ব্রেক্সিটের তারিখ এগিয়ে আসা সত্তে¡ও আবার বিলম্বের পথে চলেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে। চলতি সপ্তাহেই বিষয়টি নিয়ে ব্রিটিশ সংসদে ভোটাভুটির কথা ছিল। কিন্তু মিসরের শার্ম আল শেখ শহরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগের শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে মে বলেন, আগামী ১২ মার্চের মধ্যে তিনি সংসদে সংশোধিত ব্রেক্সিট চুক্তি পেশ করবেন। সে ক্ষেত্রে এমন চুক্তি অনুমোদন ও কার্যকর করতে মাত্র ১৭ দিন সময় থাকবে। তবে প্রধানমন্ত্রী এখনো মনে করেন, যে নির্ধারিত সময়ে চুক্তিসহ ব্রেক্সিট কার্যকর করা সম্ভব।
এমন ঘোষণার পর টেরিজা মে নিজের মন্ত্রিসভা, দল ও সংসদে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। তার পক্ষে আদৌ কোনো সমাধানসূত্র অর্জন করা সম্ভব কিনা, তা নিয়ে সংশয় আরও বাড়ছে। তাছাড়া শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিষয়টি টেনে আনলে ব্রিটেন প্রবল অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে অনেক মহল।
সরকারের প্রতি অনাস্থা দেখিয়ে ব্রিটেনের সংসদে বুধবারই পালটা প্রস্তাব আনা হতে পারে। চুক্তিহীন ব্রেক্সিটরুখতে দল, মত নির্বিশিষে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারেন, এমন সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। এমনকি মন্ত্রিসভার তিন সদস্যও সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর বিরোধিতা করে এমন প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেবার অঙ্গীকার করেছেন। সে ক্ষেত্রে ব্রেক্সিটের সময়সীমা বাড়াতে সরকারকে কার্যত বাধ্য করা হতে পারে।
এদিকে, ব্রিটিশ রাজনীতির এমন অস্থির পরিস্থিতির ফলে ইইউ নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে-র উপরও আর আস্থা রাখতে পারছে না। আয়ারল্যান্ড সীমান্তে ‘ব্যাকস্টপ’ ব্যবস্থা নিয়ে ব্রিটেনের সংসদে ক্ষোভ প্রশমিত করতে আইনসিদ্ধ আশ্বাস চাইছেন তিনি। তার দাবি মেনে ব্রেক্সিট চুক্তিতে রদবদলের সম্ভাবনা শুরু থেকেই উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে দুই পক্ষের মধ্যে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক বিষয়ে রাজনৈতিক ঘোষণাপত্রে পরিবর্তন আনতে প্রস্তুত ইইউ। তবে এমন পদক্ষেপ ব্রিটিশ সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে কিনা, সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই। ইইউ পরিষদের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টুস্ক বলেছেন, আগামী ২১ ও ২২ মার্চ ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের আগে ব্রিটেনকে এ বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান জানাতে হবে।
এমন অচলাবস্থা কাটাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক পালটা প্রস্তাব প্রস্তুত করছে বলে শোনা যাচ্ছে। ব্রিটিশ সংসদ যদি প্রধানমন্ত্রীকে ব্রেক্সিটের সময়সীমা বাড়াতে বাধ্য করে, একমাত্র সে ক্ষেত্রেই এই প্রস্তাব পেশ করা হতে পারে। মাত্র তিন মাস অথবা স্বল্প সময়ের জন্য বিলম্ব না করে প্রায় দুই বছরের জন্য ব্রেক্সিট মুলতুবি রাখতে চায় ইইউ। ব্যাকস্টপ সম্পর্কে জটিলতা কাটাতে এই সময়কালে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়েও এক সার্বিক চুক্তি প্রস্তুত করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বর্তমান অনিশ্চয়তাও দূর হবে। আয়ারল্যান্ড সীমান্ত ও অন্যান্য বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে স্থায়ী সমঝোতা সম্ভব হলে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এমন প্রস্তাব কট্টর ব্রেক্সিটপন্থিদের পক্ষে গ্রহণযোগ্য হবে না বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। তারা ব্রেক্সিট কার্যকর করতে কোনোরকম বিলম্ব চান না। ইইউ একমাত্র ২১ মাসের বিলম্ব মেনে নিলে তারা বড় সমস্যায় পড়তে পারেন। তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতেই এমন প্রস্তাবের উল্লেখ করা হয়েছে বলে কট্টরপন্থীদের সন্দেহ হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে তারা বিলম্ব এড়াতে বর্তমান ব্রেক্সিট চুক্তির পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য হবেন। সূত্র : রয়টার্স, এএফপি।