বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বাংলা অভিধানে আরবি ‘বরকত’ শব্দের কয়েকটি অর্থ দেয়া আছে। যেমন- প্রতুলতা, প্রাচুর্য, শ্রীবৃদ্ধি ইত্যাদি। আরবিবিদ ও ইসলাম বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলায় বরকত শব্দটির যথোপযুক্ত প্রতিশব্দ নেই। তবে ‘প্রবৃদ্ধি’ হতে পারে এর সবচেয়ে কাছাকাছি প্রতিশব্দ। প্রবৃদ্ধি অর্থ, অতিশয় বৃদ্ধি। বরকত বলতে সেই অবস্থাকে বুঝায়, যেখানে কোনো কিছুর স্বাভাবিক প্রাপ্তি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
প্রকৃতপক্ষে বরকত দানের মালিক মহান আল্লাহপাক। তিনি পবিত্র কোরআনে বলেছেন, তোমরা বরকত লাভের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানাও। রাসূল সা. বলেছেন, আল্লাহ এভাবে প্রার্থনা করতে বলেছেন : হে আল্লাহ, আমাদের কাজকর্মে বরকত দান করুন এবং আমাদের জীবনকর্মের সব ক্ষেত্রে বরকত দানে সুশোভিত করুন।
আমরা সবাই জানি, মাহে রমজান রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে আসে। রোজা এই মাসের ইবাদত। হযরত আবু হোরায়রা রা. বর্ণিত একটি হাদিসে রাসূল সা. বলেন, পরাক্রমশালী মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আদম সন্তানের প্রতিটি আমল তার নিজের জন্য, রোজা ছাড়া।
কারণ, তা আমার জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দেবো। ইমাম বোখারির অন্য এক রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে : রোজাদার আমারই কারণে তার আহার, পানীয় ও যৌন কামনা ত্যাগ করেছে। রোজা আমার জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দেবো। আর অন্য নেকিগুলোর সওয়াব হবে ১০ গুণ।
ইমাম মুসলিম এক রেওয়ায়েতে বলেছেন, বনী আদমের প্রতি আমলের সওয়াব বাড়ানো হয়। এক নেকির সওয়াব হয় ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত। বলা বাহুল্য, এক নেকির জন্য ১০ থেকে ৭০০ গুণ সওয়াব, এটাই বরকত, যা আল্লাহরই অনুগ্রহে বান্দা লাভ করে।
মহান আল্লাহপাকের কাছ থেকে আমরা বহুভাবে বরকত লাভ করে থাকি। যেমনÑ স্বল্প ও নির্দিষ্ট আয়েও অনেক মানুষ সহজভাবে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে জীবন যাপন করতে পারে। অনেকে এর চারগুণ আয়েও সেটা পারে না। যারা অল্পে তুষ্ট ও আল্লাহর দেয়া রিজিকে সন্তুষ্ট, আল্লাহ তাদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন এবং রিজিকে বরকত দান করেন।
অতিথি আপ্যায়নে অনেক সময় সামান্য বা স্বল্প পরিমাণ আহার্যবস্তু দিয়েও বহুসংখ্যক মানুষ তৃপ্তি সহকারে আহার করতে পারে। আহার্যবস্তুতে আল্লাহর বরকত ছাড়া এটা সম্ভব হতে পারে না। একবার রাসূল সা. ও সাহাবিসহ অন্যান্যের পানির প্রকট সঙ্কট দেখা দেয়। রাসূল সা. সাহাবিদের নির্দেশ দিলেন যার কাছে যে টুকু পানি আছে, তা তার কাছে নিয়ে আসতে।
সাহাবারা পানি আনলে রাসূল সা. পানিতে ফুঁক দিলেন এবং বললেন, বড় একটি পাত্রে পানিটুকু রাখো এবং তোমাদের প্রয়োজনে লাগাও। সাহাবারা তাই করলেন। দেখা গেল সবার প্রয়োজন পূরণের পরও পাত্রভর্তি পানি অবশিষ্ট আছে। স্বল্প পরিমাণ পানির মধ্য আল্লাহপাক প্রকৃত বরকত দান করার ফলেই এটা সম্ভব হয়।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা তার বরকত দানের বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। একটি আয়াতে বলা হয়েছে, নিষ্ঠাবান বিশ্বাসী বান্দাদের কর্মপন্থা হলো এই যে, তারা মানুষের জন্য আহার্যবস্তু পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যয় করে এবং গরিব-দুস্থ ও অধীনস্থদের মাঝে বণ্টন করে। কিন্তু এর জন্য কোনো মূল্য বা বিনিময় লাভের ইচ্ছা প্রকাশ করে না, তাদের এই কর্মে আল্লাহ বরকত দান করেন।
অনেকে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন হায়াত বাড়ানোর জন্য। বলেন, আল্লাহ তোমার হায়াত বাড়িয়ে দিন। আসলে হায়াত নির্দিষ্ট। আল্লাহই হায়াত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। এর ব্যতিক্রম হওয়ার নয়। এর ব্যাখ্যায় ইসলামবিশেষজ্ঞরা বলেন, আসলে দোয়ায় হায়াত বাড়ে না। বাড়ে তাতে বরকত। একজন মানুষ তার নির্দিষ্ট হায়াতে স্বাভাবিকভাবে যে পুণ্যকর্ম করতে পারে, এই হায়াতেই তার চেয়ে বেশি পুণ্যকর্ম করতে পারবে, যদি আল্লাহ তাতে বরকত দান করেন।
বরকত দানের মালিক যেহেতু আল্লাহ, তাই তার কাছেই সব সৎকাজে বরকত প্রার্থনা করা উচিত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তার বরকত লাভের অধিকারী করুন, এই একান্ত প্রার্থনা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।