুর্বল করপোরেট গভর্ন্যান্সের কারণে মন্দ ঋণ বা নন-পারফরমিং লোনের পরিমাণ বাড়ছে বলে উল্লেখ করা হয় বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে আরও এগিয়ে নিতে কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্য আয় ও ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে বাংলাদেশে প্রচুর বিনিয়োগ হতে হবে, প্রয়োজনীয় জনবল থাকতে হবে এবং আর্থিক খাত, ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণ ও অবকাঠামো শূন্যতা পূরণের মতো খাতগুলোতে উদ্ভাবনী সংস্কার করতে হবে।
অন্যদিকে ব্যাংক খাত প্রসঙ্গে জাহিদ হোসেন বলেন, ব্যাংকগুলোর আরেকটি দুর্বলতা হলো আমরা বড় বড় যেসব ঋণগ্রহীতাকে ঋণ দিচ্ছি, তাদের ব্যবসায় যদি কোনো দুর্যোগ দেখা দেয়, তাহলে কী হবে? ব্যাংকিং খাতে তার কী প্রভাব কী হতে পারে? বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, তিন জন, সাত জন ও ১০ জন বড় ঋণগ্রহীতা ঋণখেলাপি হয়ে যান, তাহলে ২১, ৩১ ও ৩৫টি ব্যাংক তাদের মূলধনে ঘাটতিতে পড়ে যাবে।
জাহিদ হোসেন বলেন, ব্যাংকগুলো যে ঋণ দেয় তার বিপরীতে কিছু জামানত নেওয়া হয়। এই বন্ধকি জামানত যদি বিক্রি করে খেলাপি ঋণ আদায় করা হয়, তাহলে কী হবে? তিনি বলেন, এই জামানতের যদি ১০, ২০ ও ৪০ শতাংশ মূল্য কমে যায় তাহলে ২, ৫ ও ৯টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়বে। সব মিলিয়ে যদি ব্যাংকের ঝুঁকি পর্যালোচনা করি, তাহলে চিত্রটি অনেক গভীর বলা যায। সব মিলিয়ে বলা যায়, ব্যাংকিং খাতে কালো ঘন মেঘ ঘূর্ণিঝড়-তুফানে পরিণত হতে পারে। তার মানে হলো আর্থিক খাতে দুর্বলতা আছে।
তিনি খেলাপি ঋণকে এই খাতের প্রধান সমস্যা বলে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, আমাদের ব্যাংকিং খাতে বড় বড় ঋণখেলাপি রয়েছে। তাদের ঋণ বারবার পুনঃতফসিল করতে দেওয়া হচ্ছে। একেকজনকে তিন-চার বার করে ঋণ পুনঃতফসিল করতে দেওয়ার মাধ্যমে আর্থিক খাত, বিশেষ করে ব্যাংক দুর্বল হচ্ছে। এভাবে পুনঃতফসিলের কোনো যৌক্তিকতা নেই।
সম্প্রতি ঋণখেলাপিদের ৯ শতাংশ সরল সুদে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দিতে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার সমালোচনা করে জাহিদ হোসেন বলেন, এভাবে ঋণ পরিশোধের সুযোগ করে দেওয়া হলে ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে পড়বে। বারবার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার পরিবর্তে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া উচিত মত দিয়ে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের এই লিড ইকোনমিস্ট বলেন, বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক যেন ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের কাজে যেন হস্তক্ষেপ না করা হয়।
অর্থনীতিতে দুই দুর্বলতা: অনুষ্ঠানে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ না বাড়া ও রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতাকে দেশের অর্থনীতির বড় দুইটি দুর্বলতার জায়গা হিসেবে অভিহিত করা হয়। জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে যে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তাতে শিল্প খাতের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। তবে দুর্বলতার জায়গা হলো ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ। তবে এই খাতে যে বিনিয়োগ হচ্ছে না, তা নয়। তবে প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগ এই খাতে হচ্ছে না। সামষ্টিক অর্থনীতি মোটামুটি স্থিতিশীল হলেও বেশ কিছু দুর্বল জায়গা রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান হলো ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ ও রাজস্ব খাতের আয়ের দুর্বলতা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে আমরা প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কিছুটা কমেছে। তবে আমাদের মতে, অগ্রাধিকারভিত্তিতে সংস্কারের ধারাবাহিকতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আর্থিক খাত ও রাজস্ব খাত, অবকাঠামো, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং ব্যবসায়িক পুঁজি বিনিয়োগে।####
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।