Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস

প্রচার-প্রচারণা শেষ : ছাত্রলীগের ভোট ব্যাংক গণরুমের শিক্ষার্থীরা ছাত্রী হলে এগিয়ে বিরোধীরা

নুর হোসেন ইমন | প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

দীর্ঘ প্রায় ৩ দশক পর জট খুলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের। ডাকসু ভোটগ্রহণের আগে গতকাল শনিবার রাত ১২টায় প্রচার-প্রচারণা শেষ হয় হয়েছে। এর আগে গত ৩ মার্চ প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর শুরু হয় প্রচার প্রচারণা। ৬ দিনের প্রচার প্রচারণায় নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ উঠলেও কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি প্রশাসনকে। রঙ্গিন পোস্টার সাঁটনো, মসজিদে ভোট চাওয়া, প্রতিপক্ষকে আর্কমন করে বক্তব্য দেয়াসহ একের পর এক আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। আচরণ বিধি লঙ্ঘনে পিছিয়ে ছিলো না অন্যরাও। দেশের মিনি পার্লামেন্ট খ্যাত ডাকসুর আগামীকালের এ নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে ভিপি-জিএস-এজিএসসহ কেন্দ্রীয় সংসদের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো এককভাবে পাওয়া কোন প্যানেলের পক্ষেই সম্ভব হবে না। ছাত্রলীগ ছাড়া অন্যান্য প্যানেল থেকে হলগুলোতে সব পদে প্রার্থী দিতে না পারা ও গণরুমে অবস্থানরত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকায় ছাত্রদের কয়েকটি হলে ছাত্রলীগের প্রার্থীরা এগিয়ে থাকলেও ছাত্রীহলগুলোতে এগিয়ে আছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
গতকাল শনিবার প্রচারণার শেষ দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও হলগুলো সরজমিনে পদক্ষিণ করে দেখা যায়, এদিন ক্যাম্পাসে প্রচার প্রচারণার চেয়েও হলের প্রচারণায় অধিক মনোযোগি ছিলো প্রার্থীরা। ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হলে প্রচার প্রচারণা চালিয়েছেন। এদিন দুপুরে শহীদুল্লাহ হল, ফজলুল হক মুসলিম হল, অমর একুশে হলসহ পাঁচটি হলে প্রচারণা চালান কোটা আন্দোলনকারীদের নুরুল-রাশেদ-ফারুক পরিষদ। কেন্দ্রীয় প্রার্থীরা ক্যাম্পাসে সক্রিয় থাকলেও ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের প্রার্থীরা বিভিন্ন হলের কক্ষে কক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে ভোট চেয়েছেন। প্রচারণায় সবদলকে এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যায় কাজ করার আশ্বাস দিয়ে সবদলই প্রকাশ করেছে ইশতেহার।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কোন প্যানেল দেখে নয় যারা তাদের নায্য দাবিতে দীর্ঘদিন সমর্থন দিয়েছে তাদেরই ভোট দেবেন তারা। শেষ মুহূর্তে শিক্ষার্থীরা আগামীদিনে কাদেরকে তাদের নেতা হিসেবে বেছে নিবে তা নিয়ে চলছে নানা হিসাব। ডাকসুর ২৫পদ ও হল সংসদের ১৩ পদসহ প্রতি ভোটার ভোট দিবেন ৩৮টি। ৩৮টি পদের মধ্যে ভিপি-জিএস-এজিএসসহ শীর্ষ পদগুলোতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। কেন্দ্রীয় সংসদে ভিপি পদে শক্ত প্রতিদ্বন্ধীতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুরের মধ্যে। এপদে প্রতিদ্বন্ধীতা করা ১৯ জনের মধ্যে আলোচনায় থাকা অন্যান্যরা হলেন ছাত্রদল প্যানেলের মোস্তাফিজুর রহমান ও বামজোটের লিটন নন্দী। ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন অধিপত্য বিরাজ করা ছাত্রলীগের প্রার্থী হওয়ায় অনেকে শোভনকে এগিয়ে রাখলেও কোটা আন্দোলনে সফল নেতৃত্ব দেয়া, ছাত্রলীগ ও পুলিশের হাতে নির্যাতিত হওয়া, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনসহ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অধিকার আদায়ে সোচ্চার থাকায় নুরুল হক নুরকে অপ্রতিদ্বন্ধী ভাবছেন অনেকে। আবার ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতাদের থেকে শোভনের সাংগঠনিক দুর্বলতাও এগিয়ে রেখেছে নুরকে। জিএস পদে মূল লড়াই আভাস পাওয়া যাচ্ছে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এ আর এম আসিফুর রহমানের মধ্যে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির দু’বারের নির্বাচিত সভাপতি ও একটি প্রভাবশালী জাতীয় দৈনিকের সাবেক নিজস্ব প্রতিবেদক আসিফ দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের পক্ষে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। শিক্ষক, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল সব ছাত্রসংগঠনের কাছে তার সমান গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। জিএস পদে আলোচনায় থাকা অন্যান্যদের মধ্যে রয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্রার্থী রাশেদ খাঁন, ছাত্র ফেডারেশনের প্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজীর ও ছাত্রদলের আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক। এজিএস পদে মূল লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে ছাত্রলীগের প্রার্থী সাদ্দাম হোসেন ও কোটা আন্দোলনকারীদের ফারুক হাসানের মধ্যে। ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিনের পরিচিত মুখ ছাত্রলীগের প্রার্থী সাদ্দাম হোসেনের শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা থাকলেও ফারুক হোসেনকেও এপদে শক্ত প্রতিদ্বন্ধী হিসেবে ধরা হচ্ছে।
এদিকে ছাত্রদের হলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের একক আধিপত্য, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের গণরুমগুলো ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকায় হলগুলোতে সব পদে প্রার্থী দিতে পারেনি বিরোধীরা। তবে ছাত্রীদের হলগুলোতে স্বতন্ত্র ও কোটা আন্দোলনকারীদের জনপ্রিয় প্রার্থী থাকায় শঙ্কায় রয়েছে ছাত্রলীগ। মোট ভোটারের এক তৃতীয়াংশের বেশি ভোট ছাত্রী হলে থাকায় কেন্দ্রেও জয় পরাজয় নির্ধারণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে ছাত্রী হলের ভোটাররা। ছাত্রলীগের এজিএস প্রার্থী সাদ্দাম হোসেন বলেন, বিগত দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুখে-দুঃখে একমাত্র ছাত্রলীগই পাশে ছিলো। তাই আমরা আশা করছি আগামী ১১ মার্চ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগকেই পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে বিজয়ী করবে। এদিকে নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদি হলেও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে কোটা আন্দোলনকারীদের ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অধিকার নিয়ে আমরা কাজ করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছি। তাই ডাকসু নির্বাচনে আশা করছি তারা আমাদেরই বেছে নিবে। তবে প্রশাসন এ নির্বাচনকে নিয়ে যদি কোন কারচুপির আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করে আমরা সব সংগঠনের সাথে কথা বলে একসাথে আন্দোলন করবো। স্বতন্ত্র প্রার্থী এ আর এম আসিফুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন রকমের উৎকন্ঠার মধ্যে আছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকে বেরিয়ে এসে এ নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের থেকেই তাদের নেতা নির্বাচন করবে।



 

Show all comments
  • Md Masud Khan ১০ মার্চ, ২০১৯, ১:৪২ এএম says : 0
    ভোট ডাকাতির আভাস কি পাচ্ছেন না???
    Total Reply(0) Reply
  • Jahangir Kabir ১০ মার্চ, ২০১৯, ১:৪৩ এএম says : 0
    ১০০% ভূয়া একটা নিউজ। কি কমু, বললাম না। মনে মনেই বললাম। শুধু অাল্লাহ স্বাক্ষী।
    Total Reply(0) Reply
  • Sardar Moheuddin Sohaag ১০ মার্চ, ২০১৯, ১:৪৩ এএম says : 0
    আসলে ভোটে ছাত্রলীগের কোন অবস্হানই নাই,, কিছু পত্রিকা নিউজ করে ছাত্রলীগকে এগিয়ে নিতে চায়,, যাতে খপ্পরে পড়ে কিছু সহজ-সরল শিক্ষার্থী ভোট দেয়,,,
    Total Reply(0) Reply
  • মুহাঃ সিরাজুল ইসলাম সিরাজী ১০ মার্চ, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
    ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন সমর্থিত। আতায়ে রাব্বি-মাহমুদুল হাসান-শরিয়াত উল্লাহ প্যানেল এর জন্য শুভ কামনা
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ সোহরাব হোসেন ১০ মার্চ, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
    কোটা সংস্কার, প্রশ্ন ফাঁস এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল যৌক্তিক আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্যানেল বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ #নুরুল_রাশেদ_ফারুক পরিষদ। #অধিকার_অাদায়ে_ডাকসু আপনার মূল্যবান ভোট দিন।
    Total Reply(0) Reply
  • উসওয়াতুন হাসানা ১০ মার্চ, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
    অনেকের কাছ থেকে যা শুনতেছি তাতে নিরপেক্ষ প্যানেল হিসাবে পরিচিত নুরুল রাশেদ ফারুক পরিষদ বিপুল ভোটে জয়ী হতে পারে।
    Total Reply(0) Reply
  • Jessica Jecy ১০ মার্চ, ২০১৯, ১:৪৬ এএম says : 0
    সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হলে, কোটা সংস্কার আন্দোলন নেতারা বিপুল ভোটে বিজয় হবে এটা নিশ্চিত।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Irfanur ১০ মার্চ, ২০১৯, ১:৪৭ এএম says : 0
    ডাকসু নির্বাচন অামি সাধারণ জনগণ এর পক্ষে হয়ে বলব সুষ্ঠু নিবার্চন হলে কোটা সংস্কার অান্দোলন কারীরা বিজয়ী হবে ইনশাআল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • Rimon A Hossain ১০ মার্চ, ২০১৯, ১:৪৭ এএম says : 0
    ছাত্রলীগ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন অনকে বেশি পরিনত মনে হচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Jakir Tarafdar ১০ মার্চ, ২০১৯, ১:৪৭ এএম says : 0
    দলিয় রাজনীতি বাদ দিয়া ছাএ সংগটন করলে জাতি ভালো মানুষ পেত।
    Total Reply(0) Reply
  • Sanaullah Ashiki ১০ মার্চ, ২০১৯, ১০:৩৯ এএম says : 0
    ডাকসু নির্বাচন ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের মত সুস্থ হবে এটাই বিশ্বাস করেন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডাকসু

৩ নভেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ