পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এখন বিস্ফোরণোন্মুখ। পুন: নির্বাচনের দাবিতে ছাত্ররা আমরণ অনশন করছেন; রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও একই দাবিতে অনশন করছেন। তিন দিনের আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। দিনভর চলছে বিক্ষোভ, অনশনকারীদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বক্তৃতা। গভীর রাতে অনশনরত ছাত্রীদের হেনস্তা করার অভিযোগও উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, আগামী শনিবার ঢাবি কর্তৃপক্ষকে দেয়া আল্টিমেটাম শেষ হচ্ছে। দাবি না মানলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
দীর্ঘ ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়া ডাকসু নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট শেষ হওয়ার আগেই নির্বাচন বর্জন করে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য সকল সংগঠন। নির্বাচনের পরের দিন থেকেই পুনঃনির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে সংগঠনগুলো।
গত বুধবার পুনঃনির্বাচন দিতে প্রশাসনকে ৩ দিনের আল্টিমেটাম দেন নির্বাচনে অংশ নেয়া ৫টি প্যানেলের প্রার্থীরা। পুনঃনির্বাচনের দাবিতে মঙ্গলবার থেকে আমরণ অনশন শুরু করে ৫ শিক্ষার্থী। বুধবার ও বৃহস্পতিবার এতে যোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রবিউল ইসলামসহ ২ জন। তাদের অধিকাংশই ডাকসু ও হল সংসদের বিভিন্ন পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছেন। এদিকে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে রোকেয়া হলের প্রভোস্ট জিনাত হুদার পদত্যাগসহ পুনঃনির্বাচনের দাবিতে বুধবার থেকে রোকেয়া হলের গেটে অনশন করছেন ৫ ছাত্রী।
গতকাল বৃহস্পতিবার ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর অনশনরত শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করে তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানান এবং রোকেয়া হলের প্রভোস্টের পদত্যাগসহ পুনঃনির্বাচন দিতে জোর দাবি জানান। অনশনরত শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল প্যানেল থেকে ভিপি-জিএস পদে নির্বাচন করা মোস্তাফিজুর রহমান ও আনিসুর রহমান অনিকের নেতৃত্বে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এসময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রদল পাশে আছে বলে জানান তারা। আগামীকাল শনিবার শেষ হচ্ছে পুনঃনির্বাচনের দাবিতে প্রশাসনকে দেয়া ৩ দিনের আল্টিমেটামের সময়। এ সময়ের মধ্যে পুনঃনির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া না হলে সরকারবিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো থেকে আরো কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা। আন্দোলনের মধ্যেই ডাকসুতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অভিষেকের প্রস্তুতি চলছে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ডিসি ড. মো. সামাদ।
অনশনকারীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ
ডাকসুর পুনঃনির্বাচনের দাবিসহ ৪ দফা দাবিতে অনশনরত শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করে তাদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়েছেন নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর, ছাত্রদল, ছাত্র ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টায় নুরুল হক নুর বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীদের নিয়ে অনশনরত শিক্ষার্থীদের কাছে যান। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে ডাকসুর ভিপি বলেন, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীর লাঞ্ছনা ও হেনস্তার অপসংস্কৃিত চালু করতে চায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। এর কিছুক্ষণ পর সেখানে সংহতি জানাতে আসেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের হয়ে ডাকসুর সহ-সভাপতি পদে নির্বাচন করা মোস্তাফিজুর রহমান। সংহতি প্রকাশ করা হয় ছাত্র ফেডারেশনসহ আরো বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে। কারচুপির অভিযোগ থাকায় রোকেয়া হল সংসদ নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন, হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ চার দফা দাবিতে বুধবার রাত ৯টা থেকে আমরণ অনশনে বসেন পাঁচ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে চারজন বিভিন্ন প্যানেল থেকে হল সংসদে প্রার্থী ছিলেন। অনশনে বসা শিক্ষার্থীরা হলেনÑ ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের রাফিয়া সুলতানা, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সায়েদা আফরিন, একই বিভাগের জয়ন্তী রেজা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শ্রবণা শফিক দীপ্তি ও ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের প্রমি খিশা।
অনশনরত ছাত্রীদের রাতের বেলায় হেনস্তায় গোলাম রাব্বানী
বুধবার মধ্যরাতে রোকেয়া হলের গেটে পুনঃনির্বাচনের দাবিতে অনশন করা ছাত্রীদের হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ছাত্রীদের অভিযোগ, গোলাম রাব্বানী নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মধ্যরাতে রোকেয়া হলের প্রধান ফটকে এসে তাদের অপমান করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের হুমকি দেন। বিষয়টি অস্বীকার করে গোলাম রাব্বানী বলেন, রাতে হলের গেট খোলা রেখে অনশনের কথা শুনে আমি অন্য শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেখানে আসি। সেখানে মদ-গাঁজা খেয়ে কয়েকজন আন্দোলন করছে। এখন এদের কারণে অন্যদের ক্ষতি হলে সে দায় কে নেবে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রাত দেড়টার দিকে মোটরসাইকেলে করে ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন গোলাম রাব্বানী। এ সময় তিনি প্রক্টরকে কল দিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সবার ফাইল দেখে চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে বলেন। ডাকসুর নবনির্বাচিত এজিএস সেখানে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের মোবাইলে ছবি দেখিয়ে বলেন, ২টার দিকে বোরকা, নেকাব পরা এরা কারা? ছাত্রী সংস্থা? শিবিরের কর্মী? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের অবস্থান নিষিদ্ধ। হেনস্তার শিকার সায়েদা আফরিন নামের এক শিক্ষার্থী গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, গভীর রাতে ছাত্রলীগ নেতা গোলাম রাব্বানী নেতাকর্মীদের নিয়ে এসে ছবি দেখিয়ে আমাদের মধ্যে একজনকে চরিত্রহীন প্রমাণের চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, আমরা মদ-গাঁজা খেয়ে আন্দোলন করছি। আমাদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের হুমকিও দেন তিনি।
গেটের বাইরে হেনস্তা হওয়ার বিষয় আমাদের কনসার্ন না : রোকেয়া হলের প্রভোস্ট
প্রভোস্টের পদত্যাগ ও ফের ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে অনশনরত ছাত্রীদের হেনস্তার বিষয় আমাদের কনসার্ন না বরং তাদের গেটের বাইরে থেকে ভেতরে নিয়ে আসা আমাদের কনসার্ন বলে মন্তব্য করেছেন রোকেয়া হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. জিনাত হুদা। গতকাল দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার্স ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে হলের সামনে রাতে অনশনরত শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী কর্তৃক হেনস্তার ঘটনা ঘটে। বিষয়টি সম্পর্কে হল প্রভোস্ট অবগত না উল্লেখ করে জিনাত হুদা বলেন, কোনো হাউস টিউটরও আমাকে বিষয়টি অবগত করেননি। সংবাদ সম্মেলনে ডাকসু নির্বাচনের দিন রোকেয়া হলের ঘটনাকে সম্পূর্ণ ‘মিস কনসেপশন’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, আমরা সেদিন গণমাধ্যমকর্মী ও প্রার্থীদের ব্যালট বাক্স দেখিয়েই নির্বাচন শুরু করেছিলাম। তাই এ হলে নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের দিন রোকেয়া হলে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দেন রোকেয়া হলের হাউজ টিউটর দিল আরা জাহান। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো মামলা দেয়া হয়নি উল্লেখ করে প্রভোস্ট বলেন, আমি প্রভোস্ট হিসেবে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করিনি। আমি মামলার কথা গণমাধ্যম থেকে জেনেছি। এ সময় নির্বাচন বাতিল করে পুনঃনির্বাচন দেয়ার এখতিয়ার প্রভোস্টের নেই বলেও জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।