বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
রাস্তা ঢালাইয়ের কাজ চলছিলো তাই গাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে না, এলাকাবাসী পুলিশকে এমন জানাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন ফতুল্লা মডেল থানার এসআই ফাহেয়াত উদ্দিন রক্তিম। এটুকু ঘটনাতেই কোমরে থাকা পিস্তল বের করে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলিও ছোড়েন তিনি এবং তার সাথে থাকা এক কনস্টেবল আরও এক রাউন্ড গুলি ছোড়ে!
মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) বিকেল চারটার দিকে ফতুল্লার কাশিপুর ইউনিয়নের চর নরসিংপুর এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে। তবে, পুলিশের দাবি সন্ত্রাসীরা বিনা উস্কানিতে তাদের উপর হামলা চালিয়েছে। আত্মরক্ষার্থে তারা গুলি ছুড়েছেন।
এ ঘটনায় জান্নাত নামে গর্ভবতী এক নারীসহ চারজন আহত হয়েছে। অন্যান্যরা হলেন, জান্নাতের স্বামী সোহেল, শিক্ষার্থী জিসান এবং বৃদ্ধ আলাউদ্দিন পাঠান। তারা চর নরসিংপুরের বাসিন্দা। এছাড়ারও ঘটনাস্থল থেকে সোহেল নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। সে ওই এলাকার মৃত. আলী হোসেনের ছেলে।
ঘটনার সংবাদে এলাকায় ছুটে আসেন ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম সাইফউল্লাহ বাদল ও প্যানেল চেয়ারম্যান আইয়ূব আলী। তারা স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানতে পারেন, যা ঘটেছে তা পুলিশ অতিরঞ্জিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, তখন বিকেল চারটা। ফতুল্লা থানার এসআই রক্তিম একটি সিএনজিযোগে তিনজন কনস্টেবল নিয়ে চর নরসিংপুর আসেন। কিন্তু ওই রাস্তায় আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ চলছিলো। ফলে রাস্তার মোড়ে বাঁশ দিয়ে আটকানো ছিলো। রাস্তার মোড়ের বাঁশ সরিয়ে যেতে চায় পুলিশবহনকারী সিএনজিটি। তখন তাকে স্থানীয়রা ওদিকে গাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে না বলে জানান। কিন্তু তিনি কোনো নিষেধ শুনবেন না। ওদিকে যাবেনই। এ নিয়ে স্থানীয়দের সাথে বাগবিতন্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে উঠেন রক্তিম। কম যায়নি এলাকাবাসীও। এমন পরিস্থিতিতে এলাকার আরও লোকজন এসে জড়ো হন। এবং পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে।
এমন সময় এসআই রক্তিম উত্তেজিত মানুষজনকে ছত্রভঙ্গ করতে কোমর থেকে পিস্তল বের করে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি করেন এবং কনস্টেবল জাহাঙ্গীর আলম তার শর্টগান থেকে এক রাউন্ড ফাকা গুলি ছুড়ে। এবং ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজনকে আটকের চেষ্টা চালালে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এতে গর্ভবতী জান্নাতসহ চারজন আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে জান্নাতের আহত স্বামীকেও আটক করে পুলিশ।
তবে এসআই রক্তিম ঘটনাটি ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘সিএনজি যোগে তিন কনেষ্টেবল নিয়ে চর কাশিপুর এলাকায় ডিউটি করছিলাম। তখন চর কাশিপুর তিন রাস্তার মোড় দিয়ে অতিক্রম করার সময় জুয়েল নামে এক যুবক সড়কের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকায় সিএনজিযোগে যেতে পারছিলাম না। এতে ওই যুবককে সরে দাঁড়াতে বললে সে আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এতে আমি তাকে বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করি। কিন্তু ওই যুবক আমার বুঝ না মেনে ফোন করে লোকজন এনে আমাদের উপর ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের ইটপাটকেল থেকে রক্ষা পেতে সড়কের এক পাশে কনেষ্টবলদের নিয়ে আশ্রয় নিলে হামলাকারীরা আমাদের ঘিরে ফেলে এবং মারধর শুরু করে। এসময় আত্মরক্ষার্থে হামলাকারীদের ধাক্কা দিয়ে দূরে গিয়ে আমার পিস্তল থেকে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ি। তখন সন্ত্রাসীরা কিছুটা দূরে সরলে কনেস্টেবল জাহাঙ্গীর আলমের শর্টগান থেকে এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এতে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় সোহেল নামে একজনকে আটক করি। সন্ত্রাসীদের হামলায় আমিসহ তিন কনস্টেবল আহত হয়েছি। প্রত্যেকে শহরের খানপুর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি।’
এদিকে ওই ঘটনার পর থেকে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্থানীয় ইউনিয়ণ পরিষদ চেয়ারম্যান ও ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফউল্লাহ বাদল ও প্যানেল চেয়ারম্যান আইয়ূব আলী।
সাইফউল্লাহ বাদল বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। লোকজনের সাথে কথা বলেছি। পরে একজনকে আটক করেছে শুনে থানাতেও গিয়েছি। আটক ব্যক্তি এখনও থানায় আছে। আমি ক্লান্ত থাকাতে চলে এসেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যতটুকু বুঝেছি ব্যাপারটি ভুল বোঝাবুঝির কারণে হয়েছে।’
এ ব্যাপারে জানতে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি শাহ মোহাম্মদ মঞ্জুর কাদের বলেন, যারা সামান্য বিষয় নিয়ে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে মারধর করে তারা সাধারণ নয়। এদের দ্বারা এলাকাবাসী নির্যাতিত হয়। এবিষয়ে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।