পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আমাদের চারপাশে শুধুই দুঃসংবাদ। কয়েকদিনের মধ্যে অকাল কালবৈশাখী ঝড়ে কয়েকজনের প্রাণহাণী হয়েছে। ঘর-বাড়ি ও সম্পদ নষ্ট হয়েছে প্রচুর। রাজধানীর এক গরিব চা বিক্রেতা কোনো উঁচু বিল্ডিং থেকে উড়ে আসা ইটের আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন। মতিঝিলে এক ভবনের ছাদে রাখা পরিত্যক্ত সোফা ঝড়ে উড়ে এসে মাথায় পড়ায় মারাত্মক আহত হয়েছেন এক রিকশা চালক। লোকজন উপস্থিত চাঁদা তুলে তাকে হসপিটালে পাঠায়।
এর আগে প্রায় উপর্যুপোরি ৪ দিন রাজধানীতেই অগ্নিকান্ড ঘটতে থাকে। প্রথম চকবাজারের চুড়িহাট্টায়, পরে বনানীর এফআর ভবনে, এরপর ধানমন্ডি ও গুলশানে। এরই মাঝে রাজধানীসহ সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ২ হাজারের বেশি। এসবের পেছনে কারণ বা এর প্রতিকার নিয়ে বহু কিছু বলা যায়। বলা হচ্ছেও। তবে, মানুষ হিসাবে আল্লাহর সুরক্ষা ও তার বিশেষ নিরাপত্তা ছাড়া আমাদের শান্তিতে থাকা মোটেও সম্ভব নয়। এটিই বাস্তব কথা।
সংবাদপত্রে একজন চলৎশক্তিহীন অথচ সাহসী, উদ্যমী ব্যক্তির মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর এসেছে, যিনি কাসেম গ্রুপে চাকরি করতেন। এর ক’বছর আগে তিনি অফিসের সামনেই সড়ক দুর্ঘটনায় চলৎশক্তি হারান। এরপর মনের উদ্যমে তিনি চাকরিতে থাকেন। অফিস মতিঝিল থেকে বনানীতে গেলে সেখানে যান। সংসারী হন। এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা হন। বনানীর আগুনে তার সহকর্মীরা একে একে সবাই বের হয়, তাকে কেউ তুলে দাঁড় করাতে হয়। পথ চলতে সাহায্য করতে হয়। তাই তিনি আর বেরুতে পারেননি।
ঠান্ডা মাথায় নিজের চেয়ারে বসে থেকে আত্মীয়-স্বজনদের ফোন করে অবস্থা জানান। বলেন, এখন আমি শেষ সময় পার করছি। আমি নিজে দোয়া-দুরুদ পড়ছি। তোমরাও আমার জন্য দোয়া করো। ছোট ভাইকে সব দায়-দায়িত্ব দিয়ে সুন্দরভাবে চলার পরামর্শ দেন। অন্য আত্মীয়রা একে একে সবাই তার সাথে কথা বলে। এক সময় ফোন বাজতে থাকে, তিনি আর কথা বলেন নি। সম্ভবত ধোঁয়ায় বেহুঁশ হয়ে গিয়েছেন, এরপর মারা গিয়েছেন। এভাবেই তার মৃত্যু ছিল।
উন্নত দেশ হলে প্রতিবন্ধীদের জন্য ইমার্জেন্সি এক্সিট দিয়ে তিনি বেরুতে পারতেন। এদেশে তো সুস্থ সবল লোকেরাও বেরুবার পথ পায় না। ছাদ বন্ধ। সিঁড়ি বন্ধ। জরুরি সিঁড়িই নেই। আগুন নেভানোর প্রযুক্তি নেই। যা আছে তা অপ্রতুল। ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী লাইভে এসে বলেছেন, আমরা আধঘণ্টা যাবত একজন মানুষকে দেখছি। কিন্তু আমরা পৌঁছতে পারছি না বলে তাকে রক্ষা করতে পারছি না। লোকটি প্রথমে হাত নেড়েছেন, আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এরপর বেহুঁশ হয়ে ঢলে পড়েছেন। শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু হয়েছে। কয়েক গজের ব্যবধানে এসব ঘটলেও আমাদের সিঁড়ি এতদূর পৌঁছেনি। এমন অসংখ্য ঘটনা রয়েছে।
মৃত্যু মানুষকে তাড়া করে। যেমন রিজিক মানুষকে তাড়া করে। পারস্য কবি বলেছেন, ‘দো চিজ আদমিরা কাশাদ ব জোর, একে আব ও দানা দিগার খাকে গোর’। অর্থাৎ, রিজিক ও কবরের মাটি মানুষকে অবশ্যই টেনে আনবে। কয়েকজন ২২ তলার নানা পর্যায় থেকে তার বেয়ে নেমেছেন। অনেকে নেমে শেষ করেছেন। অনেক নারীও মানুষের সহায়তায় নিকটবর্তী তলাগুলো থেকে বেরিয়েছেন। দু’য়েকজন তার বেয়ে নেমে আসার চেষ্টা করেও নিরাপদে নামতে পারেন নি। পড়ে গিয়ে হাত-পা ভেঙ্গেছে তাদের। কেউ কেউ পুরোই চ‚র্ণবিচ‚র্ণ হয়ে গেছেন। থেতলে গিয়ে জীবন হারিয়েছেন।
আগুনের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে তার বেয়ে নামতে শুরু করল, তার কি জানা ছিল যে, মৃত্যু তাকে ধাওয়া করছে। সঙ্গীরা বেঁচে গেলেও সে নিজে নিরাপদে জীবনের কিনারায় পৌঁছতে পারে নি। মৃত্যু তাকে ছিনিয়ে নিয়েছে। এ ধরনের বিপদ মুহূর্তে মানুষকে পড়তে যেন না হয়, এটিই মানবতার কাম্য। কেউ যদি পড়ে, তাহলে তার বাঁচার উপায় থাকে না। এত বড় ঝুঁকি মানুষ নিতে পারে না। যারা নেয় তারা সজ্ঞানে তা নেয় না। নিরুপায় হয়ে সাক্ষাত মৃত্যু থেকে পালাতে আরেক মৃত্যুকে বেছে নেয়। কেউ হয়তো ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়। আর কেউ এক মৃত্যু থেকে পালানোর পথে অন্য মৃত্যুর সাথে মিলিত হয়।
মানুষ এতই অসহায়। তার অসহায়ত্ব জলে স্থলে অন্তরীক্ষে জীবনের প্রতি বাঁকে বাঁকে। শুধু সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেই কেবল সে বেঁচে থাকে। সামান্য ব্যতিক্রম হলে তার বাঁচার উপায় থাকে না। মানুষের যত বুদ্ধি, ক্ষমতা, কৌশল ও ব্যবস্থা সবই আল্লাহর ইচ্ছায় সচল থাকে। কার্যকর থাকে। তিনি না চাইলে নিরাপত্তাই থাকে না। বিপর্যয় ঘটতে থাকলে তিনি ছাড়া রক্ষারও কেউ থাকে না।
বিমানে, গাড়িতে, ট্রেনে, বাসে, সড়কে, অফিসে, বাড়িতে, ঘরে, বাইরে সবসময় সবাই আল্লাহকে ডাকতে থাকা উচিত। তার স্মরণে মগ্ন থাকা উচিত। তার কাছে দোয়া করে আশ্রয় চেয়ে জীবনের প্রতিটি ক্ষণ পার করা কর্তব্য। তিনি ছাড়া কোনো ব্যবস্থাই কার্যকর হবে না। হতে পারে না। হয় না। মুসলমানরা আল্লাহর মহান একটি নেয়ামত ভোগ করেন। সেটি হচ্ছে, আল্লাহর বিশেষ নিরাপত্তা। অবিশ্বাস, সীমাহীন জুলুম-অত্যাচার, গুনাহ-পাপাচার যখন আল্লাহর গজবের কারণ হয়, তখন বড় ছোট নির্বিশেষে সবাই অধিক তওবা ইস্তেগফার করতে হয়।
আল্লাহকে বেশি স্মরণ করতে হয়। যে বিপদে মানুষ আল্লাহর কাছে যায়, সেটি গজব নয় বরং রহমতের উসিলা। যে বিপদে মানুষ আল্লাহ থেকে দূরে সরে যায়, সেটি তার জন্য গজব। আল্লাহর নেয়ামত হচ্ছে, তার আশ্রয়ে থাকার সুযোগ। যেমন আয়াতুল কুরসীতে বলা হয়, ‘আল্লাহ তিনি, যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। যিনি সদা প্রতিষ্ঠিত ও চিরঞ্জীব। তার কোনো ক্লান্তি বা নিদ্রার প্রয়োজন নেই। সৃষ্টিজগতের সবকিছুই তার হুকুমের অধীন। তার মালিকানাধীন। তিনি জানেন, সকলের সামনের ও পেছনের সকল বিষয় সম্পর্কে।
তার ইচ্ছার বাইরে তার জ্ঞানের জগত সম্পর্কে কেউই কোনো ধারণা করতে সক্ষম নয়। তার কুরসি বা প্রতাপের অধিষ্ঠান ব্যাপ্ত করে আছে সকল আসমান ও জমিনকে। এ দু’য়ের সুরক্ষা তাকে কখনও ক্লান্ত করে না। তার বিরক্তি বা ভারী বোধ হয় না। আল্লাহ সব কিছু শোনেন ও জানেন। তিনি সর্বজ্ঞ ও সর্বশ্রোতা।’ এ ঘোষণা ও স্বীকৃতির পর ঈমানদারের আর কোনো উদ্বেগ থাকে না। অন্তর দিয়ে আয়াতুল কুরসি পড়লে বান্দার জান-মালের হেফাজতের দায়িত্ব আল্লাহই নিয়ে নেন।
আমরা চিনি না, জানি না এমন পাইলটের বিমানে বহু ঘণ্টা ভ্রমণ করি। মোটেও ধারণা রাখি না, এমন ক্যাপ্টেনের জাহাজে দিনের পর দিন সমুদ্রে ভেসে বেড়াই। জানা নেই, শোনা নেই এমন চালকের গাড়িতে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে কাটাই। এটি হচ্ছে মানুষের অপরাগতা। কিন্তু আমাদের জীবনের মূল চালক মহান সৃষ্টিকর্তা রাব্বুল আলামীনের সাথে আমাদের যদি সুসম্পর্ক থাকে, তাহলে যে কোনো অবস্থায় আমরা তার রহমত আশা করতে পারি। যদি তাকে স্মরণ করি তিনি আমাদের স্মরণ করবেন। যদি আশ্রয় চাই, আশ্রয় দেবেন। যদি নিরাপত্তা চাই, নিরাপত্তা দেবেন।
এজন্য তার হাবীব, আমাদের প্রিয় নবী সা. এর শেখানো মনোভাব ও ধারণা নিয়ে আমাদের দোয়াগুলো পড়তে হবে। সবসময় তার জিকির জবান ও অন্তরে জারি রাখতে হবে। আল্লাহর ওপর যে ভরসা করে আল্লাহ তাকে হতাশ করেন না। আল্লাহ বলেছেন, ‘যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।’ আল্লাহ অন্যত্র বলেন, ‘অতএব, ঈমানদারেরা আল্লাহর ওপরই ভরসা করুক।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।