Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাবা দর্শন আল্লাহর এক নিয়ামত

আবুল খায়ের নাঈমুদ্দীন | প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
এঘরকে কেন্দ্র করে এখানে আছে মহানবী পেয়ারা আখওয়ায়ে নামদার তাজেদারে মদীনা আহাম্মদ মোস্তফা মোহাম্মদ মোস্তফা (সঃ) এর নিজ হাতে বসানো হাজারে আসওয়াদ বা গোনাহ মাফের বেহেস্তি পাথর। হাদীস শরীফের আলোকে এ পাথরের গুন হলো একটি চুম্বনে মুসলিমের গুনাহ মাপ হয়ে যায়, সুবহানাল­াহ।
হাজারে আসওয়াদ ও মাকামে ইব্রাহীম সম্পর্কে নবীজী (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই হাজারে আসওয়াদ ও মাকামে ইব্রাহীম জান্নাতের দুটি অতি মূল্যবান ইয়াকুত পাথর। পৃথিবীতে প্রেরণের সময় মহান আল­াহ তায়ালা এই পাথর দুটির ঔজ্জল্য ¤ø­ান করে তারপর প্রেরণ করেছেন। তা নাহলে এদের আলোতে সমস্ত পৃথিবী এমনভাবে আলোকিত হয়ে থাকত যে দিন-রাত্রির পার্থক্য বোঝা যেত না।
অন্য এক হাদিছে বলা হয়েছে যে, পৃথিবীতে প্রেরণের সময় হাজারে আসওয়াদ দুধের মতো সাদা ছিল। কিন্তু মানুষের পাপের স্পর্শে সেটা কালো রং ধারণ করেছে।
হাজারে আসওয়াদ আর কা’বা শরীফের দরজার মাঝখানের জায়গাটির নাম “মুলতাজাম” রাসূল (সঃ) এখানে নিজের ডান গাল ও পেট লাগিয়ে দোয়া করতেন। দোয়া কবুলের আনন্দে তিনি কেঁদে দাঁড়ি ও বুক ভাসিয়ে ছিলেন। এরপর সাহাবাগণও বাইতুল­াহর সাথে পেট লাগিয়ে দরজা ধরে দোয়া করতেন, দোয়া কবুল হতো। এর পাশেই রয়েছে “মুসল­ায়ে জীব্রাঈল” (আঃ),এখানে জীব্রাঈল আঃ নামায আদায় করে ছিলেন। এখান থেকে বাইতুল­াহ নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তার সাথেই রয়েছে মাকামে ইব্রাহীম আঃ, যে বেহেস্তী পাথরে দাঁড়িয়ে তিনি কা’বা নির্মাণের কাজ করে ছিলেন। যেখানে এখনো তাঁর পায়ের চাপ দেখা যায়। যা এখন গ্লাস বেষ্টন করে একটি পিলারে রাখা হয়েছে। তার পাশেই রয়েছে হাতিমে কা’বা। হাতিমে কা’বাকে কাবার অংশ ধরা হয়। যেখানে দুরাকাত নামায পড়ার জন্য সব সময় ভীড় লেগে থাকে। সাফা মারওয়া পাহাড়দ্বয়, অলৌকিক ভাবে পাওয়া বেহেস্তি পানি জম জম কূপ, সাফা মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝখানে মিলাইনে আখজারাইন রয়েছে। সব স্মৃতি এ কাবাকে ঘিরেই। এগুলোতে দোয়া কবুল হয়। কাবার আশে পাশেই এ সব অবস্থিত।
বাইতুল­াহ প্রথম নির্মাণ করলেন ফেরেস্তারা, পরে হযরত আদম আঃ, পরে নূহ আঃ, তারপর ইব্রাহীম আঃ, ইসমাইল আঃও নির্মাণ করলেন। ইব্রাহীম আঃ একজন নবী হয়ে ঝাড়ু দিলেন। “তহ্হেরা লিত্তয়েফিনা ওয়াল আকেফিনা রুক্কাড়িসসুজুদ” তারপর আল­াহর নির্দেশে তিনি আযান দিলেন।
এখানে উলে­খ্য যে, প্রতি বছর হজের মওসুমের পূর্বে পবিত্র কাবা ঘরের অভ্যন্তর ভাগ যমযমের পানি ও সাবান দ্বারা ধৌত করা হয়। এতে উন্নত প্রযুক্তির হাইড্রোলিক ক্লিনিং মেশিন ব্যবহার করা হয়। ধোয়া-মোছার পর মেঝে ও দেয়ালে অতি মূল্যবান সুগন্ধি মেশক আম্বর ও উদ ছিঁটানো হয়। সৌদি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে মক্কার সম্মানিত গভর্ণরের নেতৃত্বে হারমাইনের ইমাম ও মুয়াযযিন -এর অংশগ্রহণে এই পুরো কার্যক্রমটি পরিচালিত হয়। মাঝে মাঝে সেখানে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানগণও এই মহতি কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ পান।
জানা যায়, কা’বা ঘরের গিলাফ ২০ মিলিয়ন সৌদি রিয়াল বা ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে প্রতি বছর নতুন করে গিলাফ বানানো হয়, শুধুমাত্র কাবা ঘরের গিলাফ তৈরির জন্য মক্কা নগরীতে একটি অত্যাধুনিক ফ্যাক্টরি রয়েছে, যাকে আরবিতে ‘মাসনা কিস্ওয়াতুল কা’বা’ বলা হয়। ২০০ জন সুদক্ষ কারিগর এখানে কাজ করেন। এক বছরে এই একটি মাত্র গিলাফ তৈরি করেন।
পৃথিবীর প্রথম মানব হজরত আদম (আ.) দুনিয়ার বুকে প্রেরিত হয়ে মহান আল­াহ রাব্বুল আলামিনের একমাত্র নিদর্শণ স্বরূপ এই কা’বা ঘরকেই পেয়েছিলেন। হজরত আদম (আ.) ও বিবি হাওয়া (রা.) পৃথিবীতে আগমনের পর আল­াহ তায়ালা তাদেরকে কাবা ঘর তাওয়াফের নির্দেশ দেন। হজরত আদম (আ.) হচ্ছেন সর্ব প্রথম মানব যিনি কাবা ঘর তাওয়াফ করেন।
হজরত ইব্রাহিম (আ.) কাবা ঘর তৈরির পর মহান আল­াহ তায়ালার নিকট এই বলে দোয়া করেছিলেন যে, হে আল­াহ তুমি এই শহরটিকে একটি শান্তির স্থান বানিয়ে দাও যাতে এখানে বসবাস করা আতঙ্কজনক না হয়ে উঠে। হত্যা, লণ্ঠন, কাফেরদের অধিকার স্থাপন ও অন্যান্য বিপদ-আপদ থেকে এই শহরটিকে তুমি সুরক্ষিত ও নিরাপদ রেখো। এবং এখানে জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় সামগ্রী যেন সহজ লভ্য হয়। হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর এই দোয়া আল­াহ তায়ালা কবুল করেছিলেন। ফলে মক্কা মুকাররমা এমনভাবে সুরক্ষিত ও নিরাপদ হয়েছে যে, আজ পর্যন্ত কোনো শত্রু জাতি এই শহরের উপর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। তাছাড়া এই শহরটি হত্যা, লুটতরাজ থেকেও নিরাপদ।
আল­ামা ইকবাল সুন্দর করে কাবার মর্যাদা প্রকাশ করেছেন ছোট্ট কয়েকটি লাইনে-
“দুনিয়াকে বুত গদোমে ওয়ে পহেলা ঘর খোদাকা,
হাম ফাসেবা হায় উসকি ওবাসেবা হামারা।”
এই শহরে সত ও সত্যের মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত। কাফের ও অত্যাচারী বা মিথ্যা সর্বদা লাঞ্চিত। আপনি একজন সৌভাগ্যবান মুসলিম হিসাবে সকল নবী রাসূলের স্মৃতি বিজড়িত এই সর্বোত্তম পবিত্র স্থানটি সুনজরে দেখে আসুন। এই উসিলায়ও আল্লাহ মাফ করে দিতে পারেন। হে আল­াহ, যারা এই মহান নেয়ামত পরিদর্শণ করেছেন তাঁদের উসিলায় সকল মোমেন মোমেনাতকে মাফ করে দিন। আমীন।।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কাবা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ