পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের সফলতা আসতে শুরু করেছে। সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নতির পাশাপাশি নতুন নতুন বিনিয়োগও আসছে। বিদেশি এই বিনিয়োগ দেশের অর্থনীতিতে অভাবনীয় পরিবর্তন আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সউদী বিনিয়োগ বাড়লে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোও নতুন নতুন বিনিয়োগে উৎসাহী হবে।
সউদী সরকার ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। চীন, আমেরিকা, ইউরোপের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়িয়ে দিচ্ছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে উৎপাদিত ও তৈরি নতুন নতুন পণ্যের বাজার সৃষ্টির ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক প্রচেষ্টায় কার্যত বাংলাদেশের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন।
জানা গেছে, জ্বালানি খাতের পাশাপাশি অন্যান্য খাতেও বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে সউদী আরব। তারই অংশ হিসেবে সম্প্রতি দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান পাকিস্তান সফরকালে সে দেশে দুই হাজার কোটি ও ভারত সফরকালে দেশটিতে ১০ হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আজ বুধবার ঢাকা আসছে সউদী আরবের দুই মন্ত্রীসহ বিনিয়োগ সংক্রান্ত একটি প্রতিনিধিদল। তাদের এ সফরকে কেন্দ্র করে দুই হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব তৈরি করেছে বাংলাদেশ।
জানা গেছে, সউদী প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান মনোনীত ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলটি আজ বুধবার রাতে ঢাকা পৌঁছবে। সউদী সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা এবং বাণিজ্য-বিনিয়োগমন্ত্রী থাকছেন প্রতিনিধিদলে। এছাড়া একজন উপমন্ত্রী ও কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও থাকছেন। প্রতিনিধিদলের সফরটি হবে একদিনের। আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাতেই প্রতিনিধিদলের ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে। এদিন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দলটির আলোচনা-মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার সূচি নির্ধারিত আছে। সউদী মন্ত্রীদের নেতৃত্বাধীন দেশটির এযাবৎকালের সর্ববৃহৎ প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে কয়েকটি সূত্র।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সউদী আরবের এত বেশিসংখ্যক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধির বাংলাদেশ সফর এটিই প্রথম। দেশটির অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মোহাম্মেদ আল তোয়াইজরি এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক মন্ত্রী ড. মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবির নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি এ সফরে আসছে। সউদী ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট ও পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট-বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারাও থাকছেন প্রতিনিধিদলে।
সূত্র জানায়, সউদী প্রতিনিধিদলের সফর সামনে রেখে দুই হাজার কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগের একটি প্রস্তাব চ‚ড়ান্ত করেছে ঢাকা। পর্যটন, জ্বালানি, অবকাঠামো খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এ প্রস্তাবনা তৈরি করেছে। তবে সউদী মন্ত্রীদের সফরে দ্বিপক্ষীয় কোনো চুক্তি বা সমঝোতা হবে কি না, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
গত মাসে সউদী মন্ত্রীদের বাংলাদেশ সফরের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি আশা করেন, এই সফরে বড় বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হবে।
সউদী আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন বেশ গভীর। দেশটিতে গত কয়েক বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একাধিক সফরসহ সউদী আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক সহযোগিতা বেড়েছে। সউদী আরবের নেতৃত্বে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ৩৪টি মুসলিমপ্রধান দেশ নিয়ে গঠিত সামরিক জোটে রয়েছে বাংলাদেশ। আর গত ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিরক্ষা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে ঢাকা ও রিয়াদ। এর আগে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী সউদী আরব সফর করেন। ২০১৭ সালে আরব ইসলামিক-আমেরিকান শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য তিনি রিয়াদ যান। ২০১৮ সালে দাম্মামে গালফ শিল্ড-১ নামে যৌথ সামরিক মহড়ার সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া ছাড়াও একই বছরের অক্টোবরে সউদী আরবে যান প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে গত সোমবার সউদী আরবের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ এইচ এম আল মুতাইরির সঙ্গে সাক্ষাৎকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, সউদী আরবের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দুই হাজার একর জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি খাতে বিনিয়োগকে টেকসই করতে এই শিল্পাঞ্চলগুলো গড়ে তুলেছে সরকার। তিনি বলেন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জমিগুলো সউদী বিনিয়োগকারীরা নিজস্ব চাহিদা মোতাবেক ব্যবহার করতে পারবেন। মুস্তফা কামাল বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সউদী-বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যা ছিল এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ বিনিয়োগ আরো বৃদ্ধি করে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগগুলোর পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করতে হবে।
এ সময় সউদী রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ ও সউদী আরবের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভূতপূর্ব গতি সঞ্চারিত হওয়ায় সউদী সরকার সন্তুষ্ট। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর সউদীতে প্রচুর পরিমাণে মানুষ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে গমন করে। শুধু এ বছরেই ওয়ার্ক ভিসা দেয়া হয়েছে ৮ হাজার ৩০০, ওমরা ভিসা ৮০ হাজার এবং ১ লাখ ২৮ হাজার হজ ভিসা দেয়া হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক সম্প্রসারণে দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ ও সহযোগিতার ধারা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত।
জানা গেছে, সউদীসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর বিনিয়োগকারীরা এখন নতুন নতুন বিনিয়োগে বাংলাদেশমুখী হয়ে পড়ছেন। টানা তৃতীয়বারের মতো দায়িত্ব গ্রহণের পর গত মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মানি হয়ে আমিরাত সফর করেন তখন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভাইস প্রেসিডেন্ট, দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এছাড়াও সে দেশের আরো কয়েকজন মন্ত্রী ও শিল্পপতির সঙ্গে বৈঠক করেন। কয়েক মাস আগে তিনি সউদী আরব সফরে গিয়ে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সউদের সাথে বৈঠক করেন। এসব বৈঠকের ফসল হচ্ছে বাংলাদেশে মধ্যপ্রচ্যের প্রভাবশালী দেশগুলোর নতুন নতুন বিনিয়োগের উদ্যোগ।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সর্ম্পক দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে অভাবনীয় পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ হিসেবে তারা বলেন, রেমিট্যান্স আয়ের বৃহৎ অংশই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে আসে। দীর্ঘ চার বছর আমিরাতে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ বন্ধ থাকার পর শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়া বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সাফল্য। জনশক্তি রফতানি শুরু হলে এর মাধ্যমে রেমিট্যান্স আয়ের বড় সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। এছাড়া বাংলাদেশের হালাল পণ্য বিশেষ করে মাছ, শাক-সবজি ও গরু-খাসির গোশত নিতে চায় সউদী আরব। নতুন বাজার অনুসন্ধান ও নতুন নতুন পণ্য রফতানিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বড় ফ্যাক্টর হয়ে ওঠার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকান্ড যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে; বিদেশী বিনিয়োগ অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি অনেক প্রভাবশালী দেশকে ছাড়িয়ে যাবে বলে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজি মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, সউদী প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বিনিয়োগের জন্য সম্ভাব্য ৩০ থেকে ৩৫টি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হতে পারে। প্রকল্পগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত সউদী প্রতিনিধিদলের বৈঠকের পরই জানা যাবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
সূত্র মতে, গত বছর অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকালে এই উন্নয়ন ঘটে। রিয়াদে তিনি সউদী ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে বাংলাদেশে বাণিজ্য সুযোগ ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ওই সময় শেখ হাসিনা সউদী বাদশাহ প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সউদের সাথেও সাক্ষাৎ করেন, এ সময় সউদী বাদশাহ বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বিডার কর্মকর্তারা জানান, সউদী প্রতিনিধিদলটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মাল্টি বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করবে। সূত্র মতে, রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠানো প্রকল্পের বিস্তারিত প্রস্তাবনায় দেখা যায়, উপসাগরীয় দেশটির সরকার ও বোয়িং কোম্পানির যৌথ মালিকানাধীন সউদী আরবের একমাত্র বিমান মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র ‘আল সালাম এরোস্পেস’ লালমনিরহাটে একই ধরনের একটি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণে আগ্রহী। এ প্রকল্পগুলো ছাড়াও সউদী উদ্যোক্তাদের জন্য দেশের বিভিন্ন উদীয়মান খাত পুঁজিবাজার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, টেলিকমিউনিকেশন, তথ্যপ্রযুক্তি, পেট্রোকেমিক্যাল, ওষুধ শিল্প, জাহাজ নির্মাণ, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ খাত, হালকা প্রকৌশল শিল্প, ব্ল-ইকোনমি, গবেষণা, উন্নয়ন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন, পানি ও সমুদ্র সম্পদসহ অন্যান্য ভৌত অবকাঠামোগত প্রকল্প; সেবামূলক খাত যেমন- ব্যাংক, অর্থনীতি ও লজিস্টিকস এবং মানবসম্পদ খাতেও বিনিয়োগের জন্য বড় অঙ্কের বিনিয়োগ সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ। এদিকে সম্প্রতি বিশ্বের এক নম্বর তেল উত্তোলনকারী দেশটি বাংলাদেশে তেল পরিশোধনাগার নির্মাণের জন্য বড় ধরনের বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। সউদী আরবের জাতীয় তেল কোম্পানি অ্যারামকো বাংলাদেশে ২০ মিলিয়ন টন ক্ষমতার একটি পরিশোধনাগার নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।