নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) এক কান্ড ঘটিয়ে ক্রিকেটপাড়ায় উত্তাল ছড়িয়ে দিয়েছেন ভারতের স্পিনার ও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব দলের অধিনায়ক রবীচন্দ্রন অশ্বিন। রাজস্থান রয়্যালসের জশ বাটলারকে যেভাবে আউট করেছেন তাতে বেশ সমালোচিত হয়েছেন এই স্পিনার।
কি হয়েছিল রাজস্থান-পাঞ্জাবের ম্যাচে? গতপরশু জয়পুরে আইপিএলের চতুর্থ ম্যাচে রাজস্থান ইনিংসের ১৩তম ওভারের শেষ বলে এই ঘটনাটি ঘটে। জয়ের জন্য তখন ৭৭ রান দরকার ছিল রাজস্থানের। আর হাতে ছিল ৯টি উইকেট। ৬৯ রানে অপরাজিত থাকা জশ বাটলার তখন ননস্ট্রাইকে। তখনই বল করতে এগিয়ে গিয়ে বল না করে উল্টো স্ট্যাম্প ভেঙে দিলেন তিনি। ননস্ট্রাইকে থাকা বাটলারকে উইকেট ছেড়ে বের হতে দেখেই এমন কান্ড করে বসলেন তিনি।
তাতে অবাক হন বাটলার। আর মাঠে থাকা আম্পায়ার সহযোগিতা চাইলেন থার্ড আম্পায়ারের কাছে। শেষ পর্যন্ত সেটাকে আউট ঘোষণা দেন আম্পায়ার। তাতেই গোলযোগ শুরু হয়। বাটলার ও অশ্বিনের মধ্যে শুধু হয় ঝামেলা। খেলা শেষে অশ্বিনের সঙ্গে প্রথাগতভাবে হাত মিলিয়েছেন বাটলার, কোচ প্যাডি আপটনের অনুরোধেই তা করতে হলো তাকে।
বাটলার আউট হওয়ার পর এই ম্যাচ আর জিততে পারেনি রাজস্থান। শেষ পর্যন্ত তারা ম্যাচটি হেরেছে ১৪ রানে।
ম্যাচের সেই আউটটি নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কেউ কেউ অশ্বিনের এমন কান্ডের পর বলেছেন, নিয়ম মেনেই বাটলারকে আউট করেছেন পাঞ্জাবের অধিনায়ক। তবে অনেকেই বলেছেন, এটি ছিল তার চেতনাবিরোধী কাজ।
সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইকেল ভন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে একটি পোস্টে লেখেন, ‘যদি জশ বাটলারকে সতর্ক করা হয়ে থাকে তাহলে ব্যাপারটা ঠিক। আর যদি তাকে সতর্ক না করেই এটি করা হয় তাহলে আমি মনে করি, অশ্বিন সম্পূর্ণভাবে ভুল করেছে। এখন থেকে এটা নিয়মিত হয় কি না সেটা দেখতে হবে।’
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ঘূর্ণিতারকা শেন ওয়ার্ন তার টুইটারে লেখেন, ‘একজন অধিনায়ক ও ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব হিসেবে অশ্বিনের এই কাজটি অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রত্যেক অধিনায়কই খেলোয়াড় হিসেবে আইপিএলের মহত্ব বজায় রাখতে আইপিএল ওয়ালে সাক্ষর করেছেন। বলটি করার কোনো ইচ্ছাই ওর (অশ্বিন) ছিল না। তাই এটাকে ডেড বল বলাই উচিত ছিল। বিসিসিআই’র প্রতি বলছি, আইপিএলে এমনটা শোভা পায় না।’
অজি এই কিংবদন্তী তার আরেকটি পোস্টে লেখেন, ‘যদি বেন স্টোকস একই কাজ বিরাট কোহলির বিপক্ষে করতো, তাহলে কি সেটা ঠিক হতো! আমি খুবই হতাশ কারণ আমি ভাবতাম অশ্বিন সৎ। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব আজকে অনেক সমর্থক হারিয়েছে। বিশেষ করে তরুণদের। আশা করি, এই বিষয়ে বিসিসিআই কিছু একটা করবে।’
তবে সব ছাড়িয়ে চেতনাবিরোধী কোনো কাজ করেননি বলেই মন্তব্য করেছেন অশ্বিন। এই বিষয়ে যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘সহজাতভাবেই এটা আমি করেছি। পরিকল্পিত কিংবা এমন কিছু ছিল না। খেলার নিয়মের মধ্যে থেকেই করেছি। আর চেতনার প্রশ্নটা কেন আসছে সেটা বুঝতে পারছি না। যদি নিয়মটা থেকে থাকে। আইন যদি না ব্যবহার না করা যায়, সেটি থেকে লাভ কী?’
ক্রিকেটে মানকাড আউটের উদাহরণ নেহাত কম নয়। ১৯৪৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর সিডনি টেস্টে অস্ট্রেলীয় ওপেনার বিল ব্রাউনকে এভাবে আউট করে সেই যে রেকর্ডের পাতায় নাম লিখেছেন ভিনু মানকড় (তাঁর নামেই আউটটার নামকরণ), পরে এ অধ্যায়ে লেখা হয়েছে আরও অনেকের নাম। এ অধ্যায়ে সর্বশেষ সংযোজন অশ্বিন।
কিন্তু অশ্বিনদের বিপরীত উদাহরণও কম নেই! অনেকে মানকাডেড করার সুযোগ পেয়েও করেননি। তাদের কাছে ক্রিকেটীয় চেতনাটাই বড় হয়ে উঠেছে। ক্রিকেটীয় চেতনা বড় করে দেখতে গিয়ে দলকে চরম মূল্যও দিতে হয়েছে। তাতে কী, ক্রিকেট ইতিহাস তাদের নায়কের মর্যাদা দিয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী মানকাড আউট বৈধ। বৈধ যেহেতু, ১৯৮৭ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের এক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সেলিম জাফরকে চাইলে মানকাড আউট করতে পারতেন কোর্টনি ওয়ালশ। পাকিস্তানের শেষ বলে দরকার ছিল ২ রান। হাতে ছিল মাত্র ১ উইকেট। ওয়ালশ শেষ বলটি করতে এসে দেখেন ননস্ট্রাইকার ব্যাটসম্যান সেলিম ক্রিজ ছেড়ে অনেকটা দূর এগিয়ে গিয়েছেন। ওয়ালশ চাইলেই জাফরকে আউট করে দিতে পারতেন। কিন্তু ক্রিকেটীয় ভব্যতায় আউট না করে বরং সাবধান করে দেন। পাকিস্তান পরে ২ রান নিয়ে জিতে যায় ম্যাচটা। এ পরাজয়ের খেসারত ভালোভাবেই দিতে হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে উঠতে ব্যর্থ হয় তারা। ক্রিকেটীয় চেতনা তুলে ধরায় পরে ওয়ালশকে পুরস্কার পর্যন্ত দিয়েছে পাকিস্তান সরকার।
পাকিস্তানের ভাগ্যই বোধ হয় এমন। ২০০৩ সালের মুলতান টেস্টে একেবারে জয়ের প্রান্তে গিয়েও শেষ পর্যন্ত হারতে হয় বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের চিরদুঃখ হয়ে থাকা সেই টেস্টে ইনজামাম-উল-হকের অসাধারণ পারফরম্যান্স, রশিদ লতিফের ক্যাচ-কাণ্ড বা অশোকা ডি সিলভার বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পরও জয়ের সম্ভাবনা ছিল বাংলাদেশের। মোহাম্মাদ রফিক সুযোগ পেয়েও উমর গুলকে মানকাড না করে শুধু সাবধান করে দেন। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ম্যাচটি হেরে যায় ১ উইকেটে! মুলতান টেস্ট হারলেও ওই ঘটনায় রফিক ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন।
মানকাড করার সুযোগ পেয়েছিলেন ক্রিস গেইলও। ২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ক্যান্ডিতে ইংল্যান্ড ইনিংসের ১৪তম ওভারের শুরুতে এউইন মরগানকে মানকাড করার সুযোগ পান ক্রিস গেইল। মরগান তখন অপরাজিত ১০ রানে। গেইল আউট না করে বরং বেশ মজা করে সতর্ক করেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানকে। ৩৬ বলে অপরাজিত ৭১ রান করে এই মরগান শেষ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। ম্যাচটা ক্যারিবীয়রা জেতে ১৫ রানে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।