Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আল্লাহতায়ালা পাপের ক্ষমাকারী এবং তাওবা গ্রহণকারী

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৭ এএম

গত নিবন্ধে আমরা বলেছিলাম যে, বিভিন্ন ভুল জ্ঞান ও বিভ্রান্তির কারণে অনেকেই মনে করে আল্লাহ অত্যন্ত কঠোর, তিনি রাগরোষে ভরপুর, তাকে রাজি-খুশি করা অত্যন্ত কঠিন।
ওই সমস্ত বিভ্রান্তির কারণে সহজ সরল মুসলমানেরা সহজেই শিরকে লিপ্ত হয়। তারা যদি আল্লাহর রহমতের সীমাহীন প্রশস্ততা এবং তার ক্ষমা ও মার্জনার মহিমা সম্পর্কে অবহিত থাকত, তাহলে এই শিরকের ফাঁদে কখনও পা দিত না। সে জন্যই এ জগতের জন্য সর্বশেষ হেদায়ভতনামা কোরআন মাজীদে আল্লাহতায়ালার এ মহিমা এবং দয়া ও করুণার বৈশিষ্ট্যকে খুব বেশি পরিমাণে তুলে ধরা হয়েছে। বস্তুতই শতাধিক স্থানে বিভিন্ন শিরোনামে এবং বিভিন্ন আঙ্গিকে আল্লাহতায়ালার করুণা-মহিমা, দান-দক্ষিণা ও ক্ষমা-মার্জনা এবং সৃষ্টির সাথে তার দয়া ও ভালোবাসার বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে।
যেসব ভাগ্যবান কোরআন তেলাওয়াতের সুযোগপ্রাপ্ত হন, তারা জানেন পবিত্র কোরআনের মতো জায়গায় আল্লাহতায়ালাকে ‘গাফুর’ (ক্ষমাশীল), ‘রাহীম’ (করুণাময়), ‘রাউফুর রাহীম’ (মায়াময় দয়ালু), ‘তাওয়াবুর রাহীম’ (তওবা কবুলকারী), ‘খায়রুর রাহিমীন’ (সর্বোত্তম করুণানিধান) ও ‘আরহামুর রাহিমীন’ (সর্বাপেক্ষা বেশি কৃপানিধান) প্রভৃতি বিশেষণে স্মরণ করা হয়েছে। এমনকি কোরআন মাজীদের শিরোনাম বিসমিল্লাহতেও তার দয়া গুণেরই উল্লেখ করা হয়েছে।
তেমনিভাবে তার সর্ব প্রাথমিক আয়াতগুলোতেও সর্বপ্রথম তার লালনশীলতা ও করুণারই পরিচয় দেয়া হয়েছে। যেমন- সূরা ফাতেহায় বলা হয়েছে, ‘সমুদয় প্রশংসা নিখিল বিশ্বের পালনকর্তা প্রভু আল্লাহর জন্য, যিনি পরম করুণাময় অতি দয়ালু।’
এই সংক্ষিপ্ত বর্ণনার পর কয়েকটি আয়াতের প্রতি সামান্য লক্ষ করে দেখুন। সূরা বাকারাতে বলা হয়েছে, ‘আর তোমাদের সবার আল্লাহ, একই আল্লাহ। তাকে ছাড়া আর কেউ উপাসনার যোগ্য নেই। তিনি অত্যন্ত দয়ালু বড়ই করুণাময়।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৬৩)।
সূরা আলে ইমরানের এক জায়গায়- একথা বর্ণনা করার পর যে, কেয়ামতের দিন প্রত্যেক ব্যক্তির ভালো-মন্দ কর্মের পরিণতি তার সামনে উপস্থিত হবে এবং তখন প্রত্যেকটি লোক নিজের কর্মের যাচাই এবং নিজের কর্মের ব্যাপারে ভীষণ সন্ত্রস্ত হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহ তোমাদেরকে আপন সত্তা (এর ধরপাকড়) সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করেছেন। আর আল্লাহ নিজের বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ার্দ্র।’ (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ৩০)।
কোরআন যেন এক্ষেত্রে বলে দিচ্ছে যে, আল্লাহতায়ালা কর্তৃক তার বান্দাদের আখেরাতের জবাবদিহিতা এবং কেয়ামত দিবসের পাকড়াও সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শনও তার রহমত ও করুণারই দাবি। যেমন- মমতাপরায়ণ মাতা-পিতা নিজেদের সন্তান-সন্ততিকে মন্দ কর্মের অশুভ পরিণতি সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করেন এবং অনাগত আশঙ্কার ব্যাপারে সর্বদা সতর্ক করতে থাকেন।
বান্দাদের সাথে আল্লাহতায়ালার এই করুণা ও মমতা গুণকে সূরা শূরার এক জায়গায় এ ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে ‘আল্লাহু লাত্বিফুন বিইবাদিহি’ (আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের সাথে অত্যন্ত নম্রচারী ও করুণাময়।’ (সূরা শূরা : আয়াত ১৯)।
আর সূরা নাহলে বান্দাদের প্রতি নিজের এমনি ধরনের দয়া ও আশীর্বাদের আলোচনার পর যার দ্বারা এ জগৎ-সংসারে সর্বপ্রকার মানুষ লাভবান হচ্ছে, ইরশাদ হয়েছে, ‘বিশ্বাস করো, তোমাদের পালনকর্তা অত্যন্ত মেহেরবান এবং করুণাময়। (আর তার মেহেরবানি ও করুণারই কল্যাণে তোমরা পৃথিবীতে এ আরাম-আয়েশ ভোগ করছ।’ (সূরা নাহল : আয়াত ৭)।



 

Show all comments
  • আমির সিদ্দীক ২৫ মার্চ, ২০১৯, ৩:০০ এএম says : 0
    আল্লাহ তায়ালা সুরা নূরের ৩১ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, "মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে 'তওবা' করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।" আল্লাহ তায়ালা আগে থেকেই জ্ঞাত যে, তাঁর বান্দারা বিভিন্ন সময়ে নানা প্রকার গুনাহের কাজে জড়িয়ে পড়বে, তাই তিনি এর থেকে পরিত্রাণের উপকরণ হিসেবে রেখেছেন 'তওবা'কে। বিশুদ্ধ তওবার মাধ্যমেই মানুষ যাবতীয় গুনাহ থেকে পূত-পবিত্র হতে পারে।
    Total Reply(0) Reply
  • তরিকুল ইসলাম ২৫ মার্চ, ২০১৯, ৩:০২ এএম says : 0
    মানুষ শয়তানের ধোঁকায় পড়ে গুণাহের কাজ করে। এ গুণাহের কাজ করে আল্লাহ দরবারে যখন বান্দা ক্ষমা চায় তখন আল্লাহ তায়ালা বান্দার সগীরাহ গুণাহ ক্ষমা করে দেন। আর কবীরা গুণাহের কারণে সঠিকভাবে তওবা করলে কবিরা গুণাহ ক্ষমা করে দেন।
    Total Reply(0) Reply
  • কাওসার আহমেদ ২৫ মার্চ, ২০১৯, ৩:০৩ এএম says : 0
    মমিন বান্দার জন্য আবশ্যক তওবা করা। আল্লাহ তায়ালা তওবাকারীদের ভালোবাসেন। যদি কোনো গুনাহ হয়েই থাকে তাহলে সাথে সাথে তওবা করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • সালাহ উদ্দিন সবুজ ২৫ মার্চ, ২০১৯, ৩:০৩ এএম says : 0
    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দৈনিক একশত বার অথবা সত্তর বার তত্তবা করেন। তাহলে কি তিনি গুনাহ করেছেন? না নবী-রাসূলদের কোনো গুনাহ নেই। উম্মতদের সদা তত্তবা করার জন্যই এ শিক্ষা প্রদান।
    Total Reply(0) Reply
  • নিয়াজ মাহমুদ ২৫ মার্চ, ২০১৯, ৩:০৪ এএম says : 0
    তওবা করবোনা কেন- আল্লাহই বলেছেন- "তোমরা আমার রহমত হতে নিরাশ হয়ো না।" আর সদা তওবা কারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন। গুনাহ নিয়ে মৃত্যুবরণ করলে জাহান্নামে যেতে হবে, আর গুনাহ ক্ষমা করে দিলে আল্লাহ তায়ালার রহমতে তিনি জান্নাত দিবেন।
    Total Reply(0) Reply
  • আবু বকর বিন ফারুক ২৫ মার্চ, ২০১৯, ৩:০৫ এএম says : 0
    আল্লাহ আমাদেরকে তত্তবাকারী হিসেবে কবুল করুক এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাঁটি উম্মত হিসেবে কবুল করুক। আমীন। আমীন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আল্লাহ

৩১ জুলাই, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন