নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শক্তিশালী ভারত গিয়ে পারেনি, আরেক পরাশক্তি পাকিস্তানও পারেনি কোনদিন। বাংলাদেশ তো বারকয়েক নাজেহালই হয়েছে। সেই দক্ষিন আফ্রিকাতেই উপমহাদেশের আরেক দল শ্রীলঙ্কা গড়লো ইতিহাস। মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছিলেন বোলাররা। ব্যাটিংয়ে ভুল করেননি কুসল মেন্ডিস ও ওশাদা ফার্নান্দো। তিন দিনেই পোর্ট এলিজাবেথ টেস্ট জিতে এশিয়ার প্রথম দল হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ জিতল তারা।
নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। তাদের ক্রিকেট ইতিহাসে এটাই সম্ভবত সবচেয়ে বাজে সময়। সানাথ জয়সুরিয়া-অরবিন্দ ডি সিলভা কিংবা মাহেলা জয়াবর্ধনে-কুমার সাঙ্গাকারাদের রেখে যাওয়া পরম্পরা ধরে রাখতে পারেনি চণ্ডিকা হাথুরুসিংহের দল। প্রচুর নতুনের আমদানি হচ্ছে, দলের সিনিয়র খেলোয়াড়েরাও রয়েছেন আসা-যাওয়ার মধ্যে। কিন্তু হাথুরুর এই ভাঙাচোরা শ্রীলঙ্কাই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে গতকাল যে ইতিহাস গড়ল তার দেখা পাননি জয়াসুরিয়া কিংবা জয়াবর্ধনেদের প্রজন্মও। এমনকি, প্রোটিয়াদের মাটিতে অবিশ্বাস্য এই ইতিহাস গড়তে পারেনি এশিয়ার আর কোনো দলই!
পোর্ট এলিজাবেথে আগের দিন টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ১৮ উইকেট পতনের পরই মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা ইতিহাস গড়ার বেশ কাছে। জয়ের জন্য ১৯৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ২ উইকেটে ৬০ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করে সফরকারী দল। গতকাল বাকি ১৩৭ রানের লক্ষ্য ছুঁতে ৩০ ওভারও লাগেনি দিমুথ করুনারতে্নর দলের। ওশাদা ফার্নান্দো ও কুশল মেন্ডিসের ফিফটিতে ভর করে শ্রীলঙ্কার ৮ উইকেটের জয় তাঁদের ক্রিকেট ইতিহাসে হিরন্ময় সাফল্যগাথার অংশ। দুই টেস্টের সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদের-ই মাটিতে তারা ধবলধোলাই করল ২-০ ব্যবধানে। ২০১৫-১৬ মৌসুমে ইংল্যান্ড সিরিজের পর এই প্রথম দেশের মাটিতে হারল প্রোটিয়ারা।
সেন্ট জর্জেস পার্কে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে ২২২ রানে অলআউট হওয়ার পর শ্রীলঙ্কা তাঁদের প্রথম ইনিংসে আরও খারাপ করে (১৫৪)। ৬৮ রানে পিছিয়ে থাকলেও দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসে দুর্দান্ত বল করেন লাকমল-ডি সিলভারা। মাত্র ১২৮ রানেই অলআউট হয় স্বাগতিক দল। এতে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৯৭। রানসংখ্যা দেখে ব্যাপারটি সহজ মনে হলেও আগের তিন ইনিংস দেখে যেকোনো লঙ্কান সমর্থকের মনেই খচখচানি উদ্রেক হতে পারত। কিন্তু তৃতীয় উইকেটে ফার্নান্দো-মেন্ডিসের অবিচ্ছিন্ন ১৬৩ রানের জুটিতে শ্রীলঙ্কার তুলে নেওয়া জয় দেখে মনেই হয়নি আগের তিন ইনিংসে ব্যাট করা খুব কঠিন ছিল। দুজনই প্রায় ওয়ানডে গতিতেই রান তুলেছেন। মেন্ডিসের ৮৪ রান এসেছে মাত্র ১১০ বলে। দায়িত্বশীল এই ইনিংসে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন তিনি। ফার্নান্দো ১০৬ বলে তুলেছেন ৭৫ রান। অপরাজিত ১৫৩ রানের ইনিংসে ডারবান টেস্টে ১ উইকেটের অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দেওয়া শ্রীলঙ্কার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান কুসল পেরেরা জেতেন সিরিজ সেরার পুরস্কার।
ইতিহাস বলছে দক্ষিণ আফ্রিকায় এর আগে টেস্ট সিরিজ জিততে পেরেছে শুধু অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। যে বিরাট কোহলির ভারতকে রবি শাস্ত্রী বলেছেন ‘গত ১৫-২০ বছরে সেরা সফরকারী দল’- সেই তারাও ; শীর্ষে থাকা অবস্থায় প্রোটিয়াদের মাটিতে গত বছর সিরিজ হেরেছে ২-১ ব্যবধানে। আর একই র্যাঙ্কিংয়ে বর্তমান ক্রিকেটে শীর্ষ পাঁচ দলের (ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড) বাইরে থাকা শ্রীলঙ্কা কিনা সেই প্রোটিয়াদের মাটিতেই টেস্ট সিরিজ জিতল এশিয়ার প্রথম হিসেবে!
দেশের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা সবশেষ ধবলধোলাই হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার কাছে, ২০০৬ সালে। এক যুগেরও বেশি সময় পর প্রোটিয়াদের সেই ভুলে যাওয়া তেতো স্বাদ উপহার দিল শ্রীলঙ্কা। যাদের সম্ভবত এদিনের আগ পর্যন্তও ভাবা হয়েছে উপমহাদেশের ক্রিকেটে বর্তমানের সবচেয়ে দুর্বলতম দল হিসেবে! কিন্তু সুরঙ্গা লাকমল (৪/৩৯) ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভারা (৩/৩৬) দ্বিতীয় দিনেই জয়ের সুবাস এনে দিয়েছেন শ্রীলঙ্কাকে।
বিশ্বকাপের আগে আত্মবিশ্বাসের জন্য এর চেয়ে ভালো দাওয়াই আর কোথাও মিলত না হাথুরুসিংহের দলের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণ আফ্রিকা : ২২২ ও ২য় ইনিংস : ৪৪.৩ ওভারে ১২৮ (মারক্রাম ১৮, এলগার ২, আমলা ৩২, বাভুমা ৬, দু প্লেসি ৫০, ডি কক ১, মুল্ডার ৫, মহারাজ ৬, রাবাদা ০, স্টেইন ০, অলিভিয়ের ৬; লাকমল ৪/৩৯, বিশ্ব ১/৩২, রাজিথা ২/২০, ডি সিলভা ৩/৩৬)।
শ্রীলঙ্কা : ১৫৪ ও ২য় ইনিংস : (লক্ষ্য ১৯৭) (আগের দিন শেষে ৬০/২) ৪৫.৪ ওভারে ১৯৭/২ (ওশাদা ৭৫*, মেন্ডিস ৮৪*; স্টেইন ০/৩৮, রাবাদা ১/৫৩, অলিভিয়ের ১/৪৬, মুল্ডার ০/৬, মহারাজ ০/৪৫)।
ফল : শ্রীলঙ্কা ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : কুসল মেন্ডিস।
সিরিজ : দুই ম্যাচে ২- তে জয়ী শ্রীলঙ্কা।
ম্যান অব দ্য সিরিজ : কুসল পেরেরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।