মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে গত ১৫ মার্চ দুই মসজিদে হামলার ঘটনায়গতকাল শুক্রবার নিহতদের স্মরণে সভার আয়োজন করে নিউজিল্যান্ড। নামাজরত মুসল্লিদের এলোপাতাড়ি গুলি করে হত্যা করে ব্রেন্টন ট্যারান্ট নামের ২৮ বছর বয়সী এক শ্বেতাঙ্গ উগ্র-ডানপন্থী। ভয়াবহ ওই হামলার ঘটনায় নিউজিল্যান্ডে শোকের ছায়া নেমে আসে। নিউজিল্যান্ড ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ এই হামলায় স্তব্ধ হয়ে যায়। কারণ অতর্কিত ওই হামলায় নিউজিল্যান্ডের নাগরিক ছাড়াও বাংলাদেশ, ভারত, মালয়েশিয়া, পাকিস্তানসহ বেশ কিছু দেশের নাগরিক নিহত হয়েছেন।
মুসলিম নেতা এবং ওই হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া লোকজনের সঙ্গে স্মরণ সভায় অংশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আনডার্ন। ১৯৭০ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা ব্রিটিশ গায়ক কেট স্টিভেনও ওই স্মরণ সভায় যোগ দেন। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি পার্কে আয়োজিত ওই স্মরণ সভায় যোগ দেন ২০ হাজারের বেশি মানুষ।
মানবতার মাঝেই সন্ত্রাসের সমাধান নিহিত বলে মন্তব্য করেছেন নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডার্ন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব এখন উগ্র সন্ত্রাসবাদের চক্রে আটকে গেছে। তবে এর সমাধান মানবতার মাঝেই নিহিত।‘ জাসিন্ডা ছাড়াও সেখানে কথা বলেছেন দেশটির মুসলিম নেতা ও হামলায় বেঁচে যাওয়ারা। ২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলীয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারান্ট নামের সন্দেহভাজন হামলাকারীর লক্ষ্যবস্তু হয় নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদ। শহরের হ্যাগলি পার্কমুখী সড়ক ডিনস এভিনিউয়ের আল নূর মসজিদসহ লিনউডের আরেকটি মসজিদে তার তাÐবের বলি হয় অর্ধশত মানুষ। এরমধ্যে ৪০ জনেরও বেশি নিহতকে ক্রাইস্টচার্চের নিউ পার্ক সমাধিতে দাফন করা হয়েছে। হামলার পর থেকেই এর নিন্দা জানিয়ে নিহতদের প্রতি ধারাবাহিকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছেন নিউজিল্যান্ডবাসী। হামলার প্রায় ১০ দিনের মাথায় শনিবার (২৩ মার্চ) আয়োজন করা হয় বিশাল স্মরণ অনুষ্ঠান ও জমায়েতের। হ্যাগলি পার্কে আয়োজিত ওই কার্যক্রম স¤প্রচার করা হয় দেশব্যাপী। কড়া নিরাপত্তায় সেখানে অংশ নেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। সেখানে পারফর্ম করেন ইসলাম গ্রহণ করা ব্রিটিশ সঙ্গীতশিল্পী ক্যাট স্টিভেন্স। আল নূর মসজিদের সামনেই ওই পার্কে উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশে করে জাসিন্ডা বলেন, আমরা ঘৃণা, ভয় ও অন্যান্য ভাইরাস থেকে মুক্ত নই। কখনও ছিলাম না। কিন্তু আমরা এমন একটা জাতি হতে পারি যারা এই রোগ নিরাময় করতে পারে।’ সেসময় তার সঙ্গ অন্যান্য দেশের সরকারি প্রতিনিধিরাও ছিলন। সেদিন হামলায় বেঁচে যাওয়া ফরিদ আহমেদও উপস্থিত ছিলেন স্মরণ অনুষ্ঠানে। হামলায় স্ত্রী হারিয়েছেন তিনি। তারপরও শান্তির বার্তা দিচ্ছেন। হামলাকারীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি চাই আমার হৃদয় একটি উত্তপ্ত আগ্নেয়গিরিতে রুপ নিক। আমি চাই ভালোবাসায় পূর্ণ একটি হৃদয়, যেখানে সহানুভূতি থাকবে।’ ক্যান্টাবেরির মুসলিম পরিষদের প্রধান সাগাফ খান, হামলা পরবর্তী সময়ে নিউ জিল্যান্ডের পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেন, তিনি আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘এই বিদ্বেষ থেকে কত ভালোবাসার তৈরি? অন্ধকার থেকে কতটা আলোর সৃষ্টি হলো?’ ক্রাইস্টচার্চের মেয়র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহাবান জানায়। এর আগে শনিবার সকালে নিউজিল্যান্ডের বড় শহর অকল্যান্ডে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে পদযাত্রা করেছেন ১ হাজারেরও বেশি মানুষ। ‘অভিবাসীদের জীবনের দাম আছে’ এবং ‘এখানে শরণার্থীদের স্বাগত জানানো হয়’ লেখা প্লেকার্ড হাতে তারা সমাবেশ করেন। হামলায় প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন, এরমধ্যে ২৪ জনকে এখনও ক্রাইস্টচার্চের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আহতদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ভয়াবহ ওই হামলা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন ফরিদ আহমেদ। কিন্তু তার স্ত্রী হুসনা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। কিন্তু স্ত্রীর মৃত্যুর পরেও ফরিদ জানিয়েছেন, তিনি ওই হামলাকারীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি এমন একটি হৃদয় চাই না যা আগ্নেয়গিরির মতো উত্তপ্ত। আমি এমন একটি হৃদয় চাই যা ভালোবাসা এবং মায়ায় পূর্ণ এবং যার মধ্যে করুণা থাকবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরাও ওই শোক সভায় যোগ দিয়েছেন। ব্রিটিশ গায়ক কেট স্টিভেন মুসলিম হওয়ার পর তার নাম হয়েছে ইউসুফ ইসলাম। তিনি ওই শোক সভায় নিহতদের স্মরণ করে ‘পিস ট্রেইন’ এবং ‘ডোন্ট বি শাই’ গান দু’টি গেয়েছেন।
সামাজিক মাধ্যমে আরও বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার আহŸান জানিয়েছেন ক্রাইস্টচার্চের মেয়র। ক্রাইস্টচার্চের ওই হামলার সময় পুরো ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে লাইভ করা হয়েছিল। ফেসবুক ওই ভিডিও সরিয়ে ফেলার আগেই তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই ওই ভিডিও শেয়ার করেছেন। মুসলিম কমিউনিটির সদস্যদের আয়োজনে ওই স্মরণ সভায় নিহত ৫০ জনের নাম স্মরণ করা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নারী, পুরুষ এবং শিশু ওই হামলায় নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ শিশুটির বয়স মাত্র তিন বছর। সূত্র : রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।