Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বগুড়ায় ভয়ংকর ওষুধ বাণিজ্য

চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে সাধারণ মানুষ

বগুড়া ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৯, ৬:৩২ পিএম

বগুড়া এখন আমদানি ও বিক্রয় নিষিদ্ধ এবং অনুমোদনহীন নকল ওষুধ বাজারজাত করনের বড় আড়তে পরিণত হয়েছে। এইসব ওষুধ বিক্রি করে কিছু মানুষ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন সাধারণ মানুষ । সম্প্রতি পুলিশের অভিযানে বিক্রি নিষিদ্ধ সরকারি ওষুধের একটি বড় গোডাউনের সন্ধান মিললে কিছুটা ফাঁস হয় ওষুধ নিয়ে ভয়ংকর বাণিজ্যের চিত্র।

গত ৩১ মার্চ বগুড়া শহরের মফিজ পাগলার মোড়ের একটি বহুতল ভবনে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ৫০ লাখ টাকার সরকারি ওষুধের মজুদের সন্ধান পায় পুলিশ। এই ঘটনায় সরাসরি জড়িত মিজানুর রহমান রবিন নামের এক তরুণ ব্যবসায়ীকে আটক করে পুলিশ । পরদিন রবিনকে কোর্টে চালান করে ৮দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে । রবিনকে এখন নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বগুড়া পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী। এই মামলাটি তদন্তের সাথে জড়িত পুলিশের সূত্র বলেছে , সরকারি ওষুধের বেআইনি মজুদ ও বিপণনের সাথে জড়িত রবিন প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে, সরকারি হাসপাতালগুলোর জেলা ও উপজেলার ষ্টোর , কিছু সংখ্যক নার্স ও সরকারি হাসপাতালের ওষুধ সরবরাহের সাথে নিযুক্ত ঠিকাদারদের কাছ থেকে বিক্রি নিষিদ্ধ ওষুধ ,জীবন রক্ষাকারী স্যালাইন , সার্জিক্যাল সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হয়। এর ফলে বগুড়ার মেডিকেল কলেজ ,সরকারি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ ওষুধ পায়না। হাসপাতালের ষ্টোর গুলো থেকে তাদেরকে জানানো হয়,ওষুধের সাপ্লাই নেই। পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র রবিনের কাছে ধারণা পেয়েছে , আসলে হাসপাতাল ও মেডিকেলে সরকারিভাবে যে ওষুধের সরবরাহ রয়েছে তা’ চাহিদার সাথে সংগতিপূর্ণ। বেআইনি পাচারের কারণেই সরকারি মেডিকেল ও হাসপাতালে আসলে রোগীরা ওষুধ পায়না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে , গ্রেফতারকৃত রবিনের কাছে পাওয়া তথ্য সমূহ যাচাই বাছাইয়ের পর যেসব সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী এইসব ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের সাতে জড়িত রয়েছে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে, কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা ।

৩১ মার্চ সরকারি ওষুধের বিপুল বেআইনি মজুদের সন্ধান পাওয়ার পর বুধবার দুপুরে বগুড়ার ওষুধের পাইকারি বাজার হিসেবে চিহ্নিত খান মার্কেটের ৪র্থ তলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল ইসলাম ও ড্রাগ সুপার আহসান হাবিবের নেতৃত্বে এ´মপো’ নামের একটি ওষুধ বিপনন প্রতিষ্ঠানের অফিস কাম গোডাউনে অভিযান চালিয়ে ৮ লক্ষাধিক টাকা মুল্যের অনুমোদনহীন, আমদানী ও বিক্রি নিষিদ্ধ ওষুধের মজুদের সন্ধানস পাওয়া যায়। অভিযানকালে হাতে নাতে ধরা পড়া শফিকুল ইসলাম ও আব্দুল মোমিন নামের ২ জন বিপনন কর্মকর্তাকে ভ্রাম্যমান আদালতে ৬ মাসের কারাদন্ড ও ২ লক্ষাধিক টাকার অর্থদন্ড দেয়া হয়েছে । তাদের হেফাজত থেকে নকল মেডিকেটেড শ্যাম্পু , ফুড সাপ্লিমেন্ট, যৌন উত্তেজক ওষুধ জব্দ করা হয় । এছাড়া স্থানীয়ভাবে মুদ্রিত বিদেশী ওষুধের মোড়ক ও বিএসটি আইয়ের ভুয়া অনুমোদনের কাগজও পাওয়া যায়।

এদিকে পাইকারি ওষুধের এই মার্কেটের ৪র্থ তলায় অবিযান চলার সময় পুরো মার্কেটের প্রায় হাজার খানেক ওষুধের দোকানের অর্ধেরও বেশি দোকান বন্ধ করে দোকানের মালিক কর্মচারিরা চলে যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বন্ধ হয়ে যাওয়া এই দোকানগুলোতে বিক্রয় নিষিদ্ধ ওষুধের মজুদ ছিল । অভিযোগ রয়েছে , এই মার্কেটে একটি প্রভাবশালী চক্র দীর্ঘদিন ধরে বেআইনী ওষুধের সংগ্রহ , মজুদ ও বিপননের সাথে জড়িত রয়েছে । এই মার্কেটে অতিতেও বহুবার টাক্সফোর্স ও ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান হয়েছে । এখানে অভিযানে এসে একাধিক ড্রাগ সুপার শারীরীকভাবে লাঞ্ছিতও হয়েছে । অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে একটি প্রভাবশালী চক্র ওষুধ প্রশাসনের সৎ কর্মর্তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে । মন্ত্রনালয়ে তদ্বির করে অনেককে বদলীও করেছে ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাণিজ্য

২৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ