Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এডিবির পূর্বাভাস : প্রবৃদ্ধি হবে আট শতাংশ

প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ভূমিকা রাখছে বাণিজ্য যুদ্ধ : এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বেশি : এডিবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

রফতানি ও সরকারি বিনিয়োগে ইতিবাচক ধারা অব্যহত থাকায় চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশ মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) আট শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে বলে মনে করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি। বাংলাদেশের অর্থনীতির হাল হকিকত নিয়ে প্রকাশিত এডিবির বার্ষিক প্রতিবেদন ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০১৯’ এ প্রবৃদ্ধির এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে এডিবির আবাসিক প্রতিনিধি মনমোহন প্রকাশ গতকাল সংস্থার ঢাকা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। বাংদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে প্রাক্কলন এডিবি করেছে, তা সরকারের হিসাবের চেয়ে কিছুটা কম হলেও এডিবির আগের পূর্বাভাসের চেয়ে অনেকটা বেশি।
অর্থবছরের প্রথম আট মাসের (জুলাই-ফেব্রæয়ারি) তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো যে প্রাক্কলন করেছে, তাতে ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে রেকর্ড ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত অর্থবছর ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পাওয়ার পর ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করে সরকার। তবে গতবছর সেপ্টেম্বরে এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রবৃদ্ধির হার এবার হতে পারে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
সেই অবস্থান থেকে এডিবি সরে আসছে কেন জানতে চাইলে মনমোহন প্রকাশ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তাদের আগের হিসাব ছিল তিন মাসের তথ্যের ভিত্তিতে। এখন নয় মাসের তথ্যে দেখা যাচ্ছে পরিস্থিতি বদলে গেছে। তাছাড়া চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দ্বন্ধের কারণেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ কিছু পণ্যের রফতানি বেড়েছে জানিয়ে এডিবির আবাসিক প্রতিনিধি বলেন, এ বিষয়টিও প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ভ‚মিকা রাখছে।
মনমোহন প্রকাশ বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে দ্রæতগামী। রেমিট্যান্সের প্রভাবে ব্যক্তি খাতে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি অবকাঠামো খাতে সরকারের বাড়তি বিনিয়োগের কারণেই প্রবৃদ্ধি বাড়ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ধরে রাখতে আগামীতে শিল্পের ভিত্তি বাড়াতে হবে। বৈচিত্র্য আনতে হবে রফতানি পণ্যে। ব্যক্তি খাতের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে হবে। করের ভিত্তি বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করতে হবে। ব্যক্তি খাতের চাহিদা মেটাতে মানব সম্পদেও উন্নয়ন করতে হবে। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতের সংস্কারেও গুরুত্ব দিতে হবে বলে জানান, মনমোহন প্রকাশ।
এডিবি বলছে, মূল্যস্ফীতিও থাকবে নিয়ন্ত্রণে যা সংখ্যাগত হিসাবে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। সংস্থাটি মনে করে, নির্বাচন পরবর্তী স্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা সারাবছরই এমন থাকবে। একই সাথে, উচ্চ রফতানি প্রবৃদ্ধির ধারা ও প্রবাসী আয়ের গতিও বেগবান হবে।
চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ধরা হয়েছে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ, শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ১২ দশমিক ৫ ভাগ। তবে যানবাহন, শিক্ষা, আর্থিক খাত ও স্বাস্থ্য খাতের ধীরগতির কারণে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি ততটা এগুবে না। যা থাকতে পারে ৬ দশমিক ৪ শতাংশের আশেপাশে। এডিবির মতে, রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়াবে ১৪ শতাংশে। মূলত পোশাক খাতে রফতানির ওপর ভর করেই এই প্রবৃদ্ধি সম্ভব হবে।
এডিবির মনে করে, গেলো অর্থবছরে, দেশে বিপুল পরিমানে পণ্য আমদানি হলেও ১০ শতাংশের মধ্যেই থাকবে। মূলত খাদ্যপণ্য ও ভোগ্যপণ্যের চাহিদা কম থাকায় ২০১৯-২০ অর্থবছরেও দেশে আমদানির পরিমাণ কমবে। এডিবির মতে, চলতি অর্থবছরে দেশে প্রবাসী আয় বাড়বে ১১ শতাংশ হারে। তবে, এর পরের অর্থবছরে তা একই ধারায় না থেকে নেমে আসবে ১০ শতাংশের ঘরে।
এতোসব সুখবরের পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের এ ধারায় বেশকিছু চ্যালেঞ্জও দেখছে উন্নয়ন সহযোগী এ সংস্থা। এর মধ্যে আছে, ব্যাংক খাতে বাড়তে থাকা খেলাপি ঋণ ও দুর্বল শাসন ব্যবস্থা।
বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নে ব্যাংকিং খাতের অব্যবস্থাপনা আগামীতে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করে এডিবি। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণের হার বেশি। বিনিয়োগের তুলনায় লাভের হার কম। এখানে সুশাসন ব্যবস্থাও দুর্বল। এর ফলে বাড়ছে মূলধন ঘাটতির প্রবণতা। ব্যাংকিং খাতে পরিচালনায় ও আইনি কাঠামোয় বড় ধরনের অদক্ষতা রয়েছে বলেও মনে করে এডিবি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ব্যাংকিং খাতে দুর্বলতায় নেয়া আগের অনেক উদ্যোগ সফল হয়নি। ব্যাংক আইন সংশোধন, ব্যাংকে বিশেষ নিরীক্ষা ও ঋণের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা গাইড লাইনে কিছুটা সফলতা এসেছে। উন্নতি ধরে রাখতে আগামীতে বিদ্যমান ব্যাংক আইনের কঠোর প্রয়োগ চেয়েছে এডিবি। তা ছাড়া করপোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠা, ঋণের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা যাচাই করা, সরকারী ব্যাংকে একীভ‚তকরণের মতো উদ্যোগ বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে এডিবি। জাতীয় পর্যায়ে সম্পদ ব্যবস্থাপনায় একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলারও পরামর্শ দিয়েছে এডিবি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রবৃদ্ধি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ