Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পরিবহন সঙ্কটে চরম ভোগান্তি

আবদুল্লাহ আল মামুন | প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

রাজধানীর নর্দ্দায় বাসের চাপায় বিইউপি শিক্ষার্থী নিহত হওয়ায় দ্বিতীয় দিনের মতো গতকালও সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। এতে নগরীর বেশিরভাগ সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। দুই-একটি রুটে গণপরিবহন চললেও বেশিরভাগ সড়কে গাড়ির সংখ্যা ছিল খুবই কম। এতে অফিসগামী মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়েন। অন্যদিকে, যথাযথ নিরাপত্তা না থাকা ও গাড়ি ভাংচুরের আশঙ্কায় সড়কে গাড়ির সংখ্যা কম ছিল। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে ভোগান্তির এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনকালে দেখা গেছে, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ পয়েন্টে স্কুল-কলেজসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তা দখল করে বিক্ষোভ করে। তারা বেশিরভাগ সড়কে সব ধরণের যানবাহন ও গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। অবরোধের কারণে নগরীতে অন্যান্য দিনের তুলনায় গণপরিবণ ও ব্যাক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ছিল খুবই কম। দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকেও অনেকে গাড়িতে উঠতে পারছিলেন না। যারা বাস বা অন্যান্য যানবাহনে ছিলেন তাদেরকেও এক জায়গায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। এতে অফিসগামী মানুষের মতো চরম ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। অনেকের তাড়া থাকায় রিকশা, ভ্যান বা রাইড শেয়ারিংয়ে করে যাতায়ত করতে দেখা গেছে। তবে অবরোধকালে অ্যাম্বুলেন্সসহ রোগীদের বহনকারী যানবাহন চলতে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে দেখা গেছে।
গতকাল সকাল থেকে রাজধনীর কুড়িল, প্রগতি সরণি, শাহজাদপুর, রামপুরা, বাড্ডা, মহাখালী, গুলশান, বনানী, সায়েন্স ল্যাব, ফার্মগেট, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। নিরাপদ সড়কের দাবিতে তারা রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে বিভিন্ন ধরণের ¯েøাগান দেন। কয়েক জায়গায় ছাত্রদের বুঝিয়ে পুলিশ সরিয়ে দিলেও তারা আবার এসে সড়কে অবস্থান নেয়। অবরোধের কারণে রাস্তায় থাকা যানবাহনকে দীর্ঘ সময় একই জায়গায় আটকে থাকতে হয়। এছাড়া কয়েকটি রুটে গাড়ি চললেও প্রয়োজনের তুলনায় তা ছিল খুবই কম। দেখা গেছে, অপেক্ষমান যাত্রীরা কোন গাড়ি দেখলেই তাতে উঠার জন্য হুমরি খেয়ে পড়েন। রোগী ও স্বজনদের পাশাপাশি নারী ও বৃদ্ধদের ভোগান্তি ছিল চরমে। রিকসা বা সিএনজি অটোরিকসা চললেও অন্যান্য দিনের তুলনায় ভাড়া ছিল কয়েকগুণ বেশি। তবে কারওয়ান বাজারসহ অনেক রুটে গাড়ি চলতে দেখা গেছে। এমনকি কারওয়ান বাজার এলাকায় যানবাহনের তীব্র জট দেখা গেছে।
ধানমন্ডিতে আছমা বেগম নামে এক মা বলেন, সকালে ছেলেকে নিয়ে কোচিংয়ে এসেছি। কিন্তু এখন যান চলাচল বন্ধ থাকায় বাসায় ফেরার কোন গাড়ি পাচ্ছি না। দুই একটি রিকসা বা অটোরিকসা থাকলেও তিন-চারগুণ বেশি ভাড়া হাকছে।
উত্তরার বাসীন্দা আবুল হাসান বলেন, উত্তরা থেকে রওয়ানা দিয়ে দুই ঘণ্টায়ও বিমানবন্দর সড়কে পার হতে পারিনি। গাড়ি এক জায়গাতেই ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকে সমর্থনকারী এই বেসরকারি চাকুরে বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবি শুধু শিক্ষার্থীদের নয়। এটি সারা দেশের মানুষের প্রাণের দাবি। সবাই নিরাপদ মৃত্যুর নিশ্চয়তা চায়। কিন্তু সরকারসহ সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি স্থায়ী সমাধান না করে ঝুলিয়ে রেখে প্রতারণা করছে।
চকবাজারের দোকানী রুহুল আমিন বলেন, শিক্ষার্থীরা রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় দীর্ঘ সময় গাড়ি নিয়ে এক জায়গায় বসে আছেন। এই দোকানী বলেন, দুপুরের মধ্যে গাড়ির মালামাল ডেলিভারি দেওয়ার কথা। কিন্তু এখন কি করবেন সেটি ভেবে পাচ্ছেন না।
এদিকে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা গাড়ি ও চালকের কাগজপত্র তল্লাশি করায় রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা অনেক কম। এছাড়া অনেকে ভাংচুরের ভয়ে গাড়ি নামাননি।
আজিমপুরে চালক রফিক বলেন, গাড়ি নিয়ে বের হলে সাইন্সল্যাব এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা গাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছে। যদি অবরোধ স্থগিত করা হয় তবে আবার গাড়ি নিয়ে নামবেন।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দফতর সম্পাদক সামদানি খন্দকার বলেন, আন্দোলনের সময় গাড়ি ভাঙচুর করা একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। যার কারণে রাস্তায় গাড়ি তুলনামূলক অনেক কম। তিনি বলেন, রাস্তায় গাড়ি না চললে নগরবাসীর যেমন কষ্ট তেমন চালক হেলপারদেরও ক্ষতি হয়।
নর্দ্দা এলাকায় ব্যবসায়ী রুহুল আমিন বলেন, রাস্তায় অনেক রিকসা থাকলেও কেউ যেতে রাজী নয়। বাধ্য হয়ে ভ্যানে করে নর্দা ফুটওভার ব্রিজ পর্যন্ত আসেন। পড়ে যমুনা ফিউচার পার্ক পর্যন্ত পায়ে হেটে রওয়ানা হন।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা গেট এলাকায় সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের চাপায় বাংলাদেশ প্রফেশনার বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী নিহত হন। এ ঘটনায় সুপ্রভাত পরিবহনের রুট পারমিট বাতিল, ঘাতক চালকের ফাঁসিসহ ৮ দফা দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরিবহন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ