Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রেলের ভাড়া বাড়ছে

২৫ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ : রুটভেদে বাড়বে ৩৯ থেকে ৬৪ শতাংশ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

রেলের যাত্রী পরিবহন ভাড়া বাড়ছে। এরই মধ্যে ভাড়া বৃদ্ধি-সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণের শর্তে এ প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। গড়ে ২৫ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির সুপারিশ করা হলেও রুট ভেদে এসি চেয়ারের ভাড়া বাড়বে ৩৯ থেকে ৬৪ শতাংশ। নতুন প্রস্তাব কার্যকর হলে রেলের কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া ৩৯ পয়সা থেকে বেড়ে হবে ৪৯ পয়সা। এছাড়া যাত্রী পরিবহনে ন্যূনতম ভাড়া বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সাথে পণ্য পরিবহনের ভাড়া, কনটেইনার ও পার্সেল পরিবহন মাশুল বাড়ানোর প্রস্তাবও তৈরি করেছে রেলওয়ে।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রেলওয়েতে চলাচলরত আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রী ভাড়া সর্বশেষ ২০১৬ সালে সাত দশমিক ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়। বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য বৃদ্ধিসহ আনুষাঙ্গিক মেটেরিয়াল, অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় রেলওয়ের ভাড়া বৃদ্ধি করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এতে আরও বলা হয়, গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেলওয়ের জ্বালানি ব্যয়, বেতন-ভাতা ও রক্ষণাবেক্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে ১১ দশমিক ৪৮, ৩৩ দশমিক ৪৬ ও ১৫৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাছাড়া প্রতি বছর ভাড়া বৃদ্ধির পরামর্শ রয়েছে এডিবির। এ ছাড়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলওয়ে প্রকল্পের জন্য গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত এডিবির রিভিউ মিশন বৈঠকে ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় রেলপথ মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে একটি উপস্থাপনা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই কমিটি সর্বশেষ তিন বছর আগের ভাড়া বৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের দাম, অপারেশন ও মেইনটেন্যান্সের খরচসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিবেচনায় এনে ২৫ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব করে। এতে ভিত্তি (বেসিক) ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ৩৯ পয়সা থেকে ৪৯ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়। ভিত্তি ভাড়া ও নীতিমালা অনুযায়ী, রেলওয়ের নতুন ভাড়ার প্রস্তাব করা হয়।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে আন্তঃনগর ট্রেনে শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩৪৫ টাকা। নতুন ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে ৪৬৫ টাকা। এক্ষেত্রে ভাড়া বাড়ছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। একই রুটে এসি চেয়ারের ভাড়া ৬৫৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ভাড়া বাড়ছে প্রায় ৬৩ শতাংশ।
এদিকে ঢাকা-রাজশাহী রেলপথে আন্তঃনগর ট্রেনে শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩৪০ থেকে বাড়িয়ে ৪৬৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। একই রুটে এসি চেয়ারের ভাড়া ৬৫৬ থেকে বাড়িয়ে ১৭০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। একইভাবে ঢাকা-সিলেট রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৩৫ টাকা ও এসি চেয়ারের ভাড়া ৬১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার এক টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া ঢাকা-দিনাজপুর রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে শোভন চেয়ারের ভাড়া ৪৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৩০ টাকা এবং এসি চেয়ারের ভাড়া ৯৯০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩৮০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ঢাকা-পঞ্চগড় রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে শোভন চেয়ারের ভাড়া ৫৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৭৫ টাকা ও এসি চেয়ারের ভাড়া ১০৫৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫৫৩ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এর বাইরে ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-লালমনিরহাট ও ঢাকা-খুলনা রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে শোভন চেয়ারের ভাড়া ৫০৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৩০ টাকা ও এসি চেয়ারের ভাড়া ৯৬৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৪৪৯ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে শোভন চেয়ারের ভাড়া ২২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৩০ টাকা ও এসি চেয়ারের ভাড়া ৪২৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৩৩ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ ছাড়া বিভিন ট্রেনের ন্যূনতম ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, বর্তমানে ট্রেনে সুলভ শ্রেণির ন্যূনতম ভাড়া ৩৫ টাকা, যা বাড়িয়ে ৪৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া শোভন শ্রেণির ন্যূনতম ভাড়া ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৫ টাকা, শোভন চেয়ারে ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫ টাকা, প্রথম শ্রেণি সিট (নন-এসি) ৯০ টাকা থেকে ১১০ টাকা, স্নিগ্ধা (এসি চেয়ার) ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২০ টাকা, এসি সিট ও প্রথম শ্রেণি বার্থ (নন-এসি) ১১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩০ টাকা এবং এসি বার্থ ১৩০ থেকে বাড়িয়ে ১৬৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও দ্বিতীয় শ্রেণির ন্যূনতম ভাড়া ৫ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণির মেইলে ১৫ টাকা ও কমিউটার ট্রেনের ন্যূনতম ভাড়া ২০ টাকা অপরিবর্তিত রাখা করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রেলওয়ের উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে শিগগিরই বৈঠক করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয়। এরপর প্রস্তাবটি রেলপথমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তার অনুমোদনের পর প্রস্তাব যাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে রেলের নতুন ভাড়া কার্যকর হবে। তাই বিষয়টি কার্যকর হতে অনেকটা সময় লাগবে।
উল্লেখ্য, প্রায় ২০ বছর পর ২০১২ সালের ১ অক্টোবর রেলের ভাড়া বাড়ানো হয়। ওই সময়ে রেলের যাত্রী পরিবহনের কিলোমিটারপ্রতি ভিত্তি ভাড়া ২৪ থেকে বাড়িয়ে ৩৬ পয়সায় উন্নীত করা হয়। ৫০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হলেও বিভিন্ন রুটে থাকা ডিসকাউন্ট তুলে দেওয়ায় সে সময় ভাড়া বেড়েছিল প্রায় শতভাগ। এছাড়া ২০১৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আরেক দফা ভাড়া বাড়ায় রেলওয়ে। ওই সময় কিলোমিটারপ্রতি ভিত্তি ভাড়া ৩৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩৯ পয়সায় উন্নীত করা হয়।



 

Show all comments
  • ash ১৬ মার্চ, ২০১৯, ১২:৪১ পিএম says : 0
    AI LOKKOR JOKKOR MARKA TRAIN E AKHON E VARA BARANOR DORKAR KI??? AGE SHEBA WNNOTO KORE TARPOR VARA BARANO WCHITH !!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেল

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ