বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সীমান্ত বেষ্টিত পঞ্চগড় জেলা। চারদিকে ঘিরে রয়েছে ভারতের সীমান্ত রেখা। ভারত প্রায় তিন যুগ আগে তাদের দেশের অভ্যন্তরে বাধঁ নির্মাণ করায় পঞ্চগড়ের সব নদীতে জেগে ওঠেছে চর। পঞ্চগড় জেলার প্রধানতম নদী করতোয়া। । বেশি দিনের কথা নয়; একশ’ বছর আগেও এই নদীতে চলাচল করত বড় বড় নৌকা। ব্যাপারীরা বড় বড় নৌকায় করে তাদের সওদা নিয়ে ভিরতো এই ঘাটে। নদীকে ঘিরেই প্রাণ চাঞ্চল্য ছিল পঞ্চগড়। বিশেষ করে এই নদীকে নিয়েই ঘুরপাক খেত পঞ্চগড়ের অর্থনীতি। আজ তা কালের বির্বতনে মিশে গেছে।
কিন্তু কালের বিবর্তনে করতোয়ার এখন মরণ দশা। শুধু বর্ষাকালে দেখলে মনে হয় এটি করতোয়া নদী। আর শীত শুরুর আগেই প্রমত্তা করতোয়া হয়ে পড়ে শীর্ণকায় মরা খালে। এখন বাইরে থেকে আসা লোকজন সেতুর নীচে তাকালে ভাবতেই পারবে না এটা এককালের খরস্রোতা করতোয়া নদী। নদীতে এখন পানির দেখা পাওয়াই ভার। যেদিকে চোখ যাবে দেখা যায় শুধুই সবুজের সমারোহ।
নদীতে পানি না থাকায় কৃষকরা ধান লাগিয়েছে যত্রতত্র। শুধু করতোয়াই নয়; জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ছোট বড় ২৭টি নদীরই এখন যেন মরণদশা। তবে আশার কথা হল খুব শিগগির প্রায় দুইশ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলার পাঁচটি নদী ও একটি খাল পুনঃ খননের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পঞ্চগড় জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত সব নদীই এখন শীর্ণকায় মরা খাল। পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় দুই তীরে শুধুই ধু-ধু বালুচর। জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলোর মধ্যে করতোয়া, চাওয়াই, তালমা, পাঙ্গা, কুড়–ম, পাম, মহানন্দা, ভেরসা, ডাহুক, তীরনই, রণচন্ডি, বেরং, জোড়াপানি, সাও, ঘোড়ামারা, পাথরাজ, নাগর, সিঙ্গিয়া, বহু, রসেয়া, ঘাগরা, মরাতিস্তাসহ উজান থেকে নেমে আসা নদীরই এই দৈন্য দশা।
প্রতিবেশী ভারত এসকল নদীর উৎসমূখে বাঁধ বা ড্যাম নির্মাণ করায় বর্ষার পরই এসকল নদী পরিণত হয় মরাখালে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নদী শাসন আইন অমান্য করে নদীগুলোর উৎস এবং প্রবেশ মুখে বাঁধ, স্লুইস গেট, জলাধার, ফিডার ক্যানেল ও রেগুলেটর নির্মাণ করে পানির স্বাভাবিক গতিপথ পরিবর্তন এবং জেলার ২২১ কিলোমিটার সীমান্তব্যাপী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছে। ফলে নদীগুলো ধীরে ধীরে মরা খালে পরিণত হচ্ছে।
আবার নদীতে পানি না থাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানিও অনেক নীচে নেমে যাচ্ছে। অথচ শুস্ক মৌসূমে ভুগর্ভস্থ পানি পঞ্চগড় জেলার সেচের একমাত্র অবলম্বন। ভুগর্ভস্থ পানি নীচে নেমে যাওয়ার কারণে ইরি-বোরো চাষে স্থানীয় চাষীরা সেচ দেয়ার পরও সেচের পানি দীর্ঘস্থায়ী হয়না বলে সংশিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় মাছসহ অন্যান্য জীববৈচিত্রের ওপর বিরুপ প্রভাব পড়েছে। এরই মধ্যে দেশীয় অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাকিগুলোও বিলুপ্ত হওয়ার পথে।
তবে আশার ব্যাপার হল এসকল নদীর মধ্যে প্রায় দুইশ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫টি নদী ও একটি খাল পুনঃ খননের উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ‘ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃ খনন’ প্রকল্পে পঞ্চগড়ের করতোয়া, ভেরসা, চাওয়াই, পাথরাজ ও বুড়ি তিস্তা নদী এবং আটোয়ারী উপজেলার বড় সিংগীয়া খান পুনঃ খনন কাজ শুরু হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় করতোয়া নদীর ৭৮ কিলোমিটার, তেঁতুলিয়ার ভেরসা নদীর ১০ কিলোমিটার, সদরের চাওয়াই নদীর ২০ কিলোমিটার, বোদার পাথরাজ নদীর ৩০ কিলোমিটার এবং দেবীগঞ্জের বুড়ি তিস্তা নদীর ২০ কিলোমিটার এবং আটোয়ারীর বড় সিংগীয়া খালের ৬ কিলোমিটার খনন করা হবে। এরই মধ্যে বোদা ও তেঁতুলিয়ার দু’টি নদী খনন কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও করা হয়েছে।
পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, নদী বাঁচাতে প্রাথমিক পর্যায়ে ৬৪ জেলায় ডেল্টা প্ল্যানএর আওতায় ছোট-বড় নদীর খনন কাজ শুরু হয়েছে।পানি ব্যবস্থাপনা কমিটি নিরন্তর ভাবে এ নিয়ে কাজ করে চলেছে। তিনি এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এসব নদীর লেবেল পর্যন্ত খনন করা হবে। এতে করে তলানীতে চুয়ে পড়া পানিতে ফিরবে নদীর প্রান। কৃষি কাজ,মাছউৎপাদন সহ প্রাকৃতিক পরিবেশ আগের মতোই হবে। তিনি আরো বলেন,নদী দখল মুক্ত করা হবে। নদীর উন্নয়নে স্টাডি চলমান আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। নদী খননের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ ২০২০ ইং ডিসেম্বর নাগাদ শেষ হবে।
পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান জানান, ২ মাস আগে এসকল কাজের ১৬টি প্যাকেজের দরপত্র আহবান করা হয়েছে। এখন বাছাইয়ের কাজ চলছে। ঠিকাদার চুড়ান্ত হলেই পুরোদমে পুনঃ খনন কাজ শুরু করা যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ ব্যাপারে পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়া জানান, নদ-নদী গুলোর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধা গ্রস্থ হলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নীচে নেমে যাবে। এতে এলাকায় মরুকরণসহ কৃষি উৎপাদন মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হবে।
এছাড়া জীববৈচিত্রের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। তবে নদী পুনঃ খনন কাজ শুরু হবে এমন খবরে আমি আশান্বিত। শুধু পাঁচটি নদী নয়; আমি আশা করছি বর্তমান সরকারের আমলে পঞ্চগড় জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত সকল নদী পুন: খনন করা হবে।
দেশের আপামর জনতা দেশের ছোট-বড় নদী বাঁচাতে দীর্ঘ দিন ধরে নানা ভাবে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে আসছেন।নদী বিশেজ্ঞরা প্রাকৃতিক পরিবেশ বাঁচাতে জাতীয় পর্যায়ে নানা রকম কর্মসূচী পালন করে আসছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় নদীকে বাঁচাতে এসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।