Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বুকফাটা কান্না

নিমতলী থেকে চকবাজার হয়ে বনানীতে আগুন

আবদুল্লাহ আল মামুন | প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

রাজধানীর পুরান ঢাকার নিমতলী থেকে চকবাজার হয়ে এবার বুকফাটা কান্নার রোল পৌঁছেছে ঢাকার অভিজাত এলাকা বনানীতে। এক শ্রেণির অর্থলোভী মানুষের লালসার শিকার হয়ে অগ্নিকান্ডে এ পর্যন্ত অনেকে মানুষ প্রাণ হারালেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। দুর্ঘটনার পর পর কিছুটা হাঁকডাক দেয়া হলেও কয়েক দিনের মধ্যেই তার রেশ কেটে যায়। অতীতে অগ্নিকান্ডে পুরান ঢাকার গিঞ্জি পরিবেশকে দায়ী করা হতো। কিন্তু এবার খোদ অভিজাত বনানীর মতো উচ্চবিত্তদের আবাস এলাকায় এমন ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নগরীর সামগ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সবার মুখে কেবল একই প্রশ্ন- কোথায় গেলে মিলবে স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা? কবে বন্ধ হবে এই বুকফাটা কান্না?
এ দিকে, গত বৃহস্পতিবারের অগ্নিকান্ডের ঘটনায় উদ্ধার হওয়া ২৫ লাশের মধ্যে ২৪ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অনেকের লাশ ইতোমধ্যে দাফন করা হয়েছে। আগুনে আহতদের মধ্যে ৫৯ জন নগরীর ৮টি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আগুনে ভবনের কয়েকটি ফ্লোর একেবারে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ ছাড়াও পুলিশের ক্রাইম সিন ইউনিটের সদস্যরা বিভিন্ন ফ্লোরে চূড়ান্ত তল্লাশিসহ ভবনের ঝুঁকিপূর্ণতার বিষয়টি যাচাই করেন। এর আগেও ২০০৮ সালে ভবনটিতে একবার আগুন লাগলে এটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। গতকাল শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের মতো এফআর টাওয়ারে উদ্ধার অভিযান শুরু করে কিছু না পেয়ে উদ্ধারকাজ সমাপ্ত ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী নিহতের ঘটনাকে অগ্নিকান্ডে ও ভবন নির্মাণকালে রাজউকের নকশা মানা হয়নি বলে মন্তব্য করেন। এ ছাড়া উত্তরের মেয়র আতিকুর রহমান দুর্ঘটনায় নিরাপত্তাজনিত দায় নিয়ে ভবন মালিকদের দায়ী করেন।
গতকাল দুপুরে ভবনটির সামনে গিয়ে দেখা যায়, নির্বাক দাঁড়িয়ে আছেন মাঝবয়সী আহসান উল্লাহ। তিনি বনানীর সি বøকের ৪ নম্বর সড়কে থাকেন। ঢাকার বাইরে থাকায় অগ্নিকান্ডের সময় আসতে পারেননি। তিনি আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ৯ তলায় আমার এক আত্মীয়ের সিকিউরিটি কোম্পানির অফিস ছিল। ওই অফিসের একজন স্টাফ মারা গেছেন। খুব খারাপ লাগছে। আল্লাহ জাতিকে এমন বিপদে যেন আর না ফেলেন। মোমিন নামে একজন জানান, রাতভর ভবনটির সামনে শোকার্ত মানুষের ভিড় ছিল। প্রত্যেকেই স্বজনদের খোঁজে ভবনটির সামনে অপেক্ষায় থাকেন।
বৃহস্পতিবারের মতো গতকালও আহতের সন্ধ্যানে এই হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতালে ছোটাছুটি করেছেন স্বজনরা। বৃহস্পতিবারে রাতেই অধিকাংশ লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। লাশ হস্তান্তরকালে এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির তৈরি হয়। আপনজন হারানোর শোকে তাদের বুকফাটা কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। গতকালও ঢাকা মেডিক্যাল ও দুর্ঘটনাকবলিত ভবনটির সামনে গিয়ে স্বজনদের আহাজারি করতে দেখা গেছে।
এফ আর টাওয়ারে নিহত যারা
রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তাদের সবার পরিচয় সনাক্ত করা গেছে। শনাক্ত হওয়া এসব লাশের মধ্যে একজনের ছাড়া বাকি ২৪ জনের লাশ স্বজন বা পরিচিতদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, নিহতরা হলেন- মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রামপাশা গ্রামের সৈয়দ মহিউদ্দিন আহমেদের মেয়ে সৈয়দা আমিনা ইয়াসমিন (৪৮), বরিশালের বিমানবন্দর থানার উত্তর কড়াপুর গ্রামের মৃত মোতাহার হোসেন সর্দারের ছেলে মো. মনির হোসেন সর্দার (৫২), ঢাকার গেন্ডারিয়ার আলমগঞ্জ এলাকার মৃত মিজানুর রহমানের ছেলে মো. মাকসুদুর রহমান (৩২), দিনাজপুরের কোতোয়ালি উপজেলার বালুয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত আলহাজ্ব আবুল কাশেমের ছেলে মো. আবদুল্লাহ আল মামুন (৪০), রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদ মুন্সির ছেলে মো. মোস্তাফিজুর রহমান (৩৬), খুলনার তেরখাদা উপজেলার কোদলা গ্রামের মো. মিজানুর রহমান, রাজধানীর রূপনগর থানাধীন রূপনগর হাউজিংয়ের ৪ নং সড়কের ২ নং বাসার ইউসুফ ওসমানের স্ত্রী ফ্লোরিডা খানম পলি (৪৫), মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে আতাউর রহমান (৬২), চাঁদপুরের দক্ষিণ মতলব উপজেলার দক্ষিণ নাগদা গ্রামের নাজমুল হাসানের ছেলে মো. রেজাউল করিম (৪০), নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের নবীনগর গ্রামের মৃত হাজি হেলাল উদ্দিনের ছেলে আহাম্মেদ জাফর (৫৯), নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের আবদুল ওয়াহাবের মেয়ে জেবুন্নেছা বেগম (৩০), রমনা থানাধীন মগবাজারের মধুবাগের মো. সামসুদ্দিনের ছেলে মো. সালাউদ্দিন মিঠু (২৫), টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ভানুয়াবহ গ্রামের মো. ইছাহাক আলীর ছেলে নাহিদুল ইসলাম তুষার (৩৫), বগুড়ার আদামদিঘী উপজেলার সান্তাহার বলিপুর গ্রামের রায়হানুল ইসলামের স্ত্রী তানজিলা মৌলি (২৫)। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার বালুগ্রামের মৃত নজরুল ইসলাম মৃধার ছেলে মো. পারভেজ সাজ্জাদ (৪৬), কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বানিয়াপাড়ার ইসহাক আলীর ছেলে মো. ইফতিয়ার হোসেন মিঠু (৩৭), যশোরের মেইনরোডের বেজপাড়া এলাকার শেখ মোজাহিদুল ইসলামের মেয়ে শেখ জারিন তাসনিম বৃষ্টি (২৫), নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার উত্তর ভূঁইগড় এলাকার মো. জহিরুল হকের ছেলে মো. ফজলে রাব্বি (৩০), শরীয়তপুরের শৈলপাড়া এলাকার সারেন গাঁ এলাকার মৃত আবদুল কাদির মির্জার ছেলে আতিকুর রহমান (৪২), লালমনিরহটের পাটগ্রাম উপজেলার কলেজ রোড এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে আনজির সিদ্দিক আবির (২৭), ডেমরার পূর্ব বগাইব এলাকার মকবুল আহমেদের ছেলে আব্দুল্লাহ আল ফরুক (৬২), নীলফামারীর জলঢাকার মাকসুদুর রহমানের স্ত্রী রুমকি আক্তার (৩০), নওগাঁর বোয়ালিয়া এলকার মৃত মনসুর রহমানের ছেলে মো. মঞ্জুর হাসান (৪৯), পাবনার আতাইকুলা উপজেলার চরপাড়া এলাকার আউয়ুব আলীর ছেলে মো. আমির হোসেন রাব্বি (২৯) এবং শ্রীলঙ্কার বিগনাবাজারের নাগরিক হীরস (৩৫)। তিনি বনানীর ১৮ নং সড়কের ৭৬ নং বাসার বøক এ-তে থাকতেন।
গতকাল বনানীতে সরেজমিন দেখা যায়, আগুনে এফ আর টাওয়ারের তিনটি ফ্লোর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ভবনের সপ্তম, অষ্টম ও নবম তলা একেবারে পুড়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভবনের সপ্তম তলা থেকেই আগুন লাগে। এই ভবনের বেজমেন্ট পুরোটাই গ্যারেজ। সেখানে এখনো কয়েকটি গাড়ি পার্কিং করা আছে। এখানে আগুন লাগেনি। ভবনের প্রথমটি বেজমেন্ট। প্রথম তলা থেকে ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত তেমন ক্ষতি হয়নি। এই তলাগুলোয় অবস্থিত বিভিন্ন অফিসের কর্মীরা সিঁড়ি দিয়েই বের হয়ে নিচে নেমে এসেছে।
গতকাল তল্লাশিতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুজন বলেন, মূলত সপ্তম, অষ্টম ও নবম তলা, এই তিনটি ফ্লোর আগুনে পুড়ে গেছে। এই তিনটি ফ্লোরের কোনো কিছুই আগুন থেকে রক্ষা পায়নি। ফ্লোরগুলোর বৈদ্যুতিক তারগুলো আগুন ছড়িয়ে দিয়েছে বলে তারা মনে করছেন। যদিও এখন পর্যন্ত আগুন লাগার প্রকৃত কারণ জানা যায়নি।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, তারা মনে করছেন শর্ট সার্কিট থেকে এই আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। তবে এটা তদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।
যেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে সেই অষ্টম তলায় রেস্টুরেন্ট ছিল মনে বলে প্রথমে মনে করা হলেও সেখানে রেস্টুরেন্ট নেই। ভবনের প্রতিটি ফ্লোরেই প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের অফিস। প্রতিটি ফ্লোরেই প্রচুর সংখ্যক কম্পিউটার ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম রয়েছে। এগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
তবে পোড়া এফ আর টাওয়ারের দায়িত্ব পুলিশের কাছে হস্তান্তরের আগে সব ফ্লোরে তল্লাশি শেষ করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। নতুন করে আগুন জ্বলে ওঠার আশঙ্কা না থাকায় ভবনটি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার শাহজাহান সিকদার।
গতকাল দুপুরে ভবনটির সামনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বেলা ১টার দিকে সার্চ অপারেশন শেষ হয়েছে। পর্যালোচনা করে দেখেছি, নতুন করে আগুন লাগার কোনো আশঙ্কা নেই। অগ্নিকান্ডের এ ঘটনায় গতকাল ভবনের ভেতরে নতুন করে আর কারো লাশ পাননি ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
ভবনটির অবস্থা এখন ঝুঁকিপূর্ণ কি না, তা চিহ্নিত করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে শাহজাহান সিকদার বলেন, ওই কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ ছাড়াও পুলিশের ক্রাইম সিন ইউনিটের সদস্যরা গতকাল সকাল থেকে এফআর টাওয়ারের বিভিন্ন ফ্লোরে চূড়ান্ত তল্লাশি অভিযানে অংশ নেন।
ভবনটির সামনে-পেছনে পুলিশ মোতায়েন
এদিকে ভবনটির সামনে ও পেছনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রেণে ভবনটি দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ছাড়া আর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সকালে ভবনটিতে ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, পুলিশের কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা প্রবেশ করেন। তারা ঘুরে দেখেন এবং অভিযানে থাকা ফায়ারকর্মীদের নির্দেশনা দেন।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ জানান, পুলিশ ২১টি টিমের সহযোগিতায় ভবনের ভেতরে কাজ করবে। প্রত্যেকটি টিমে একজন এসআই, একজন এএসআইসহ ৯ জন করে পুলিশ সদস্য থাকবে। সব কিছু শেষে ভবনটিতে অগ্নিকান্ডের দায়ীদের বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া নেওয়া হবে।
ভবনটিতে এর আগেও আগুন লেগেছিল
এবার আগুন লাগার আগে ২০০৮ সালের ৩১ আগস্ট ভবনটিতে আরও একবার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ওইবার ভবনের বেজমেন্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল। সেই সময়েও এফআর টাওয়ারের অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৮ সালের ৩১ আগস্ট এফ আর টাওয়ারের বেজমেন্টে পার্কিং করা একটি গাড়িতে আগুন ধরে। এতে পুরো বিল্ডিং কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় যায়। ২৪ তলা এই ভবনে আটকে পড়া অন্তত ২০ জন আতঙ্কিত হয়ে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে আহত হন। ভবনের ভেতর আটকা পড়েন অন্তত ১০০ জন। দুই ঘণ্টার চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।
ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, গাড়ির সিএনজি গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে গ্যাস লিক করে আগুনের সূত্রপাত হয়। এ বিষয়ে গতকাল ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্ল্যানিং) সিদ্দিক মো. জুলফিকার আহমেদ স্পষ্ট করেই বলেন, এফআর টাওয়ারে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেই।
রাজউকের নকশা না মেনে ভবন নির্মাণ
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বলেন, আমরা এফআর টাওয়ারের ফাইল দেখেছি। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ভবনটির নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়। তাতে ১৮ তলা ভবন হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন দেখছি ভবনটি ২৩ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনটি নির্মাণের সময় নকশার আরও অনেক বিচ্যুতি করা হয়েছে। এই নির্মাণ কাজের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের খোঁজা হচ্ছে।
আব্দুর রহমান আরো জানান, ভবন মালিক ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রæয়ারি আমাদের কাছে আরো একটি নকশা পেশ করেন। আমরা খবর নিয়ে দেখি, রাজউকে যে নকশা সংরক্ষিত আছে তার সঙ্গে মিল নেই। পরে সেই ঘটনায় ২০০৭ সালের দিকে তদন্ত করে রাজউক। তদন্তে মূল নকশার ব্যত্যয় ও বিচ্যুতি ঘটিয়ে নির্মাণের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।
এদিকে গতকল ভবনটি পরিদর্শনে এসে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম অগ্নিকান্ডে নিহতের ঘটনাকে হত্যাকান্ড বলে মন্তব্য করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার মতে, এটা দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকান্ড। এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবো। তিনি বলেন, এফআর টাওয়ারের অনুমোদন দেয়া সেই সময়ের রাজউক চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে খোঁজা হচ্ছে। যেসব প্রকৌশলী ভবনটি নির্মাণের সঙ্গে জড়িত তাদের লাইসেন্স বাতিলসহ ফৌজদারি মামলা করা হবে। এছাড়া প্রয়োজনে ভবনটি ভেঙে ফেলা হবে বলেও তিনি জানান।
রাজধানীর ৮ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৫৯
বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুনেরর ঘটনায় প্রায় শ’খানেক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। এছাড়া বর্তমানে আহত ও অসুস্থ হয়ে ৫৯ জন রাজধানীর ৮টি হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুম থেকে জানা গেছে।
কন্ট্রোল রুমের কর্তব্যরত কর্মকর্তারা বলেন, এফ আর টাওয়ার থেকে উদ্ধারের পর মোট ৯৫ জনকে রাজধানীর ৮টি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার মধ্যে ৫৯ জন এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। চিকিৎসাধীন ৫৯ জনের মধ্যে ঢামেকে ৩ জন, কুর্মিটোলা হাসপাতালে ১২ জন, সিএমএইচ-এ ৬ জন, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৩ জন, ইউনাইটেড হাসপাতালে ২৩ জন, এ্যাপোলো হাসপাতালে ৬ জন, বনানী ক্লিনিকে ১ জন ও শাহাবুদ্দিন মেডিক্যালে ৫ জন ভর্তি রয়েছেন।
ডিএনএ নমুনা নিতে মর্গে সিআইডি দল
রাজধানীর বনানীর বহুতল ভবন এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় নিহত অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহে ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে এসেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা (সিআইডি)। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার পর সিআইডির এই দল আসে।
দলটির নেতৃত্বে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুস সালাম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বনানীর এফ আর টাওয়ারের অগ্নিকান্ডে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি, তাদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করব আমরা। একই সঙ্গে স্বজনদের নমুনাও সংগ্রহ করা হবে। আবদুস সালাম জানান, চুরিহাট্টায় আগুনের ঘটনায় নিহত অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের যেভাবে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল, একইভাবে বনানীর আগুনের ঘটনায় নিহত অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে। মূলত তাদের লাশ শনাক্ত করার জন্যই এই কার্যক্রম।
দুর্ঘটনায় নিরাপত্তার দায় ভবন মালিকের
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম গতকাল এফআর টাওয়ার পরিদর্শনে এসে বলেন, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে অবশ্যই নিরাপত্তার দায়িত্ব ভবন মালিককে নিতে হবে।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন ও রাজউকের কাজের মধ্যে সমন্বয়ে নই। আর এ সমন্বয়হীনতার কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। এখন থেকে আমরা অ্যাকশনে নামব। মেয়র বলেন, সিটি করপোরেশন বহুতল ভবনের আনুষঙ্গিক কাগজপত্র রাজউকের কাছে চেয়ে পাঠিয়েছে। ১০ দিনের মধ্যে সব ভবনকে কাগজপত্র দিতে হবে। এসব হাতে পেলে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান শুরু করবে। অবশ্যই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অফিসগুলোকে জানতে হবে তাদের ভবনে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা আছে কি না। তিনি বলেন, এখন থেকে নিজের নিরাপত্তা নিজেরা বিবেচনা করে দেখবেন। অফিসে ঢোকার আগে আগুন লাগলে বের হওয়ার বিকল্প পথ থাকার বিষয়টি দেখে নিন।
আইইবির তদন্ত কমিটি গঠন
আগুনের ঘটনা তদন্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আইইবির জনসংযোগ কর্মকর্তা এ কে এম ইমরান হোসাইন জানান, আইইবির সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. নুরুল হুদাকে আহ্বায়ক এবং আইইবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক (একাডেমিক ও আন্তর্জাতিক) প্রকৌশলী কাজী খায়রুল বাশারকে সদস্য সচিব করে গতকাল একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিকে বনানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাÐের ফলে পুড়ে যাওয়া ভবন এবং তৎসংলগ্ন আশপাশ ভবন সরেজমিন পরিদর্শনপূর্বক প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, প্রকৌশল ও কারিগরি বিষয়াদি রীক্ষা-নিরীক্ষা করে অগ্নিকাÐের যথাযথ কারণ অনুসন্ধান ও সুপারিশসহ একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আগামী ৭ দিনের মধ্যে আইইবির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে।

 

 



 

Show all comments
  • Imran Khan ৩০ মার্চ, ২০১৯, ১২:৫১ এএম says : 0
    আস্তে আস্তে গনভবন আর বঙ্গভবনের দিকে যাচ্ছে নাতো
    Total Reply(0) Reply
  • Mahedi H ALik ৩০ মার্চ, ২০১৯, ১২:৫২ এএম says : 0
    যে দেশে ২২ তলা বিল্ডিংয়ের আগুন নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র নাই, সেই দেশে ২২ তলা বিল্ডিং তৈরি অনুমতি দেওয়া হবে কেন?
    Total Reply(0) Reply
  • Shazia Jahan Tonni ৩০ মার্চ, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
    আগুন লাগার পর জানা যাবে ভবনের নকশায় ত্রুটি। দুর্ঘটনার পর জানা যাবে গাড়ির ফিটনেস ছিল না।
    Total Reply(0) Reply
  • Monir Khan ৩০ মার্চ, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
    আর কতো আগুন লাগলে আর মানুষ মারা গেলে . আগুন নিয়ন্ত্রণে সরঞ্জাম ও মানুষ রক্ষার যন্ত্র আসবে আমাদের এ বাংলাদেশ ।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Kaium ৩০ মার্চ, ২০১৯, ১২:৫৪ এএম says : 0
    ১০-১১ বছর ধরে করা এক পদ্মা সেতু, দুই মেট্রো রেল, তিন স্যাটেলাইট, চার মহাসড়ক ফোর লেন এর উন্নয়ন জিকির বাদ দিয়ে মানুষের জীবন এর অপ্রত্যাশিত মৃত্যু ঝুঁকি কমানোর কাজ করেন।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃজাফর ইকবাল ভূঁইয়া ৩০ মার্চ, ২০১৯, ১২:৫৪ এএম says : 0
    এখনো মহামূল্যবান বানীটা জাতী শুনতে আগ্রহ ভরে বসে আছে শেখ হাসিনার মূখ থেকে,সেটা হলো বিএনপি জামাত আগুন সন্ত্রাসী করছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Dalia Gharami ৩০ মার্চ, ২০১৯, ১২:৫৪ এএম says : 0
    ওদের কেউ কোনো ফোন দিয়ে বললো না আগুন উপরে লাগেনি তোমরা ছাদে চলে যাও ,
    Total Reply(0) Reply
  • Tofazzal Hoque Talib ৩০ মার্চ, ২০১৯, ১২:৫৪ এএম says : 0
    এই ছবিগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশে মানুষের জীবন কতোটা মূল্যহীন!!! এ জীবনে কল্পনাও করিনি কখনো এমন ছবি দেখতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Moslem Sorker ৩০ মার্চ, ২০১৯, ১২:৫৫ এএম says : 0
    আমি বুজি না।।।এখানে কোনো ভবন তো ভেজ্ঞে যায় নি।। কিন্তু,,,মিনিস্টার রা শুধু ভবন বানানো নিয়ে দোশারোপ করছে কেন?? এখানে কথা হবে যেহেতু আগুন লাগছে,, কিভাবে খুব তারাতারি আগুন নেভানো যায় সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Afnan Ahmed ৩০ মার্চ, ২০১৯, ১২:৫৬ এএম says : 0
    জনসংখ্যা জনসম্পদ বলে বলে আরো বেশি জন্ম দেন। অতি জনসংখ্যাই ঢাকাকে আজ মৃত্যুনগরী বানিয়েছে..যদি সরকার জনসংখ্যার রাশ টেনে ধরতে না পারে খোদার কসম আমি পারমাণবিক হামলা করে বাংলাদেশের অর্ধেক মানুষ নিশ্চিহ্ন করে দেব..
    Total Reply(0) Reply
  • Amirul Islam Rana ৩০ মার্চ, ২০১৯, ১২:৫৬ এএম says : 0
    বনানীর মত রাস্তার পাশে গায়ে গা লাগিয়ে এইসব বিল্ডিং বানানো হলো কিভাব? কে বা কাহারা অনুমোদন দেন এসব বিল্ডিং বানানোর জন্য??
    Total Reply(0) Reply
  • Prince Emon ৩০ মার্চ, ২০১৯, ১২:৫৬ এএম says : 0
    সরকার বলে উন্নয়ন উন্নয়ন মানুষের নিরাপত্তা না থাকলে কিসের উন্নয়ন আমার 4 জি 5জি চাইনা আমার পানি রাস্তা আমরা মানুষের নিরাপত্তা চাই...???
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Asif Shahriar ৩০ মার্চ, ২০১৯, ১২:৫৭ এএম says : 0
    আমরা তো আসলেই ডিজিটাল দেশে বাস করছি !!:যেখানে আমরা শত মানুষের পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য , গাড়ির তলে পৃষ্ট হওয়ার র্দৃশ্য #লাইভে দেখতে পারছি !! ইত্যাদিইত্যাদি ।:*এমন ডিজিটাল চাই না । আমরা আমাদের জীবণের নিরাপত্তা চাই ।
    Total Reply(0) Reply
  • ash ৩০ মার্চ, ২০১৯, ৮:৩১ এএম says : 0
    BANGLADESHER SHOB CHEA BORO SHOMOSHA KONO EDDOK E CHOLOMAN RAKTE PARE NA, DUI DIN PORE E TENIE JAY PROSHASHON !! SHOB KHETREI AKE OBOSTA !!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অগ্নিকান্ড


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ