পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ৩৬ দিনের মাথায় আগুনে পুড়ল অভিজাত এলাকা বনানীর বহুতল ভবন এফআর টাওয়ার। গতকাল দুপুর পৌনে ১টার দিকে লাগা অগ্নিকান্ডেরঘটনায় রাত ১০টা পর্যন্ত ২৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুম এ সংখ্যা ১৯ বলে জানায়। নিহতের সংখ্যা বেড়ে চলছে। অগ্নিকান্ডের পর ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট প্রায় পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ভবনটিতে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য সংস্থার ৫টি হেলিকপ্টার চেষ্টা চালায়। ভবনের ভেতরে ডেকোরেশনগুলো বেশিরভাগই ফোম ও সিনথেটিক ফাইবার উপাদানের হওয়ায় এ আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, এফআর (ফারুক রূপায়ন) নামের ভবনটিতে দ্যা ওয়েভ গ্রুপ, হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস, আমরা টেকনোলজিস লিমিটেড ছাড়াও অর্ধশতাধিক অফিস রয়েছে। অগ্নিকান্ডের পরপর সেনাবাহিনী, বিমান ও নৌ-বাহিনীর সদস্যরা আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করে। আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বক্ষণিক তদারকি করেন ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। একই সাথে অগ্নিদগ্ধ ও আহতদের সরকারিভাবে চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সন্ধ্যার দিকে আগুন প্রাথমিক নিয়ন্ত্রণে এলেও রাত সোয়া ৮টার দিকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোরে প্রবেশ করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা একের পর এক লাশ বের করে নিয়ে আসেন। রাত ১০টায় নিহতের সংখ্যা ২৫ বলে জানা গেছে। তবে ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুমের মতে ১৯ জন। আহতের সংখ্যা ৭০ ছাড়িয়েছে বলে উদ্ধারকর্মীরা জানান। আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চলবে।
বনানী থানার ওসি ফরমান আলী বলেন- নিহতদের মধ্যে সাতজনের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন- পারভেজ সাজ্জাদ (৪৭), আমেনা ইয়াসমিন (৪০), মামুন (৩৬), শ্রীলঙ্কার নাগরিক নিরস চন্দ্র, আবদুল্লাহ আল ফারুক (৩২), মাকসুদুর (৬৬) ও মনির (৫০)।
গতকাল ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, ভবনের কামাল আতার্তুক রোড থেকে গুলশানগামী সড়ক, মূল রাস্তাসহ পুরো দুই রোডে মানুষ আর মানুষ। ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাঁশি বাজিয়ে ও অনুরোধ করেও তাদের সরাতে পারেননি। পাঁচ শতাধিক সেনা সদস্য, পুলিশ ও উদ্ধারকর্মীরা উদ্ধার কাজে অংশ নেন। এফ আর টাওয়ারের নবম তলায় প্রথম অগ্নিকান্ড শুরু হয়। এর পর পরই আগুন ছড়িয়ে অন্যান্য ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ বের হতে পারলেও অনেকে বিভিন্ন তলায় আটকা পড়েন। আগুনের লেলিহান শিখা বাড়লে আতঙ্কিতরা ওপরের তলাগুলোতে আশ্রয় নেন। কেউ কেউ আবার ভবনের ছাদে উঠেন এবং পাশের ভবনে নামার চেষ্টা করেন। কয়েকজন বিভিন্ন ধরনের তার ধরে নামার চেষ্টা করেন। আটকা পড়াদের অনেকে ভবনের ভাঙা কাচের ভেতর দিয়ে হাত বের করে উদ্ধারের জন্য সাহায্য চান।
ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক (ডিডি) দেবাশীষ বর্ধন সাংবাদিকদের বলেন, ভবনিটিতে প্রচুর দাহ্য পদার্থ রয়েছে। ভেতরে ডেকোরেশনগুলোর বেশিরভাগই ফোম ও সিনথেটিক ফাইবার উপাদানের। যার কারণে সেগুলো পুড়ে খুব ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। এতে কাজ করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। আগুন নেভাবে আমাদের ২৫টি ইউনিট কাজ করে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের উদ্ধার কাজে ব্যবহৃত গাড়িগুলো ডিজিটাল, ম্যানুয়াল নয়। এগুলো সেট করতে কিছুটা সময় লাগে। আমরা শতাধিক লোকজনকে ভবন থেকে উদ্ধার করেছি। আহত অনেককেও উদ্ধার করতে পেরেছি।
গতকাল রাত ১০টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্ল্যানিং) সিদ্দিক জুলফিকার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আগুনের ঘটনায় এক শ্রীলঙ্কান নাগরিকসহ অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তিনি বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ভেতরে তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে উদ্ধার কাজে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। প্রতিটি ফ্লোরেই সার্চ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৬৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মী আকরাম হোসেন জানান, ভবনের আটতলা থেকে একটি মেয়ে তাকে ধরে ধরে নামার চেষ্টা করছিল। তখন হাত ফসকে মাটিতে পড়ে যায়। এর পর পর আরও দুইজন পুরুষ নিচে পড়ে যায়। সেখান থেকে তাদের তিনজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এতে মেয়েটার পুরো শরীরে কাচ লেগে গুরুতর আহত হয়।
আগুনের সময় আটকা পড়া অনেকেই ২১ তলা ভবনের ছাদে আশ্রয় নেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের ক্রেন লেডারের (যন্ত্রচালিত মই) সাহায্যে তাদের সেখান থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়। আর আগুন নেভানোর সুবিধার জন্য আশপাশের রাস্তাগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। আগুন নেভাতে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার কাজ করছে। পাশাপাশি সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে।
এফ আর টাওয়ারের ১৪-তলায় একটি প্রপার্টিজ অফিসের কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, আগুনের খবর পেয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার চেষ্টা করি। কিন্তু ততক্ষণে সিঁড়িতেও দেখি ধোঁয়া। পরে ১৪-তলা থেকে ছাদে গিয়ে পাশের আওয়াল সেন্টারে চলে যাই। সেখান থেকে নেমে আসি। আমি এয়ারফোর্সের কমিশন্ড অফিসার বলে আমার পক্ষে এটা সম্ভব হয়েছে। তবে আমার সঙ্গে ছাদে থাকা আরও তিনজনকে দেখেছি, তারা পাশের ভবন পার হতে পারেননি বলে জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, আগুনের খবরে হুড়োহুড়ি আর আটকে পড়াদের আর্তনাদের মধ্যেই কয়েকজন ভবনের শরীর ঘেষে থাকা ক্যাবল (তার) ধরে নামতে থাকেন। কিছুদূর নিচের দিকে আসার পর কয়েকজন সরাসরি নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন। অপরদিকে আগুন নেভাতে দমকল কর্মীদের সঙ্গে ভবনের ওপরে আকাশে হেলিকপ্টারের টহল এবং বালি, গ্যাস ও পানি দিতে দেখা গেছে।
আরিফ নামে একজন বলেন, আগুন লাগার সময় আমাদের অফিসে ৭-৮ জন ছিলাম। আমরা পাঁচবার সিঁড়ি দিয়ে নামার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ধোঁয়া আর আগুনের তাপের কারণে নামতে পারছিলাম না। চারদিকে অন্ধকার ছিল। আমরা আবার দৌড়ে অফিসের ভেতরে ঢুকে যাই। বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। অফিসের গামছা আর তোয়ালে ভিজিয়ে মুখের ওপর ধরে রেখেছি সবাই। আর কিছুক্ষণ থাকলে হয়তো বাঁচতাম না। একপর্যায়ে গøাস ভেঙে হাতে ইশারা করতে থাকলে ফায়ার সার্ভিসের ক্রেন জানালার কাছে যায়। তারপর ক্রেন দিয়ে প্রথমে আমি আর ইকবাল নেমে আসি। অন্যরা পরে নামতে পেরেছে কিনা তা বলতে পারছি না। বনানীর স্টার কাবারের পাশে ফুটপাতে আরিফ তার স্ত্রী স্বপ্নার সঙ্গে বসে কথা বলছিলেন। তারা দু’জন একে-অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকেন। সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পরে তাদের পরিবার ও সহকর্মীরা পরে তাকে নিয়ে চলে যান। আবুল বাশার নামে আরেক ব্যক্তি জানান, তার অফিস ছিল ১৯ তলায়। তিনি ছাদে গিয়ে পাশের ভবনে চলে যান। পরে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসেন বলে জানান তিনি।
এফ আর টাওয়ারের আগুনের প্রভাবে দেশের প্রথম বেসরকারি রেডিও স্টেশন রেডিও টুডে (এফএম ৮৯.৬) ও দুরন্ত টিভির নিয়মিত স¤প্রচার সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও স¤প্রচার শুরু হবে বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এফ আর টাওয়ারের পাশেই আওয়াল সেন্টারের ২০ তলায় রেডিও টুডে স্টেশনটি। আর পাশের আরেকটি ভবনেই দুরন্ত টেলিভিশন সেন্টার। রেডিও টুডের হেড অব নিউজ ইমামুল হক শামীম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আওয়াল সেন্টার থেকে রেডিও স্টেশনটির যেসব অনুষ্ঠান স¤প্রচার করা হয় মূলত সেগুলো বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও স¤প্রচার শুরু হবে।
অগ্নিকান্ডের পর ভবনে নানা কাজে থাকা ব্যক্তিদের স্বজনেরা ভিড় জমিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটায় হাসপাতালে শ্রীলঙ্কার নাগরিক ইন্ডিকা মারসিলিন (৪৬) চিকিৎসা নিতে আসেন। ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হন। ইন্ডিকা মারসিলিনকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হয়। তিনি হাতে আঘাত পেয়েছেন বলে হাসপাতালের চিকিৎসগণ জানিয়েছেন। এদিকে স্বাস্থ্য অদিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বনানীর আগুনে দগ্ধ ও আহতদের চিকিৎসার জন্য সব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফোন করে ঢাকা শহরের সব হাসপাতালকে বিনামূল্যে আহত রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য বলেছেন। আমি ফোন করে সব হাসপাতালকে তা জানিয়েছি।
ভবনটিতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না
এফআর টাওয়ারের অগ্নিনির্বাপণের কোন ব্যবস্থা ছিল না বলেই জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। গতকাল সন্ধ্যায় একে প্রস ব্রিফিংয়ে ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক দিলীপ কুমার ঘোষ বলেন- ভবনের জরুরি বহির্গমন ব্যবস্থায় সমস্যা ছিল। বিফ্রিংকালে তিনি নিহতের সংখ্যা ১৯ আর আহত ৭০ বলে জানান।
এদিকে, সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফায়ারের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) শামীম হাসান বলেন, একটি উঁচু ভবনে অগ্নি নিরাপত্তার জন্য যে ব্যবস্থা থাকা দরকার, তা এই ভবনটিতে ছিল না। আগুন নেভাতে গিয়ে আমরা বারবার বাধার সম্মুখীন হয়েছি। এ ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের কোনো ধরনের গাফিলতি ছিল না। আগুনের সূত্রপাত সপ্তম বা অষ্টম তলা থেকে হয়েছে জানিয়ে শামীম হাসান বলেন, আগুন লাগার কারণ তদন্ত ছাড়া বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া পৃথকভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করে।
ভেতরের অবস্থা জানতে ড্রোন ব্যবহার
অগ্নিকান্ডের দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টার পর বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে তখনো ধোঁয়া বের হচ্ছিল ভবন থেকে। ধোঁয়ার কারণে ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে পারছিলেন না ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ উদ্ধারকারীরা। এ অবস্থায় ভবনের ভেতরে অগ্নিকান্ডে আহত কিংবা নিহত কেউ আছেন কিনা, সেটি জানার জন্য ড্রোন ব্যবহার করা হয়। দেবাশীষ বর্ধন আরও বলেন, আগুনের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটি দ্রæত কাজ শুরু করবে।
কুর্মিটোলা হাসপাতালে ৪১ রোগী
বনানীর অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৪১ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। এর বাইরে আরো কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ জন আহত ব্যক্তি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মো. রশিদ-উন-নবী বলেন, এইসব রোগীদের সবাই ধোঁয়ার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এখানে গুরুতর আহত কোনো রোগী নেই। অর্থাৎ আইসিইউতে কোনো রোগী নেই। আমরা যে পরিমাণ রোগী আসার আশঙ্কা করেছিলাম সে পরিমাণ আহত লোক বা সে পরিমাণ হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।
কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, রোগীদের অতিরিক্ত ধোঁয়া নিঃশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করার ফলে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া কয়েকজন রোগীর গায়ে আগুনের আচ লেগেছে, কিন্তু পোড়েনি।
আগুন নেভাতে পানির সংকট
অগ্নিকান্ডের পর ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট কাজ করলেও পানির সংকটের কারণে আগুন নেভানোর কাজ ব্যাহত হয়। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেন। একপর্যায়ে পানি সংকট দেখা দেয়ায় আগুন নেভানোর কাজ ব্যাহত হয়। বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলের লাইভেও পানি সংকটের বিষয়টি প্রচার করা হয়। তবে ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, আগে পানির সমস্যা ছিল। এক ঘন্টার মধ্যেই সমাধান হয়ে যায়।
হাত বাড়িয়ে সাহায্যের আকুতি
নবম তলায় আগুন শুরু হওয়ার পর অনেকে আতঙ্কে ওপরের তলাগুলোয় আশ্রয় নেন। কেউ কেউ ছাদে উঠে পাশের ভবনে গিয়ে নামার চেষ্টা করেন। কয়েকজন বিভিন্ন ধরনের তার ধরে নামার চেষ্টা করেন। আর যারা ভবনটির ভেতর আটকা পড়েন তারা ভাঙ্গা কাচের ভেতর দিয়ে হাত বের করে সাহায্যের জন্য আকুতি জানাতে দেখা গেছে। সেজুতি স্বর্ণা নামের একটি ফেসবুক ওয়াল থেকে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা একজন বলছেন, আমাদের জন্য সিঁড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তা না হলে ধোঁয়ায় আমরা মারা যাবো। আরেকটি ভিডিওতে তিনি জানালা দিয়ে নিচের রাস্তা দেখিয়ে বলছেন, আমরা ভেতরে আটকা।
নিখোঁজদের খোঁজে স্বজনদের ভিড়
বনানীর এফআর টাওয়ারের আগুন লাগার পর ওই ভবনে নানা কাজে থাকা ব্যক্তিদের স্বজনেরা ভিড় জমিয়েছেন ওই ভবনের নিচে ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ভিড়ও বাড়তে থাকে।
বিকেলে দেখা যায়, ঢামেকের সামনে অনেকেই ভিড় করেছেন। ওই ভবনে থাকা আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগে ব্যর্থ হয়েই মেডিকেলে এসেছেন তাঁরা। তারিকুন্নাহার নামে এক নারী বলেন, তাঁর ভাই আনজীর সিদ্দিক ভবনের ১৮ তলায় একটি অফিসের কর্মকর্তা। বেলা একটার দিকে আনজীরের সঙ্গে শেষবার কথা হয়। এরপর আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তার মতো আরও অনেকের স্বজনরা নিখোঁজদের খোঁজে এসে কান্নাকাটি করছিলেন।
হেলিকপ্টারে উদ্ধার তৎপরতা
হেলিকপ্টারে উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয় বেলা ৩টা ৪৮ মিনিটে। ভবনের ছাদ থেকে সেনা বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধার করা হয় আটকে পড়াদের। এর কিছুক্ষণ হেলিকপ্টারটি ওই এলাকা রেকি করে যায়। পরে ছাদের ওপর শূণ্যে অবস্থান করে একটি দড়ি ফেলে। সেই দড়ি বেয়েই আটকে পড়া একজন হেলিকপ্টারে ওঠেন। অন্যদিকে, আগুনে নেভাতে নৌবাহিনীর দু’টি হেলিকপ্টার ঘটনাস্থলে আসে। হেলিকপ্টারগুলো ঘটনাস্থলে চক্কর দেয়। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর কয়েকটি ইউনিট আগুন নেভাতে এবং আটকে পড়াদের উদ্ধারে জীবনের ভূমিকা রাখেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।