পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে নবনির্বাচিত নেতারা দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই ডাকসু সভাকক্ষে বসে নতুন নির্বাহী কমিটির প্রথম সভা। সভায় ক্যাম্পাসে রিকশা ভাড়া নির্ধারণ, অছাত্র ও বহিরাগতদের হল ছাড়াসহ বিভিন্ন ছাত্রবান্ধব প্রস্তাব গৃহিত হলেও ডাকসুতে প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্য পদ দেয়া নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেন নেতারা। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ডাকসু নির্বাচনের আয়োজনে সহযোগিতা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আজীবন সদস্য পদ দেয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করা হলেও ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্ব নেয়া ডাকসুতে প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্য পদ দেয়া নিয়ে আপত্তি তুলে ভিপি। ভিপির যুক্তিকে সমর্থন দেয় একই প্যানেল থেকে নির্বাচন করা সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন। এদিকে প্রথম বৈঠকের দিনই ক্যাম্পাসে আন্দোলন করে ছাত্রদল ও বাম ছাত্র সংগঠনগুলো। এদিন নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে এর সাথে জড়িত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রদল, আর সভা চলাকালে পুনঃতফসিলের দাবিতে রাজু ভাস্কর্যে প্রশাসন ও ডাকসু নেতাদের লাল কার্ড প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে। ডাকসু বৈঠক শেষে ভিসির নেতৃত্বে দায়িত্ব গ্রহণ করা ছাত্রনেতারা ধানমন্ডীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে যান। কেন্দ্রীয় সংসদের সাথে একই সময়ে ১৮টি হলে হল সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দায়িত্ব গ্রহণের পাশাপাশি প্রথম পর্ষদের সভায় মিলিত হন। এতে বিভিন্ন হলে সংশ্লিষ্ট হলের সমস্যাদি চিহ্নিত করে তা সামাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কার্যালয় সংলগ্ন আব্দুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাস রুমে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ডাকসুর নবনির্বাচিত প্রতিনিধিরা। পরে ডাকসু সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম কার্যকরী সভা। ডাকসুর পদাধিকার বলে প্রেসিডেন্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে এ সময় ভিপি নুরুল হক নুর, জিএস গোলাম রাব্বানীসহ ২৫ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সভার শুরুতে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা শাহাদাতবরণ করেছেন তাদের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে ডাকসুতে আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত শাহরিনা তানজিলা অর্ণি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আজীবন সদস্যপদ দেয়ার প্রস্তাব তুলেন। এতে ২৩ জন সদস্য সমর্থন জানালেও ভিন্নমত পোষণ করেন ভিপি নুরুল হক নুর। পরে ভিসি প্রস্তাবটি পরবর্তী বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান। বৈঠকে ক্যাম্পাসে রিকশা এবং সাইকেলের জন্য আলাদা লেন করা, রিকশা ভাড়া নির্ধারণ এবং বিভিন্ন আবাসিক এলাকার ন্যায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ৩০০-৩৫০ রিকশার রেজিস্ট্রেশন দেয়া, তাদের নির্দিষ্ট ড্রেসকোড এবং গণপরিবহন নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। সভায় ভিপি আবাসিক হলগুলোতে মেধা ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ দেয়া ও অছাত্র ও বহিরাগতদের আবাসিক হল ত্যাগ করার প্রস্তাব দেন।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য প্রেসিডেন্টের সময় সাপেক্ষে আগামী ২ মাসের মধ্যে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তাব দেয়া হয়। বড় আকারের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট অথবা প্রধানমন্ত্রী সেখানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে থাকবেন। এর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কার্যকরী পরিষদকে। ডাকসুর সভাপতি প্রফসর আখতারুজ্জামান নবনির্বাচিত ভিপি, জিএস, এজিএসকে বিভিন্ন কোরাম-কমিটি করে অনুষ্ঠানটি আয়োজনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে দায়িত্ব দিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন সম্পাদক পদে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিজ নিজ ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে গঠণতন্ত্রের বিধান মোতাবেক যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিয়েছেন।
৭৩-এর অধ্যাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে ৫ জন ছাত্র প্রতিনিধি থাকার কথা রয়েছে। এ ছাত্র প্রতিনিধি মনোনয়ন দেয়া হয় ডাকসুর পক্ষ থেকে। ২৮ বছর ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায় ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়াই সিনেটের কার্যক্রম ছিলো। ডাকসুর সভা সূত্রে জানা যায়, সভায় ৫ জন ছাত্র প্রতিনিধি কারা হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভিসি ডাকসুর ভিপি, জিএস, এজিএসকে আলোচনার মাধ্যমে ৫ জনকে নির্ধারণ করার জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন।
সভা শেষে বেলা দেড়টার দিকে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান, ভিপি নুরুল হক নুর ও জিএস গোলাম রাব্বানী। বৈঠকের সার্বিক বিষয়ে ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, দীর্ঘ তিন দশক পর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজকের সভার মধ্য দিয়ে ডাকসুর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলো। ডাকসুর গঠণতন্ত্র বলে যেদিন কার্যকরী পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হবে, সেদিন থেকে ৩৬৫ দিন গণ্য হবে। প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্যপদ প্রদানের বিষয়ে তিনি বলেন, কার্যকরী পরিষদ প্রধানমন্ত্রীকে ডাকসুর আজীবন সদস্য করার বিষয়ে সহমত পোষণ করেছেন। সেটি আইনি ভাষা দেখে করা হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে প্রস্তবনাটি ধন্যবাদের সঙ্গে গ্রহণ করা হলো। এটি একেবারেই আনুষ্ঠানিকভাবে পরবর্তী সভায় গঠনতন্ত্র দেখে আমরা এই কাজটি, মহৎ উদ্যোগটি গ্রহণ করব। এটি আমাদের আজকের কার্যকর পরিষদের সিদ্ধান্ত।
ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, আমরা সভায় রোকেয়া হল ও কুয়েত মৈত্রী হলের ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেছি এবং ডাকসুর পুননির্বাচন চেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীকে ডাকসুর সদস্যপদ দিতে আপত্তি কোথায় সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং নিরপেক্ষ ৮ জন শিক্ষক পর্যবেক্ষণ করে এ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ বলেছে। সেরকম একটি জায়গায় থেকে আমি মনে করি না যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্য পদ প্রদান করা উচিত। আমরা বলেছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সম্মানীয় ব্যক্তি। তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী প্রধান। সুতরাং ডাকসুর আজীবন সদস্য পদ দেয়াটা তার জন্য বড় কিছু নয়। যেখানে এ নির্বাচনকে নিয়ে বিতর্কিত একটি অবস্থান রয়েছে। আমরা যখন দায়িত্ব নিচ্ছি তখন শিক্ষার্থীরা পুনর্নির্বাচনের দাবি করে বিক্ষোভ করছে, মিছিল করছে। নুরুল হক নুর যে জায়গায় কথা বলার সুযোগ পাবেন, সে জায়গাতেই শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলবেন বলে জানান। ভিপির বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, কেন্দ্রীয় ডাকসুর ২৫ সদস্যের যে বডি রয়েছে সেখানে ২৩ জন প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্য পদ দেয়াকে সরাসরি সমর্থন করেছেন। একমাত্র ভিপি নুর দ্বিমত পোষণ করেছেন। সুতরাং ডেমোক্র্যাটিক ওয়েতে তার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হয়নি।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ডাকসু নেতাদের শ্রদ্ধা:
কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা শেষে বিশ^বিদ্যালয়ের বাসে চড়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ডাকসু নেতৃবৃন্দ। দুপুর আড়াইটার দিকে এই শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এসময় ডাকসুর সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান, ভিপি নুরুল হক নুর, জিএস গোলাম রাব্বানী, এজিএস সাদ্দাম হোসেনসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
১৮টি হল সংসদের অভিষেক
এদিকে ডাকসুর সাথে ১৮টি হল সংসদেরও অভিষেক অনুষ্ঠান ও প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের মধ্যে ৯টি হলেই ছাত্রলীগ প‚র্ণাঙ্গ প্যানেল জয়ী হয়। এদিন হল প্রভোস্টগণ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। এর আগের দিনই হল সংসদের কার্য পরিচালনার জন্য একজন হাউজ টিউটরকে কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হয়। হল সংসদের বৈঠকে নির্বাচিত নেতারা সংশ্লিষ্ট হলের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল থেকে জিএস পদে নির্বাচিত মেহেদী হাসান মিজান বলেন, আমরা হলের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছি। প্রশাসনের সহায়তায় বিষয়গুলো সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। কবি জসিম উদ্দিন হলের সাহিত্য সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, শিক্ষার্থীদের ভোটে আমি কবি জসিম উদ্দিন হলে সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। হলে এক্ষেত্রে কি কি কাজ করা যায় তা চিহ্নিত করেছি। আমরা আশাকরি আগামী দিনে পল্লী কবি জসিম উদ্্দীনের এ হলে সাহিত্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন জাতীয় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।
লাল কার্ড প্রদর্শন প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্যের
এদিকে ডাকসুর বৈঠক চলাকালে ডাকসুতে দায়িত্ব নেয়া নির্বাচিতদের ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি লাল কার্ড প্রদর্শন করেছে প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও সম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্রঐক্য। বেলা ১১টায় নির্বাচনে কারচুপি ও ভোট ডাকাতির প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে এ কর্মস‚চি পালন করেছে আয়োজক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বেলা সোয়া ১২টার দিকে কার্যকরী সভা শেষ হলে তারা ডাকসু ভবনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় তফসিল ও নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি জানায়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র মৈত্রী, ছাত্রফ্রন্টসহ বিভিন্ন বাম অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
অনিয়মে জড়িতদের পদত্যাগের দাবিতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ
শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ডাকসুতে অনিয়মের সাথে জড়িতদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করে ছাত্রদল। এতে নেতৃত্ব দেয় ছাত্রদলের প্যানেল থেকে ভিপি ও জিএস পদে নির্বাচন করে হেরে যাওয়া মোস্তাফিজুর রহমান ও আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক। ছাত্রদলের দাবি, ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, এটা স্পষ্ট। এর দায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে পদত্যাগ করতে হবে। এছাড়া যারা এই নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির সাথে জড়িত ছিল সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সময় সেখানে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।