Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশ, ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব ও নতুন বিবেচনা

প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হোসেন মাহমুদ
সাম্প্রতিককালে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবেই দৃশ্যমান। সবার জানা যে, বিশ্ব কয়েক দশক আগে দু’বিশ্বশক্তির শীতল যুদ্ধ বা ‘কোল্ড ওয়ার’-এর ভয়ঙ্কর অধ্যায় পেরিয়ে এসেছে। একদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন, আরেক দিকে যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্বের দুই শীর্ষ সামরিক শক্তির মধ্যকার বিরামহীন প্রতিযোগিতায় গোটা বিশ্বকে উভয়ের সপক্ষে টানার বিষয়টি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেখা যায়, সেদিন বিশ্বের বহুসংখ্যক দেশ ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় এ দুই বিশ্বমোড়লের প্রভাব বলয়ে নিজেদের নাম লিখিয়েছিল বা লেখাতে বাধ্য হয়েছিল। সে শীতল যুদ্ধে সৃষ্টি হয়েছিল দুই সামরিক বলয়Ñ যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপে তার মিত্রদের নিয়ে ন্যাটো জোট, অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার পূর্ব ইউরোপীয় মিত্রদের নিয়ে ওয়ারশ’ জোট। জনসংখ্যা, এলাকা, অর্থনীতি বা সম্পদগত বিবেচনায় তুলনামূলক শ্রেষ্ঠত্ব ন্যাটো জোটের থাকলেও সামরিক শক্তিতে কেউ কাউকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছিল কিনা তার সরাসরি কোনো পরীক্ষা হয়নি। সেদিন এ দু’জোটের বাইরে আরেকটি জোট গড়ে ওঠে তৃতীয় বিশ্বের প্রভাবশালী নেতাদের নেতৃত্বেÑ তা হল জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম)। তার মূল উদ্যোক্তা নেতৃবৃন্দ ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরলাল নেহরু, মিসরের প্রেসিডেন্ট জামাল আবদুন নাসের, যুগোশ্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট জোসেফ ব্রোজ টিটো, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ সোয়েকার্নো ও ঘানার প্রেসিডেন্ট কোয়ামে নক্রুমা। উল্লেখ্য, যে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের কোনো কোনো গুরুত্বপূর্ণ সদস্য প্রত্যক্ষভাবে দু’বিশ্বশক্তির মিত্র ছিল। যেমন শুরু থেকেই কম্যুনিস্ট রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল ভারত বা যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ছিল পাকিস্তান যদিও ন্যাম সদস্যদেশগুলোর সাধারণ অঙ্গীকার ছিল কোনো পক্ষে যোগ না দিয়ে নিজেদের শীতল যুদ্ধের বাইরে রাখা। বাস্তব দৃষ্টিকোণ থেকে আজ এত বছর পর সে সময়টির মূল্যায়ন করলে দেখা যায়, ভারত তখনি নেতৃত্বের কারণে আন্তর্জাতিক আঙ্গিনায় নিজের জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়। কিন্তু সে তুলনায় পাকিস্তানি নেতৃত্ব নিজের দেশের অবস্থানকে তেমন উজ্জ্বল করে তুলতে পারেনি। পাকিস্তান পঞ্চাশের দশকেই সিয়াটো, সেন্টো জোটে যোগ দিয়ে মার্কিন নেতৃত্বের ছায়ায় আশ্রয় খুঁজেছিল। সোভিয়েত ঘেঁষা অবস্থান ও মৈত্রী যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের কাছে ভারতের গ্রহণযোগ্যতাকে অনেকটা নেতিবাচক করে রাখে। তবে একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে এসে পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে। বিশ্বশক্তি হিসেবে চীনের ধীর ও অব্যাহত উত্থানের ফলে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন ঘনিষ্ঠ বন্ধু শক্তির আসনে স্থাপন করেছে ভারতকে। দক্ষিণ চীন সাগরে নিজের শক্তির অস্তিÍত্ব জানান দেয়ার পাশাপাশি ভারতের সাথে সামরিক সম্পর্ক রচনায় সৃষ্টি করেছে নতুন রেকর্ড। অন্যদিকে চীনের ব্যাপারে শঙ্কিত ভারত পরিস্থিতি মোকাবেলার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছে। এর প্রমাণ হচ্ছে নয়াদিল্লি সর্বসম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রকে তার সকল নৌঘাঁটি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। তবে বিষয়টি এখানেই থেমে নেই। ভারত ভিয়েতনামসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে সামরিক সম্পর্ক গড়ে তুলছে। জাপানের সাথেও তার সম্পর্ক যথেষ্ট ঘনিষ্ঠ। জাপানও আগের চেয়ে এখন ভারতের অনেক বেশি নিকটে। কারণ, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সামরিক পেশি বিস্তারে উদ্বিগ্ন টোকিও-চীনের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। তাই ভারতের সাথে স্বভাবতই গড়ে উঠছে সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক। নিজের আত্মরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি একদিকে ভারত অন্যদিকে ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনসহ চীনবিরোধী আঞ্চলিক দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি ও সামরিক সহযোগিতা জোরদার করছে দেশটি। তার সর্বশেষ ঘটনায় অতি সম্প্রতি জাপান ফিলিপাইনকে ৫টি সামরিক প্রশিক্ষণ বিমান লিজ দেয়ার কথা জানিয়েছে।
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সামরিক ঘেরাওয়ের প্রেক্ষাপটে চীন-রাশিয়া ও পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক জোরদার করেছে। রাশিয়ার সাথে চীনের সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক অনেক দিনের। এদিকে লক্ষণীয়, চীন-পাকিস্তানের সাথে স্থলপথে অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণের ব্যয়বহুল ও উচ্চাকাক্সক্ষী পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে যা ভারতের প্রবল আপত্তির সম্মুখীন। ইতোমধ্যে চীনা সহযোগিতায় আরব সাগর তীরবর্তী পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দর নির্মাণের কাজ সমাপ্তির পথে। ঘরের কাছে চীনের উপস্থিতির পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারত-ইরানের চাবাহা সমুদ্র বন্দর নির্মাণের চুক্তি সম্পন্ন করেছে। ফলে ভারত মহাসাগরে চীনকে প্রতিরোধের পথে সে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। ওদিকে পাকিস্তান ক্রমাগতভাবে সামরিক দিক দিয়ে ভারতের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। অতি সম্প্রতি ভারত ফ্রান্সের কাছ থেকে ৩৬টি রাফায়েল জঙ্গিবিমান কেনার চুক্তি চূড়ান্ত করেছে যা বিমান শক্তিতে ইতোমধ্যে বিপুলভাবে এগিয়ে থাকা ভারতকে আরো এগিয়ে দেবে। বিমানবাহী জাহাজ ও পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজসহ শক্তিশালী নৌবাহিনী ও সেনাবাহিনী, পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণে সক্ষমতা ভারতকে সামরিক দিক দিয়ে বিশ্বে ষষ্ঠ স্থানে উন্নীত করেছে। পক্ষান্তরে দীর্ঘদিন পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাকিস্তানের ৮টি এফ-১৬ জঙ্গিবিমান পাবার সব কিছু চূড়ান্ত হওয়ার পর বর্তমানে সে পথে কাঁটা পড়েছে। এখন পাকিস্তানকে এ বিমান ও সহায়ক সরঞ্জাম পেতে হলে নগদ ৭০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে যা তার পক্ষে আপাতত অসম্ভব। ফলে এফ-১৬ পাওয়া হচ্ছে না পাকিস্তানের। সেক্ষেত্রে পাকিস্তানকে চীনের সাথে যৌথ উদ্যোগে নির্মিত জেএফ-১৭ জঙ্গি বিমানের ওপরই প্রধানত নির্ভর করতে হবে যা গুণগত মানে এফ-১৬ বা রাফায়েলের কাছাকাছি পর্যায়ের নয়। উল্লেখ্য, পাকিস্তানকে এফ-১৬ জঙ্গিবিমান দেয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভারত বরাবরের মতোই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জোর প্রতিবাদ জানিয়েছিল। কার্যত পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হলেও সেনা, বিমান ও নৌশক্তি তথা সার্বিক সামরিক সক্ষমতায় পাকিস্তান ভারতের চেয়ে অনেক ন্যূন। তার চেয়েও বড় কথা যে যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের কাছে কৌশলগত মিত্র হিসেবে পাকিস্তান আজ আর অপরিহার্য নয়। চীনের মোকাবেলায় পাকিস্তান নয়Ñ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মূল্যবান মিত্র হচ্ছে ভারত। সে বিবেচনায় পাকিস্তানকে পরিত্যাগ করাও তার কাছে তেমন বড় কোনো বিষয় নাও হতে পারে। অন্যদিকে অতি সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সউদি আরব সফর এবং নয়াদিল্লি-রিয়াদ সম্পর্কে নতুন মোড় পাকিস্তানের কপালে গভীর ভাঁজ ফেলার মতোই এক ঘটনা। এর পিছনে রয়েছে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করার ভারতের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। সামরিক বাস্তবতার প্রয়োজনে সউদি আরব যদি ভারতের সাথে সামরিক মৈত্রী বন্ধন রচনা করে তা পাকিস্তানের জন্য বিপর্যয়কর হবে তাতে সন্দেহ নেই। সউদি আরবের পথ ধরে উপসাগরীয় দেশগুলো সম্পূর্ণরূপে ভারতের প্রভাব বলয়ে চলে যাবে। বলা দরকার, মোদির সউদি সফর বিষয়ে পাকিস্তান গভীর নীরবতা পালন করছে। মূলত সব মিলিয়ে এটাই প্রতীয়মান যে মার্কিন-চীন, ভারত-চীন বনাম চীন-মার্কিন, চীন-ভারত অর্থাৎ পরাশক্তি ও উদীয়মান পরাশক্তির মধ্যকার সামরিক প্রতিযোগিতা ও নয়া মেরুকরণের প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তান তার সামরিক গুরুত্ব অনেকটাই হারিয়েছে। পাকিস্তানের সামরিক শক্তির বর্তমান অবস্থা ভারতের জন্য এখন আর আতঙ্কের বিষয় নয়।  
বিশ্বব্যাপী স্বার্থরক্ষা, প্রাধান্য বিস্তার ও নতুন মিত্র সন্ধানের যে প্রতিযোগিতা চলছে তার প্রেক্ষাপটে কিছু বিশেষ দেশের কাছে বাংলাদেশ নতুন করে গুরুত্ব পাচ্ছে বলে দেখা গেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পর জোট নিরপেক্ষ সম্মেলন, ওআইসি সম্মেলন, জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান করার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের পরিচিতি তুলে ধরার ও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার উদ্যোগ নেন। পরবর্তীকালে মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ওআইসিতে সক্রিয় ভূমিকা পালনসহ মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভাবমর্যাদা নির্মাণ করেন। বিশেষ করে তিনি ইরান-ইরাক যুদ্ধ নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। অনেকেরই বিশ্বাস যে তিনি বেঁচে থাকলে এই ভাতৃঘাতী যুদ্ধ বন্ধ করতে সক্ষম হতেন। তারপর থেকে সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা অধিকতর ঔজ্জ্বল্যে উদ্ভাসিত হতে তেমন দেখা যায়নি। বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ব্যতীত বহুল কথিত ‘ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন’ অনুষ্ঠান বিশ্বের এক বিরাট অংশের কাছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে বাংলাদেশ সরকারের ভাবমর্যাদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এ নিয়ে নতুন সরকারকে বছরখানেক সময় প্রায় আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে কাটাতে হয়। কিন্তু ২০১৫-র ৫ জানুয়ারির পর সৃষ্ট সহিংস পরিস্থিতি, সর্বোচ্চ নির্মম পন্থায় আন্দোলন দমন এবং তাকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের তকমা ঘোষিত করার সাফল্য সরকারের জন্য বেশ চাপমুক্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি কেের। ভারত শুরুতেই ও পরে চীন বাংলাদেশের সেই ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনকে সমর্থন ও অনুমোদন করে। পাশাপাশি উভয় দেশই অর্থনৈতিক সহায়তাসহ বিভিন্ন সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়ায়। যেমন চীন রেলসহ পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থসহায়তা দিচ্ছে। অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশকে নতুন করে ঋণ সাহায্য দেয়ার কথা জানিয়েছে যদিও সে ঋণের শর্ত আগের চেয়ে কঠিন বলে জানা যায়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই সরকারের সাথে স্বাভাবিক সহযোগিতা বজায় রাখাসহ বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত কথিত অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণভিত্তিক একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা তারা বারবার বলে আসছে। তার আগে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে দেশটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, কিন্তু একটি সমঝোতা প্রতিষ্ঠার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বরং বারবারই বলেছে যে বাংলাদেশের সমস্যা নিজেদেরই মিটিয়ে নিতে হবে। তাই দেখা যায়, বাংলাদেশ ক্রমাগত রাজনৈতিক সংকটে নিপতিত হয়ে অচলাবস্থায় উপনীত হলেও যুক্তরাষ্ট্র তা নিরসনে কখনো এগিয়ে আসেনি।
বিদ্যমান অবস্থায় দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের সাথে সর্বকালের সর্বাপেক্ষা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রচিত হয়েছে ভারতের। এ সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে দু’দেশেরই আগ্রহ অপরিসীম। এরপরই বাংলাদেশের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে চীনের। সর্ব সম্প্রতি সউদি বাদশাহ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সে দেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ঢাকার সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে তেহরান প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী ৩ মে ঢাকা সফরে এসেছেন। স্বাক্ষরিত হয়েছে সামরিক সহযোগিতাসহ ৪টি চুক্তি।  
বাংলাদেশকে নিয়ে এখন অনেকেরই জোর আগ্রহ। সে আগ্রহ ক্রমবর্ধমান। বলতে হয়, প্রতিবেশী বা নিকট প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান বা শ্রীলংকা যে গুরুত্ব পাচ্ছে না সে গুরুত্ব পাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে এটা বলা দরকার যে সম্পদ বা নেতৃত্বের জন্য নয়, বাংলাদেশের এ গুরুত্ব ভূ-রাজনৈতিক কারণে। ভারত যে কোনো অবস্থায় বাংলাদেশকে হাতে রাখতে চায়। উত্তরপূর্ব ভারতের ব্যাপারে শঙ্কামুক্ত থাকতে এটাই তার একমাত্র ও সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। অন্যদিকে চিরশত্রু পাকিস্তানকে কোণঠাসা করে রাখতেও তার বাংলাদেশকে প্রয়োজন। ভারতের ব্যাপারে চীন-বাংলাদেশকে অন্তত নিষ্ক্রিয় রাখার আশা হয়ত পোষণ করে। আর যুক্তরাষ্ট্র তার আগামীর কৌশলগত স্বার্থে সহযোগিতা পেতে বাংলাদেশকে হাতে রাখতে চায়। এমন চুক্তি করতে চায় যাতে বাংলাদেশে প্রয়োজনে তার সামরিক উপস্থিতির পথ সুগম হয়। সে লক্ষ্য অর্জনেই দেশটিকে অতিমাত্রায় সক্রিয় মনে হচ্ছে। বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের ভোটাধিকার হারানো বা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বিষয় তাদের কাছে নিতান্তই অপ্রধান। নিজের স্বার্থ এবং শুধু স্বার্থই তাদের কাছে একমাত্র বিবেচ্য।
বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য যে প্রবল প্রতাপ বিশ্বশক্তি এবং উদীয়মান দু’বিশ্বশক্তির কারো কাছেই আজ বাংলাদেশে গণতন্ত্র, নতুন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান বা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। তারা বাংলাদেশকে তাদের বৃহত্তর স্বার্থে ব্যবহার করছে ও করতে চায়, যা কিছু নেয়া সম্ভব নিচ্ছে ও নিতে চায়। অতীতের সরকারগুলো দেশকে অন্যের স্বার্থে ব্যবহৃত হতে না দিলেও সাম্প্রতিক ইতিহাস তার ব্যতিক্রম। বিশেষ করে একটি দেশের স্বার্থের ব্যাপারে সরকারের অতি আগ্রহী ভূমিকা দেখে মনে হতেই পারে যে বাংলাদেশ শুধু দিতেই জানে, নিতে নয়।
স্বদেশ প্রেমিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মনে করেন যে বাংলাদেশ সরকার দেশের কৌশলগত অবস্থান ও ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের প্রতি বিশ্বশক্তি ও আগামী বিশ্বশক্তি সমূহের আগ্রহ ও মনোযোগের যথাযথ ও সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেবে। পাশাপাশি জাতীয় স্বার্থ রক্ষায়ও অবশ্যই সুবিবেচনার পরিচয় দেবে। সেটাই সর্বতোভাবে কাক্সিক্ষত।
য় লেখক : সাংবাদিক
যথসধযসঁফনফ@ুধযড়ড়.পড়স



 

Show all comments
  • Arsad ৬ অক্টোবর, ২০১৯, ৬:৫০ পিএম says : 0
    আপনাদের ওয়েবসাইটে লেখাগুলো ভেঙে গেছে। গুগ্ল ক্রোম এবং মজিলা ফায়ারফক্ষ ব্রাউজারে...
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ