গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
আমাদের ভবনে আগুন লেগেছে। আমি বের হতে পারছি না। এখান থেকে বের হতে পারবো কিনা তাও জানি না। তোমরা আমাকে এখান থেকে বের করো। আমাকে সাহায্য করো। রাজধানীর বনানীতে এফআর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডে আটকা পড়ার পর নাহিদুল ইসলাম তুষার তার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে এভাবেই জীবন বাঁচাতে সাহায্য চান। কিন্তু কেউ তার এই আর্তনাত কে সাড়া দিতে পারেনি। তার আগেই ভবনে থাকা আগুনে প্রাণ হারায় তুষার।
নাহিদুল ইসলাম তুষার। জীবনে বড় হয়ে ভালো কিছু করার স্বপ্ন ছিলো তার। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন হ্যারিটেজ ট্রাভেলস এজেন্সিতে। চাকুরির পাশাপাশি খেলাধুলাও ছিলো তার জীবনের বড় একটি অংশ। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের ভানুয়াবহ গ্রামে তার বাড়ী। বাবা এছাক আলী, মা নূরুন্নাহার, বড় ভাই তুহিন ও ছোট ভাই শিশির। চার বছর আগে মাহমুদা আক্তার নদীর সঙ্গে দাম্পত্য জীবন শুরু হয় তুষারের। দাম্পত্য জীবন শুরু হলেও তাদের কোন সন্তানাধি ছিলোনা।
বিয়ের পর থেকে মাহমুদা আক্তার নদী ও তুষারের জীবন ভালোই কেটে যাচ্ছিলো। অনেক স্বপ্ন আর ভালোবাসার সংসার ছিলো তাদের। নদীর অনেক স্বপ্ন ছিলো তুষারকে ঘিরে। কিন্তু এফআর টাওয়ারের দশ তলায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পাল্টে যায় নদীর জীবন। তুষারের সাথে দেখা সব স্বপ্ন আর ভালোবাসা এক মুহূর্তেই শেষ হয়ে যায় নদীর। ভয়াবহ আগুনের লেলিহান শিখায় অন্যদের সাথে তুষারের জীবন প্রদীপও মূহুর্তের মধ্যে কেড়ে নেয়। মৃত্যুর আগে নদীর কাছে ফোন করে শেষ কথা বলে যায় তুষার। আমার জন্য সবাইকে দোয়া করতে এবং মাফ করে দিতে বলো। এছাড়া নদীর কাছে আর কোন কিছু চাওয়ার ছিলো না। কিন্তু নদী তার স্বামীর অকাল মৃত্যু কোন ভাবেই যেন মেনে নিতে পারছে না। তার বিশ্বাস তুষার তাকে ফোন করবে। কিন্তু তার মোবাইলে আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব অনেকের ফোন আসে তবুও তুষারের ফোন আসে না কেন। এ ঘটনার পর পুরো জীবন পাল্টে দিয়েছে নদীর। এখন তার ভবিষ্যৎ কি হবে তা শুধুই তুষার ও নদীর পরিবারের সদস্যরাই ঠিক করতে পারে। তবে তার সাথে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনায় মানসিক ভাবে সক্ষম হতে কতদিন সময় লাগবে তা কেউ জানেন না।
উল্লেখ্য, ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার রাতে বনানী থেকে তুষারের মরদেহ মির্জাপুরের ভানুয়াবহ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। শুক্রবার সকাল দশটায় গ্রামের বাড়িতে তার নামাজে জানাজা শেষে সামাজিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জানাজায় এলাকার শতশত মানুষ অংশ নেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।