Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকারকে দায়িত্বহীনতার জবাবদিহি করতে হবে

শোকসভায় ড. কামাল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

পুরান ঢাকার চকবাজারে অগ্নিকান্ডে প্রাণহানি ঘটনা রোধে সরকারের ভূমিকা দায়িত্বহীন বলে মন্তব্য করেছেন ড. কামাল হোসেন। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় সরকারকে দায়িত্বহীনতার জবাবদিহি করতে হবে বলে মন্তব্য করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি। তিনি বলেন, ৯ বছর আগে ২০১০ সালে নিমতলিতে এরকম অগ্নিকান্ডে ১২৪ জন মারা গিয়েছিলো। নিমতলীর থেকে এই জায়গা (চকবাজারের চুঁড়িহাট্টা) খুব কাছেই। ওই সময়ে হাইকোর্ট থেকে পুরান ঢাকাকে নিরাপদ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দিয়েছিলো যাতে নিমতলির মতো অগ্নিকান্ডের ঘটনা না ঘটে। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে আমরা কোনো পদক্ষেপ দেখিনি, নিরবতা লক্ষ্য করেছি। হাইকোর্ট এরকম আদেশের পরেও কেনো তারা (সরকার) দায়িত্বহীনতা থাকবে? জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তো রাষ্ট্রের কর্তব্য, সরকারের দায়িত্ব-কর্তব্য।
গতকাল (মঙ্গলবার) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে চকবাজারে অগ্নিকান্ডে নিহতদের স্মরণে আয়োজিত এক নাগরিক শোকসভায় তিনি এসব কথা বলেন। এই শোকসভার আয়োজন করে গণফোরাম।
ড. কামাল হোসেন বলেন, নিমতলীর অগ্নিকান্ডের পর ১৭ দফা সুপারিশ করা হয়েছিল। সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। কেনো হয়নি? সবাই মিলে আমরা জবাব চাই। এই ৯ বছরে কি করা হয়েছে? আর এই (চকবাজাররের) ঘটনা ঘটার সাথে সাথে কি করা হচ্ছে? পুরান ঢাকাকে হুমকির মুখ থেকে সরানোর কথা বলা হয়েছে। এই দশ দিনের মধ্যে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে আগামীতে কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে সেগুলো আমরা জানতে চাই। পরিকল্পিতভাবে এই ধরনের অগ্নিকান্ডের হাত থেকে বাঁচতে কি করা হচ্ছে, কৈফিয়ত চাই। কারণ জনগণ দেশের মালিক। সে হিসেবে আমরা জবাব চাইতে পারি। এটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ক্ষমতায় থেকে ৯ বছরে কি করেছেন আপনারা? আমি বলব না যে আপনারা ঘুমিয়েছিলেন। আপনারা একদম যে ঘুমিয়েছিলেন না এর প্রমাণ আপনাদের দিতে হবে। এই কয়েক দিনে কিছুই করা হয়নি। যারা ক্ষমতায় থাকে তারা অনেক কিছু করতে পারে। তারা যদি কোনো পদক্ষেপ নিতেন তাহলে এতোগুলো প্রাণ মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতো।
কামাল হোসেন বলেন, এদেশ কারো পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। দেশের মালিক জনগন- এটা আমার কথা নয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানে তিনিই লিখে দিয়ে গেছেন, স্বাক্ষর করে গেছেন। যারা ক্ষমতায় আছেন তাদের দেশের মালিকদের মনে রাখতে হবে।
গণফোরাম সভাপতি বলেন, সরকার নিজেদের কিভাবে নির্বাচিত দাবি করে? মানুষের অধিকার হরণ করে ক্ষমতায় বসে আছে। তাই জনগনের অধিকারের কোনো মূল্য তাদের কাছে নেই। এ কারণেই আদালতের আদেশের পরও গত নয় বছরেও নিমতলী আগুনের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন বাস্তবায়ন হয়নি।
জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, তাদের (সরকার) দায়-দায়িত্বহীনতার কারণে চকবাজারের অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। মানুষের জীবন রক্ষা করার জন্য যারা রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেন তাদের এটা দায়িত্ব। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, একটা রাষ্ট্রে সরকার থাকলে সেদেশে এতো মানুষ মারা যাওয়ার পরে তাদের জন্য শোক প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিতে ৫দিন সময় লাগে। কত অপদার্থ কত ব্যর্থ এই ক্ষমতাসীনরা। আসলে এই রাষ্ট্র সঠিক পথে চলছে না। কারো কোনো দায়িত্ব নাই, মানুষ মারা যাচ্ছে, মারা যাবে। প্রতিদিন গাড়ি দূর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে মানুষজন। গত ৫ বছরে দূর্ঘটনায় কয়েক হাজার মানুষ মারা গিয়েছে। আজকেও চকবাজারে মা-বাবারা লাশ খুঁজে বেড়াচ্ছে। কোথায় কেমিক্যাল থাকবে, থাকবে না এটা চিহ্নিত করা কাদের দায়িত্ব? ফলে মানুষ আগুনে পুঁড়ছে।
তিনি বলেন, আমার পরিস্কার বক্তব্য চকবাজারের মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, এটা খুন হয়েছে। যাদের দায়িত্বে অবহেলার কারনে এটা হয়েছে তাদেরকে বলছি আপনারা নির্বাচিত নন- আল্লাহর ওয়াস্তে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে চলে যান। আমি বলতে চাই, আগুন কিন্তু আপনাদের গায়েও লাগবে। এই দিন দিন নয়, এক মাগে শীত যাবে না। মনে রাখবেন ১৬ কোটি মানুষের গায়ে আগুন দিয়েছেন ২৯ ডিসেম্বর রাতে, আপনাদের গায়েও আগুন লাগবে। জনগনের মনে ক্ষোভ জমা হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা। এই কোটি কোটি মানুষের দেশে জীবনের কোনো মূল্য নেই। সমাজের বিবর্তনে বিগত ১০ বছরে আমরা কি তাই কি দেখছি না। জীবনের মূল্য নেই, মূল্য হচ্ছে অর্থ-ভিত্ত-বৈবভ, যার কাছে অর্থ আছে তিত্ত আছে তিনি সমাজে সবচাইতে সম্মানিত ব্যক্তি। এখানে দরিদ্রের জীবন কিভাবে চলে গেলো কেউ খবরও রাখছে না। তিনি বলেন, চুঁড়িহাট্টায় কতজন মারা গেছে? নিউইর্য়ক টাইমসের হিসেবে ১১০জন মারা গেছেন। আমাদের সরকারের হিসেবে ৬৯ জন, আমরা ঢাকার পত্র-পত্রিকায় দেখেছি ৮১ জন। আমি অংকের ছাত্র, দূর্বল ছাত্র হিসাব মেলাতে পারি না। তবে এখানে একটি গল্প মনে পড়েছেন- হিসাব হয়ত মিলতেও পারে আজকে যদি এক-দুই সপ্তাহ পরে যদি দেখি সরকার টানেল খনন করে সেখান থেকে যদি সুবেশী-সুবেশা কিছু তরুন-তরুনী বের করে নিয়ে আসে তাহলে হয়ত হিসাব মিলতেও পারে। আপনারা কী রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির কথা ভুলে গেছেন। পুরান ঢাকার থেকে কেমিলকেল গুদাম, প্লাস্টিক সামগ্রি অপসারণের প্রসঙ্গ টেনে সাবেক মন্ত্রী বলেন, কেমিক্যাল, ধার্য্য পদার্থ ও প্লাস্টিক সামগ্রি যেগুলো মুহুর্তের মধ্যে জ্বলে উঠে দব দব করে, কেড়ে নেয় মানুষের জীবন। কথাগুলো সত্যি। বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধবে কে? কে সরাবে? কিভাবে সরাবে?
বিএনপির এই নেতা বলেন, কিছুদিন আমি পরিকল্পনার দায়িত্বে ছিলাম সেই অভিজ্ঞতা থেকে আমি যদি বলি - কালকেই সরিয়ে নাও, কালকে কিন্তু সরানো যাবে না। আপনারা দেখেছেন হাজারীবাগে চামড়ার কারখানা সরাতে কত বছর সময় লেগেছে, এখনো সম্পন্ন হয়নি-এটাই বাস্তবতা। সেজন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা। আমি যেটা বিশ্বাস করি, এখান থেকে যারা ডিসপ্ল্যাস হবেন তারা সরে যেতে হবে তাদের প্রত্যেকের উপার্জনের নিশ্চয়তা দিতে হবে। তখনই কিন্তু এই ধরনের পরিকল্পনা সফল হবে।
নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, কতগুলো দলের নেতা আছেন যারা মিথুক, প্রতারক, ডাকাত। জনগণের অধিকার হরণ করার চেষ্টা করছে। মানুষকে কথা বলতে দিতে চায় না। আমরা যেটা মানি না। তিনি বলেন, বলে না- অতি চালাকীর গলায় দড়ি। এই যে চট্টগ্রামে বিমান বন্দরে বিমান হাইজেকের কথা শুনলেন - এটা কোনো হাইজেকের প্রচেষ্টা? একটা লোক একা একা বিমান হাইজেক করতে গেছে? রব ভাইসহ আমরা কালকে এক জায়গায় ছিলাম উনি বললেন, আরে চোর যখন চুরি করতে যায় তখনও দুইজন চেলা নিয়ে যায়। যাতে ঠিক মতো চুরি করবার পর বেরিয়ে যেতে পারে। আর এই লোক এতো বড় দুর্ধষ ক্রিমিনাল তার জন্য কমান্ডো নামাতে হলো। তার সাথে কেউ নেই। পিস্তল নাকী একটা নিয়ে গিয়েছিলো সেটাও আবার পরে বলছে খেলনা তা আবার পাওয়া যাচ্ছে না। মামলা যেটা করা হয়েছে সেই মামলায় কোনো পিস্তল, কোনো অস্ত্রের উল্লেখ নাই। সরকারটা কী? সরকারের এজেন্সিগুলো কী? ঘটনা কী?
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের জন্যে জাতির জন্যে একটা অহংকার। অনেক বড় নেতা তিনি, বিশ্বমানের নেতা। উনি বাকশাল করেছিলেন মানুষ পছন্দ করেনি। আজকে তার কন্যা যদি মনে করে এরকম ভোট ডাকাতি করে দেশে এক দলের এক ব্যক্তির, একার শাসন কায়েম করবেন তাহলে তিনিও ভুল করছেন। ঐক্যফ্রন্টের এই নেতা বলেন, এই উন্নয়নের নামে যত ফুল ঝুড়ি ঝরান। আমরা তো দেখছি যে, ঢাকা কী তিলোত্তমা না ঢাকা একটা আগ্নেয়গিরি, ঢাকা কী সুন্দর না ভয়ংকর, ঢাকা কী জীবনের জন্য সুন্দর, জীবনের জন্য উপভোগ্য নাকী জীবনের জন্য বিপদজনক- সেটা তো পুরান ঢাকা দেখলেই বুঝা যায়। সারা বাংলাদেশ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন মানুষ মারা যায়। এটা কী দেশ। সরকারের উদ্দেশ্যে মান্না বলেন, এক মাঘে শীত যায়, দুই মাঘেও শীত যায় না। মাঘ বারে বারে আসে এবং ঠান্ডা লাগে। এই ঠান্ডা আপনাকেও ধরবে । অপেক্ষা করুন।
শোক সভায় আরো বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, মেজর জেনারেল আমসা আমিন, এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসীন মন্টু।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অগ্নিকান্ড


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ