পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়ের ওয়াহেদ ম্যানশনের দোতলা থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়। দ্বিতীয় তলায় থাকা দাহ্য প্রসাধনী ও অন্যান্য কেমিক্যাল সামগ্রী বিস্ফোরণের পর পরই আগুনের তীব্রতা বেড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি ভবনে বিপুল পরিমান কেমিক্যাল থাকায় বৈদ্যুতিক সুইচ অন করার সময় স্ফুলিঙ্গ বা অসাবধানতাবশত জ্বালানো আগুন থেকে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। বিপুল পরিমাণে অতি দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন লাগার পর বিস্ফোরণের দেয়াল ভেঙে পড়েছে এবং অভ্যন্তরীণ দেয়ালের পলেস্তরা খসে পড়ে। হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি) এর তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। গত শনিবার আইইবি’র তদন্ত প্রতিবেদনটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আইইবি’র সাধারণ সম্পাদক (সম্মানী) খন্দকার মনজুর মোর্শেদ দৈনিক ইনকিলাবকে, প্রতিবেদনে আগুন লাগার কারণ এবং কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন বা আমলে নিলে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না বলে আমরা মনে করি। কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট এলাকায় কেমিক্যাল গোডাউন রাখা হলে একদিকে যেমন অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটনার সম্ভাবনা কমে যায়, অন্যদিকে কোন দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রানহানীর আশংকা কম থাকে।
তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনের আশপাশের এলাকা পরিদর্শনের সময় দেখা গেছে ঘটনাস্থলে ডিপিডিসি’র বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ছিল না। বিদ্যুৎ বিতরণ লাইনেও শর্ট সার্কিটের কোনও আলামত পাওয়া যায়নি। ট্রান্সফরমার যেখানে ছিল সেখানে তা অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণ লাইনও অক্ষত ছিল। প্লাস্টিক দানা নেয়ার জন্য যে পিকআপটি ওয়াহেদ ম্যানশনের নিচে দাঁড়িয়ে ছিল, তা ডিজেলচালিত। আরেকটি একটি পিকআপ/মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ওয়াহেদ ম্যানশনের দ্বিতীয় তলায় বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী ভস্মীভূত ও প্রায় অক্ষত অবশিষ্টাংশ দেখা যায়। এর মধ্যে যেসব সামগ্রীর লেবেল অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে সেগুলো হচ্ছে-বাদামের তেল, রেড়ীর তেল, অলিভওয়েল, এয়ার ফ্রেশনার ও সুগন্ধী। এছাড়া আরও কিছু প্রসাধনীও অক্ষত অবস্থায় ছিল।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, সিসিটিভি’র ফুটেজ ও মোবাইল ক্যামেরার কিছু ভিডিওতে আগুন ছড়িয়ে পড়তে দেখে অনেকেই দাবি করেছে, আগুন ওয়াহেদ ম্যানশনের বাইরে থেকে শুরু হয়ে ভবনে ছড়িয়েছে। মসজিদের পাশের সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে এয়ার ফ্রেশনারের ক্যান এসে পড়ছে রাস্তার ওপর। তাতে আপাতত দৃষ্টিতে আগুন ওয়াহেদ ম্যানশনের দ্বিতীয় তলা থেকে শুরু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া বিপুল পরিমাণে অতি দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন লাগার পর বিস্ফোরণের দেয়াল ভেঙে পড়েছে এবং অভ্যন্তরীণ দেয়ালের পলেস্তরা খসে পড়ে। তবে ভেতরের দিকে অক্সিজেনের সরবরাহ কম থাকায় আগুন সেদিকে বাড়তে পারেনি। এজন্য ওয়াহেদ ম্যানশন সংলগ্ন ওয়াহেদ মঞ্জিলের কোনও ক্ষতি হয়নি। তার বদলে আগুন রাস্তার দিকে ছড়িয়ে পড়ে। বিপরীতমুখী নানা তথ্য থাকায় ঘটনাস্থলের পরিপূর্ণ ফরেনসিক তদন্ত প্রয়োজন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ওয়াহেদ ম্যানশনের দ্বিতীয় তলায় প্রসাধনী সামগ্রী মজুদ ছাড়াও খালি ক্যানে পারফিউম, এয়ার ফ্রেশনার রিফিল করা হতো। এগুলো উদ্বায়ী ও দাহ্য পদার্থ। পারফিউমের অন্যতম উপাদান ইথানলের ফ্ল্যাশ পয়েন্ট ১৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এয়ার ফ্র্রেশনারের ক্যানে প্রোপিল্যান্ট হিসেবে এলপিজি ব্যবহৃত হয়। বাতাসে এয়ার ফ্র্রেশনারের ঘনত্ব আনুমানিক শতকরা একভাগ হলেই তা দাহ্যতার নিম্নসীমা অতিক্রম করে এবং স্ফুলিঙ্গের উপস্থিতিতে আগুন ধরে বিস্ফোরণ হতে পারে। এলপিজি সাধারণত নিচু ও বন্ধ জায়গায় জমা হয়। জমাটবাধা এলপিজি অনেকদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে এবং স্ফুলিঙ্গের সংস্পর্শে আসামাত্র ফ্ল্যাস ব্যাকের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।
প্রতিবেদনে সার্বিক পযালোচনায় বলা হয়েছে, রাজধানীতে ৫৪টি সংস্থা উন্নয়নমূলক কাজ করে। এই সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাব ও কর্মপরিধির মধ্যে দ্বৈততা রয়েছে। এ কারণে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়। এই সংস্থাগুলোর কর্মকান্ড মনিটরিংয়ের জন্য একক কোনও মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি নিয়োজিত নেই। ফলে বছরব্যাপী খোঁড়াখুঁড়িসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। সংস্থাগুলোর জন্য যেসব আইন ও বিধি রয়েছে সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ নেই বিধায় পুরান ঢাকায় কেমিক্যালের ব্যবসা বহুদিন ধরে চলছে, যা খুবই ঝুঁঁকিপূর্ণ।
প্রতিবেদনে করা সুপারিশ এগুলো হলো- আইন ও বিধির অসামঞ্জস্যতা অবসানে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি করা একান্ত প্রয়োজন। সেই কমিটির মাধ্যমে সংস্থাগুলোর সব আইন ও বিধির সমন্বয় করে নতুন একটি সমন্বিত আইন ও বিধি প্রণয়ন করা। যার যার কর্মপরিধি অনুযায়ী সমন্বিতভাবে কার্য সম্পাদন করা ও কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ করা।
এতে আরও বলা হয়েছে, পুরান ঢাকার রাস্তাগুলো অত্যন্ত সরু এবং সড়কগুলো যানবাহন চলাচলের অযোগ্য। এই এলাকার বাসিন্দাদের পর্যায়ক্রমে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে নতুনভাবে পরিকল্পিত নগরায়ণের লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেয়া। কেরানীগঞ্জ বা সাভারে কেমিক্যাল পল্লি গঠনের মাধ্যমে দাহ্য পদার্থের গোডাউন সরানোর ব্যবস্থা করা। কেমিক্যাল ব্যবসায়ী, গুদামজাত ও পরিবহনে নিয়োজিত সবাইকে কেমিক্যাল ব্যবহার ও সংরক্ষণের ঝুঁঁকিগুলো সম্পর্কে অবহিত করা এবং তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। বিস্ফোরক দ্রব্যাদির আমদানি, মজুত, বিতরণ ও ব্যবহারের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য একটি জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করা। বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনসিসি) এবং ইমারাত নির্মাণ বিধিমালার প্রয়োগ নিশ্চিত করা। রাজউক ও সিটি করপোরেশন আইন ও বিধির যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ২০ ফেব্রুয়ারির ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ২৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কমিটি গঠন করে আইইবি। পরে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও লোকজনের সাথে কথা বলে প্রতিবেদনটি তৈরি করে। আইইবি’র সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী নুরুল হুদাকে আহ্বায়ক এবং সহকারী সাধারণ সম্পাদক (একাডেমিক ও আন্তর্জাতিক) প্রকৌশলী কাজী খায়রুল বাশারকে সদস্যসচিব করে ৭ সদস্য ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।