Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ভবন থেকে মালামাল নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান

বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকান্ড

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ার ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর গতকাল থেকে ভবনটিতে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের মালামাল সরানো শুরু করেছে। গতকাল দুপুরের অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানকে মালামাল নিতে দেখা গেছে। এদিকে, এফ আর টাওয়ার নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্তে নামলেও রাজউকের কাছে থাকা ভবনটির নকশা ছাড়াই তদন্ত কাজ শুরু করেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি। গতকাল ভবন পরিদর্শনে আসেন এমন তথ্য জানা যায়। রাজউকের কাছে থাকা ভবনের নকশাটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে তারা জানান। রাজউকের মতো গতকাল অগ্নিকান্ডের কারণ অনুসন্ধানে ভবন পরিদর্শণে আসেন আইইবি। আগামী সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে সংস্থাটি সংশ্লিষ্টরা জানান। গত ২৮ মার্চ দুপুরের দিকে ২৩ তলা ভবনটিতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ২৬ জনের প্রাণহানি ঘটে।
গতকাল সরেজমিনকালে দেখা যায়, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত এফ আর টাওয়ারে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালামার সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে প্রতিষ্ঠান মালিক ও কর্মকর্তারা তাদের মালামাল সড়িয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেন। ভবনের ম্যানেজম্যান্টের সহায়তায় মালিক ও কর্মকর্তাদের শনাক্ত করে তাদেরকে মালামাল নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে পুলিশ।
বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বোরহান উদ্দিন বলেন, আমরা ভবন ম্যানেজম্যান্টের সহায়তায় মালামাল সরিয়ে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের নাম-ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর জমাদান সাপেক্ষে মালামাল আনতে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। একজন পুলিশ সদস্যকে নিয়ে তারা মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন। গতকাল অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান মালামাল সরিয়ে নেয় বলে জানা গেছে।
ভবনটির ১৬ তলায় মাইকা সিকিউরিটিজ গ্রæগের পরিচালক জামান রাজা বলেন, আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের সব মালামাল নিতে এসেছি। এখানে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে নাম ঠিকানা, প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে একজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে সেফটি গার্ড নিয়ে ভবনে প্রবেশ করছি এবং প্রয়োজনীয় সব মালামাল নিয়ে আসা হচ্ছে। অন্যত্র অফিস সরিয়ে নিতে আমরা চেষ্টা করছি। এর জন্য অফিস খোঁজা হচ্ছে। যেখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রয়েছে আমরা সেই ভবনেই অফিস নিয়ে যাবার বিষয়টি ভাবছি।
তিনি আরও বলেন, ভবনে আগুন লাগার সময় কোনও এলার্ম বাজেনি। এর জন্য প্রতিটি ফ্লোরে থাকা মানুষদের নামতে দেরি হয়েছে। ভবন ম্যানেজম্যান্ট ঠিক সময়ে এলার্ম বাজালে এত মানুষের প্রাণহানি ঘটতো না।
৬ষ্ঠ তলার আমরা নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি স্টোর ম্যানেজার সবুজ মাহমুদ বলেন, মালামাল নামিয়ে এনেছি। পুলিশ সদস্য সঙ্গে গিয়েছিল। কী কী মালামাল নামিয়ে এনেছি সেটির একটা লিস্ট তৈরি করে পুলিশের কাছে রাখা হয়েছে।
রাজউকের নকশা ছাড়াই তদন্তে নেমেছে গণপূর্তর কমিটি
এফ আর টাওয়ার নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে মাঠে নামলেও রাজউকের কাছে থাকা ভবনটির নকশা ছাড়াই তদন্তে নেমেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি। কমিটির কাছে ভবন মালিকের দেওয়া নকশা থাকলেও রাজউক থেকে কোনও নকশা পাননি বলে জানিয়েছেন তদন্ত দলের সদস্যরা। গতকাল ভবন পরিদর্শনে আসেন গণপূর্তের ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি।
অতিরিক্ত সচিব ইয়াকুব আলী সাংবাদিকদের জানান, ভবনটি রাজউকের নকশা অনুযায়ী হয়েছে কিনা এবং নকশার কোনও অমিল রয়েছে কিনা তা দেখতে আমরা এসেছি। ভবনের কতটুকু সেটব্যাক রয়েছে তা নির্ণয় করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।
এসময় ভবন নির্মাণে ব্যত্যয় ঘটনার বিষয়টি কীভাবে ধরা পড়বে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজউক ও ভবন মালিকের দেওয়া নকশা বিশ্লেষণ করলেই বিষয়টি জানা যাবে।
এসময় ভবন মালিকের নকশা ও রাজউকের নকশার মধ্যে কি কি অমিল পেয়েছেন জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য স্থপতি কাজী গোলাম নাসির বলেন, আমরা শুধুমাত্র ভবন মালিকের নকশাটি হাতে পেয়েছি। রাজউকের নকশা এখনও পাইনি। দুটি নকশা পাশাপাশি রেখে ব্যত্যয়গুলো বলা যাবে।
তিনি আরও বলেন, ১৯৫৩, ১৯৮৪, ১৯৯৬, ২০০৬ ও ২০০৮-এর মধ্যে বিল্ডিং কোডের কোন বিধিমালায় ভবনটি নির্মাণ হয়েছে সেটি তদন্ত করে দেখা হবে। সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। যদিও ১৯৯৬ সালের বিল্ডিং কোড অনুযায়ী বাণিজ্যিক ভবনের সেটব্যাক রাখার নিয়ম ছিল না। এটি ২০০৮ সালের বিধিমালায় রাখতেও বলা হয়েছিল। সেটি খতিয়ে দেখা হবে। উল্লেখ্য, ১৮ তলার অনুমোদন থাকলেও রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই ভবনটি ২৩ তলা পর্যন্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে আইইবি
রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের যথাযথ কারণ অনুসন্ধানে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন করেছেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি)। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় ভবনটিতে প্রবেশ করে আইইবির ৮ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির ৬ জন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বের হয়ে আসে তারা সাংবাদিকদের বলেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
আইইবির তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব প্রকৌশলী কাজী খায়রুল বাশার বলেন, এই ভবনের অবস্থানটা দেখেছি, তিন ঘণ্টা অবজার্ভ করেছি। আগুনের কারণ, ক্ষয়ক্ষতি ও নকশা অনুযায়ী নির্মাণ কাজ হয়েছিল কিনা তাই যাচাই করা হয়েছে। আমরা তদন্ত কমিটি আবার বসবো। সেখানে আমাদের অবজারভেশন তুলে ধরবো। আগুনের সূত্রপাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসি বিস্ফোরণ, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট কিংবা অবহেলাজনিত কারণে আগুনের সূত্রপাত ঘটতে পারে। আমরা ফুটেজ নিয়েছি, ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরের প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছি, আগুনে ৮, ৯, ১০ ও ১১ তলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আজ প্রথম পরিদর্শনে আমরা স্যাম্পলও সংগ্রহ করেছি। প্রয়োজনে আবার পরিদর্শনে আসবো। আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। এ সময় তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।



 

Show all comments
  • অমিত ২ এপ্রিল, ২০১৯, ৩:০৩ এএম says : 0
    নেবে না তো কি করবে তারা
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অগ্নিকান্ড


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ