মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মার্কিন সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস বা এসডিএফ বলছে, সিরিয়ার বাঘৌজে পরাজয়ের মধ্যে দিয়ে ইসলামিক স্টেটের পাঁচ বছরের ‘খিলাফতের’ অবসান হয়েছে। এটি ছিলো আইএসের শেষ ঘাঁটি। আইএস একসময় প্রায় ৮৮ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতো যেখানে বাস করতো প্রায় ৮০ লাখ মানুষ। তেল ছাড়া চাঁদা, ডাকাতি আর অপহরণ থেকে অর্থ আয় করতো তারা। তবে অবস্থান হারালেও আইএসের স্থায়ী নিঃশেষ হওয়ার নিশ্চয়তা কতটা সেটি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেছে।
আপাতত হারলেও তাদের পুনর্গঠিত হওয়ার সুযোগ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যেও। হোয়াইট হাউজ আগেই জানিয়েছে যে তারা ৪০০ শান্তিরক্ষী সিরিয়ায় রাখবে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। ইরাকে গোপন ভাবে জিহাদিরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে এমন তথ্য এসেছে জাতিসংঘ মহাসচিবের ফেব্রুয়ারিতে দেয়া রিপোর্টে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে সংগঠিত হচ্ছে আইএস জঙ্গিরা। মরুভূমি ও পার্বত্য এলাকাগুলোতে তারা কাজ করে যেখানে যাতায়াত ও হামলার পরিকল্পনা তাদের জন্য সহজ। আইএস নেটওয়ার্ক সিরিয়াতেও ইরাকের মতো করেই দেখা দিতে পারে। ইউফ্রেতিস উপত্যকায় ইদলিব প্রদেশের উত্তর পশ্চিমে তাদের কিছুটা উপস্থিতি আছে। এমনকি রাজধানী দামেস্কের দক্ষিণে ও দক্ষিণ পূর্ব সিরিয়াতেও।
মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের ধারণা জঙ্গিদের হাতে এখন ভারী অস্ত্র আছে এবং তারা দেশজুড়ে হত্যাকাণ্ড ঘটাতে সক্ষম। এমনকি জঙ্গিদের ওপর পূর্ণ কর্তৃত্ব আছে তাদের নেতাদের। তাদের মূল নেতা আবু বকর আল বাগদাদীর অবস্থান এখনো অজানা। অপরাধ কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্থ আয়ও তাদের হচ্ছে এবং পাশাপাশি পাচ্ছে নানা ডোনেশনও।
বড় ধরণের পরাজয় হলেও জাতিসংঘ মহাসচিবের দেয়া তথ্য মতে আইএসের এখনো ১৪ থেকে ১৮ হাজার জঙ্গি আছে ইরাক ও সিরিয়ায়। এর মধ্যে বিদেশী আছে তিন হাজারের মতো। যদিও মার্কিন হিসেবে এ সংখ্যা ১৫ থেকে ২১ হাজার। যাদের অনেকেই কাজ করে স্লিপার সেল হিসেবে। সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস বা এসডিএফ প্রায় এক হাজার বিদেশী যোদ্ধা আটক করেছে। আরও এক হাজার ইরাকে আটক আছে বলে জানা যায়। যুক্তরাষ্ট্র এসব যোদ্ধার নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের কথা বললেও এসব যোদ্ধাদের দেশগুলো তাদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ২০১৭ সালের অক্টোবরেই প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার যোদ্ধা তাদের নিজ দেশে ফিরে গেছে। এছাড়াও আইএস এর সহযোগী জঙ্গি ছড়িয়ে আছে আফগানিস্তান, লিবিয়া, মিসর ও আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকায়।
উল্লেখ্য, সুন্নি আরব জঙ্গিরা ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের পর আইএস গঠন করেছিলো এবং পরে এটিই বৃহৎ শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। ২০১১ সালে তারা সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বিরোধীদের সাথে যোগ দেয়। ফলে সেখানেই তারা বেশ বড় আশ্রয় পেয়ে যায় এবং অস্ত্র পাওয়ার ক্ষেত্রেও সুবিধাজনক অবস্থায় চলে যায়। আবার পরে ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার হলে সেটিও তাদের জন্য সহায়ক হয়ে দাঁড়ায়। ২০১৩ সালে তারা সিরিয়ায় ভূখণ্ড দখল শুরু করে এবং পরে পরের বছরই নানা জায়গায় খিলাফত ঘোষণা করে। ইরাক ও সিরিযা থেকে আইএস বিতাড়ন ছিলো একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। সিরিয়ায় সরকারি বাহিনীকে এজন্য ইরান ও রাশিয়ার সহায়তা নিতে হয়েছে। আর এসডিএফকে সহায়তা করেছে মার্কিনীরা।
২০১৫ সালে ইরাকের রামাদি পুনরুদ্ধার করেছিলো ইরাকি বাহিনী ও তাতে সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী। মসুল উদ্ধার হয় ২০১৭ সালে এবং এটি ছিলো আইএসের জন্য বড় ধাক্কা। ২০১৭ সালের অক্টোবরে সিরিয়ার রাক্কা হারায় আইএস। এটি ছিলো তাদের কথিত খিলাফতের রাজধানী। পরের মাসেই সিরিয়ার সেনাবাহিনী পূর্বাঞ্চলীয় দেইর আল জৌর নিয়ন্ত্রণে নেয় আর ইরাকে সরকারি বাহিনী দখল করে সীমান্ত শহর আল কাইম। শেষ পর্যন্ত এসডিএফ দখল করলো আইএসের শেষ ঘাঁটি।
আইএস বিরোধী লড়াইয়ে কত হাজার মানুষ মারা গেছে তার কোনো হিসেব নেই। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের মতে সিরিয়ায় ২০১১ সালের পর থেকে প্রায় ৩ লাখ ৭১ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। আর জাতিসংঘ বলছে কমপক্ষে ৩০ হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে ইরাকে আর ইরাকের একটি সংস্থার হিসেবে এ সংখ্যা ৭০ হাজার। একই সাথে বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। সিরিয়া থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ৬৬ লাখ মানুষ। আরও ৫৬ লাখ বিদেশে পালিয়েছে। তুরস্কে শরণার্থী হিসেবে আছে ৩৫ লাখ মানুষ। সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।