Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ছয় দিনেও স্বাভাবিক হয়নি চুড়িহাট্টা

১৪ জনের লাশ শনাক্ত করতে তিন সপ্তাহ, পিকআপে সিলিন্ডার ছিল না, মামলা হলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ছয়দিন পরেও স্বাভাবিক হয়নি ওই এলাকার সাধারন মানুষের জীবন-যাত্রা। আগুনের উৎস ওয়াহেদ ম্যানশনের আন্ডারগ্রাউন্ডের গোডাউন থেকে কেমিক্যাল সরানো হলেও আশপাশের ভবনগুলোর গোডাউনে কেমিক্যাল মুজদ রয়েছে আগের মতোই। চুড়িহাট্টা মোড়ে ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে রাখা পিকআপটি ফাঁকা ছিল। গ্যাস সিলিন্ডার ছিল না, চলত ডিজেলে। অথচ এই পিকআপটিতে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার ছিল এবং সেখান থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল বলে দাবি করে আসছিলেন চুড়িহাট্টা এলাকার ব্যবসায়ী ও বাড়ির মালিকেরা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকৎসাধীন ১১জনের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
অন্যদিকে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় অজ্ঞাত ১৯ লাশের মধ্যে ১৪টি তাদের পরিবারকে বুঝিয়ে দিতে ১৫ দিন সময় লাগবে। বাকি ৫টি লাশ শনাক্ত করতে তিন সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় লাগবে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারা।
চকবাজার থানায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মুরাদুল ইসলাম বলেন, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় হাজি ওয়াহেদ ম্যানশনের দুই মালিক মো. হাসান ও সোহেল ওরফে শহীদকে খুঁঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই ঘটনায় কয়েকটি পক্ষ ও গোডাউনের মালিক জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেলেও তাদের কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। আসামিদের মোবাইল ফোনের কল ডিটেইলড রেকর্ড (সিডিআর) বের করা হয়েছে। সেটা ধরে অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টাও চলছে।
গতকাল সরেজমিন চকবাজার থানায় গিয়ে দেখা গেছে, পুলিশের একটি টিম চকবাজার থেকে বস্তাভর্তি আলামত সংগ্রহ করে রাখছেন। ঘটনাস্থলের রঙিন ছবিগুলো যাচাই-বাছাই করছেন।
গতকাল দুপুরে দিকে দগ্ধদের চিকিৎসায় গঠিত ৯ সদস্য মেডিকেল বোর্ডের প্রধান শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রকল্প পরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম বলেন, আমরা ৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড বসেছি-দগ্ধদের পরবর্তী চিকিৎসা নিয়ে করণীয় প্রসঙ্গে। এর মধ্যে আনোয়ারের অবস্থা ভেরি ক্রিটিক্যাল। তার শরীরের ৬১ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির একজন সদস্য জানান, এই আগুনের ঘটনায় ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশন, রাজউক, বিস্ফোরক অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট সেবা প্রতিষ্ঠানসমূহের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কোনো গাফিলতি ছিল কি না-তাও খতিয়ে দেখে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে অনানুষ্ঠানিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
চকবাজারে নিয়মিত যাতায়াত ছিল জারার বাবা কেএম শাহ নেওয়াজের। চকবাজার থেকে প্রসাধনী সামগ্রী কিনে চিটাগং রোডের দোকানে বিক্রি করতেন তিনি। স্ত্রী আর মেয়েকে নিয়ে গতকাল সকালে তিনি চুড়িহাট্টায় আসেন শোক জানাতে।
তিনি বলেন, যেদিন ঘটনাটা ঘটল, সেদিনও আমি চকবাজারে এসেছিলাম ব্যবসার কাজে। আমরা খুব কষ্ট পাচ্ছি। রাষ্ট্রীয় শোকের দিন তাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসেছি।
গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এলাকায় এখনও পানি ও গ্যাস সংযোগ হয়নি পুরোপুরি। অগ্নিকান্ডের পর বাসা ছেড়ে যাওয়া পরিবারের অনেকেই এখনও এলাকায় ফিরেননি। চুড়িহাট্টার সব দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে। পুরো এলাকা জুড়েই থতথমে অবস্থা বিরাজ করছে। স্বাভাবিক হয়নি ওই এলাকার সাধারন মানুষের জীবন যাপন।
লাশ শনাক্ত করতে তিন সপ্তাহ
গতকাল দুপুরে মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ মো.রেজাউল হায়দার বলেছেন, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় অজ্ঞাত ১৯ লাশের মধ্যে ১৪টি তাদের পরিবারকে বুঝিয়ে দিতে ১৫ দিন সময় লাগবে। বাকি পাঁচটি শনাক্ত করতে তিন সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় লাগবে। ১৯টি লাশের বিপরীতে এ পর্যন্ত লাশের দাবিদার হিসেবে ৩৮ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ৬৭টি লাশের মধ্যে ১৯টি লাশ এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। বাকিদের লাশ শনাক্ত করে জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন, এর মধ্যে ১৪টি লাশের মাসল স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়েছে, যেগুলোর পরিচয় নিশ্চিত হতে সর্বোচ্চ ১৫ দিন সময় লাগবে। বাকি পাঁচটি লাশ বেশি দগ্ধ হওয়ায় সেগুলোর হাড়ের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো থেকে নমুনা সংগ্রহের পর্যায়ে আসতেই অন্তত তিন সপ্তাহ সময় লাগবে। এরপর ডিএনএ ম্যাচিংয়ের বিষয়টি আসবে।
পিকআপে সিলিন্ডার ছিল না
চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ আগুনের ঘটনার পর গতকাল পিকআপটির (ঢাকা-মেট্রো-ন-১৭-৩১৭১) মালিক মো. দুদুু মিয়া ঘটনাস্থলে এসেছিলেন। তিনি বলেছেন, পিকআপটি তার নিজের। চালাতেন নিজেই। এটি তার জীবিকার একমাত্র সম্বল ছিল। গ্যাস সিলিন্ডার ছিল না, চলত ডিজেলে। অথচ এই পিকআপটিতে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার ছিল এবং সেখান থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল বলে দাবি করে আসছিলেন চুড়িহাট্টা এলাকার ব্যবসায়ী ও বাড়ির মালিকেরা।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন সাভারের নামাগেন্ডা এলাকা থেকে খালি পিকআপ নিয়ে তিনি চুড়িহাট্টায় গিয়েছিলেন। ওয়াহেদ ম্যানশনের নিচতলার একটি দোকান থেকে প্লাস্টিকের দানা নিয়ে ফেরার কথা ছিল। পিকআপটি ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে রেখে তিনি দোকানে যান। দোকানদার নাহিদ তখন তাকে জানান, পিকআপে জিনিস তোলার লোক নেই। এর ফাকে পাশের রাজমহল হোটেল থেকে তিনি নাশতা করে আসছেন বলে বের হয়ে আসেন। হোটেলে ঢুকে রুটি মুুখে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এরপর তিনি দৌড়ে হোটেল থেকে বের হয়ে আসেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অগ্নিকান্ড


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ