পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু’র এবারের নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয়ের ললাটে কলঙ্কের দাগ বলে দেশের বিশিষ্টজন ও সাবেক ছাত্র নেতারা মনে করেন। দীর্ঘ ২৮ বছর পর ডাকসু’র নির্বাচন যতটা আশান্বিত করেছিল, ভোট শুরুর পর থেকে একের পর এক অনিয়মের ঘটনা ততটাই প্রশ্নবিদ্ধ ও ‘কলঙ্কিত’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। তারা বলছেন, আইয়ুব খানের আমল কিংবা অন্য কোন সামরিক স্বৈরাচারের সময়েও ডাকসু এমন কলঙ্কিত হয়নি। এবারের এই কলঙ্ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ডাকসু’র সুনাম ও সম্মান ধ্বংস করেছে।
বিশিষ্টজন ও সাবেক ছাত্র নেতারা বলেন, প্রশাসনের শুভ বুদ্ধির উদয় হলে দ্রæত নির্বাচন বাতিল করে নতুন কমিটির মাধ্যমে পুনরায় নির্বাচন দেবে। তাহলে হয়তো এই কলঙ্কের কালিমা দূর হবে। আর তা না হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ললাটে যে কলঙ্কের দাগ লেগেছে তা কোন দিনও মুছবে না। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মো: আকতারুজ্জামান ইতোমধ্যে বলে দিয়েছেন , নির্বাচন সুষ্ঠু এবং একইসঙ্গে উৎসবমুখর পরিবেশে হয়েছে। এ ছাড়া প্রো-ভিসি ড. মো: সামাদ বলেছেন, পুননির্বাচনের কোন সুযোগ নেই।
ঢাকসুর নির্বাচন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, এ নির্বাচন নিয়ে যা ঘটেছে তা প্রশাসনিক শৈথিল্যের কারণে ঘটেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে যা ঘটেনি, এমনকি কোন সামরিক স্বৈরাচারের আমলেও যা ঘটেনি তা ঘটেছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করেছে।
সাবেক ডাকসু নেতা ও সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ভোট কারচুপির এটাই আশঙ্কা সবাই করেছিলাম, সেটি আরও নগ্নভাবে প্রকাশ ঘটতে দেখলাম। এধরনের কলঙ্কজনক ঘটনা পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ুব আমলেও ঘটেনি। সেরকম অধঃপতনের মাধ্যমে সারাদেশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্ধকারে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এটা বরদাস্ত করা যায় না। এই কলঙ্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ও ডাকসু’র সম্মান ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান পুনরুদ্ধারে দ্রæত নতুন নির্বাচনের তিনি দাবি জানান।
ডাকসু’র সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকার সমর্থিত সংগঠনকে জিতাতেই হবে বলে এবারের নির্বাচনে এসব অনিয়ম করা হয়েছে। এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের মানুষের ভোটকে হাইজ্যাক করে নিয়ে গেছে। আমি তো আগেই বলেছি, বিভিন্ন টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকায়ও এসেছে যে, এবার ডাকসু নির্বাচন হবে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের একটা রেপ্লিকা। বাস্তবে তাই হয়েছে। এই কলঙ্কিত নির্বাচন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের অর্জিত সুনামকে ধংস করেছে।
ডাকসুর সাবেক সাহিত্য সম্পাদক অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, ডাকসু নির্বাচনের নামে আজ যা ঘটেছে, তাকে নির্বাচন বলার কোনোই যুক্তি নেই। কলঙ্কিত হলেও তো কিছু হয়, এটি হচ্ছে গোটা দেশে নির্বাচনি ব্যবস্থা ধ্বংস করার যে প্রক্রিয়া তারই অংশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ক্ষমতাসীন দলের অন্ধ সমর্থক শিক্ষকরা বুঝেশুনেই এটা করেছেন। তাদের যদি সামান্যতম আত্মসম্মান ও দায়িত্ববোধ থাকে, তবে এই মুহূর্তেই এই নির্বাচন বাতিল করে দেওয়া হবে তাদের কাজ। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাকে আমি ১৯৭৩ সালের ডাকসু নির্বাচনের চেয়েও খারাপ মনে করি। কেননা, সেই সময়ে শিক্ষক ও প্রশাসন অন্ততপক্ষে বলতে পারতো, আমাদের কিছু করার ছিল না। এবার প্রশাসন এই নির্বাচনকে ধ্বংস করেছে। একজন প্রাধ্যক্ষের বরখাস্ত মোটেই যথেষ্ট নয়, প্রশাসনের উচ্চ পদে অসীনদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা উচিত।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, এবারের ডাকসু নির্বাচন ১৯৭৩ সালের পর কলঙ্কের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলো, যা দেশবাসী কোনোক্রমেই প্রত্যাশা করেনি। এবারের ডাকসু নির্বাচনে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। ভোট শুরুর আগেই ব্যালট পেপারে ভোট দিয়ে বস্তাভর্তি করে রাখা, অনাবাসিক ছাত্র ও বিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের ভোট দানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এসব ঘটনা নির্বাচনকে কলঙ্কিত করেছে। পাকিস্তানি স্বৈরাচারী শাসনামলেও ডাকসু নির্বাচনে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার অনুগত প্রশাসন সব প্রকার নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে ডাকসু নির্বাচনে জালিয়াতি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসে কলঙ্ক লেপন করলো। ছাত্রসমাজের দাবি মেনে নিয়ে অবিলম্বে জালিয়াতির ডাকসু নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় তফসিল ও নির্বাচন দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি তিনি আহŸান জানান।
ডাকসুর সর্বশেষ নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন বলেন, ডাকসু নির্বাচনে অনিয়মের আশঙ্কা প্রথম থেকে দেখা গেছে। সব ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি দাওয়াকে উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যখন নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের দিকে যাচ্ছিল, ভিন্ন মতের শিক্ষকদের বাদ দিয়ে নীল দলের শিক্ষকদের দিয়ে নির্বাচন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিলো। ডাকসু নির্বাচনকে যে কলঙ্কিত করবে, তাদের আচার-আচরণে তা প্রকাশ পেয়েছিল। সরকারের আজ্ঞাবহ প্রশাসন এই কলঙ্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও সম্মানকে ধংস করেছে। এর জন্য তাদের কঠিন মূল্য দিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।