পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টঙ্গীর তুরাগ তীরে লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লির ‘আল্লাহুম্মা আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্তি ঘটলো এবারের বিশ্ব ইজতেমা। আখেরি মোনাজাতে উম্মতের হেদায়েত, দ্বীনের কাজে ত্যাগীদের কবুল, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি, সমৃদ্ধি, ইহ ও পরকালীন নাজাত এবং দ্বীনের দাওয়াত সর্বত্র পৌঁছে দেয়ার তৌফিক কামনা করা হয়। এ সময় জীবনের সকল পাপ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর নিকট নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন ভারতের মাওলানা মোহাম্মদ শামীম। তিনি বেলা ১১টা ৪২ মিনিট থেকে ১২টা ২ মিনিট পর্যন্ত ২২ মিনিট উর্দু ভাষায় মোনাজাত পরিচালনা করেন। এসময় ইজতেমা ময়দান ও আশপাশ এলাকায় নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। লাখো মুসল্লি মহান আল্লাহর দরবারে দু’হাত তুলে ‘আল্লাহুম্মা আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ বলে চোখের অশ্রু ছেড়ে দিয়ে নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। লাখ লাখ মানুষের কান্নায় গোটা ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুরু হয় ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমা। এবারের বিশ্ব ইজতেমায় বিবদমান দু’পক্ষের বিরোধকে ঘিরে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিশ্ব তাবলীগ জামাতের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশ অবশেষে শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হয়েছে।
ইজতেমা ময়দানে ৫ শতাধিক বিদেশি মেহমান গতকাল আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন। প্রথম পর্বে অংশ নেন ৭ শতাধিক বিদেশি মেহমান। এ নিয়ে দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় ১২ শতাধিক বিদেশী তাবলীগ অনুসারী অংশগ্রহণ করেন বলে ইজতেমার আয়োজকরা জানান।
প্রথম পর্বের ন্যায় বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বেও মুসল্লিদের সাথে আখেরি মোনাজাতে শরিক হন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর সিটি মেয়র আলহাজ¦ জাহাঙ্গীর আলম, অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
দ্বিতীয় দফায় আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে ইজতেমা মুসল্লিদের পাশাপাশি গাজীপুরের বিভিন্ন উপজেলা এবং ঢাকাসহ আশপাশের জেলা থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ ভোর থেকেই ইজতেমা ময়দানে বিভিন্ন যানবাহন ও পায়ে হেঁটে অংশ নেন। গতকাল আগত মুসল্লিদের অধিকাংশ দুই পর্বের আখেরি মোনাজাতে শরীক হয়েছেন বলে জানান। আখেরি মোনাজাতে শরীক হতে আসা এসব মুসল্লির অনেকে ইজতেমা ময়দানে গিয়ে মুসল্লিদের সাথে খিত্তায় অবস্থান নেন। আবার অনেকেই ইজতেমার বিশাল সামিয়ানার নিচে ঠাঁই না পেয়ে ময়দানের পাশর্বর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়ক, আশুলিয়া-সাভার সড়ক, কামারপাড়া রোড, বাটা রোডসহ বিভিন্ন অলি-গলি, আশপাশের বাসা-বাড়ি ও যানবাহনের ছাদে পুরনো খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন বিছিয়ে অবস্থান নিয়ে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন।
তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, গতকাল বাদ ফজর থেকে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত বয়ান করেন দিল্লির মাওলানা হাফেজ ইকবাল নায়ার। তার বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশি মাওলানা ওসামা বিন ওয়াসিফ।
বিভিন্ন মহলের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
এবারের বিশ্ব ইজতেমাকে নিয়ে বিভিন্ন মহল মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তাদের মতে ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে মাওলানা যোবায়ের ও মাওলানা সা’দ কান্দলভী পক্ষের মতবিরোধ সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এবং আল্লাহর রাহে হেদায়েতি সংগঠনটিও অবশেষে রাজনৈতিক দলগুলোর মতো ব্রাকেটবন্দি হলো।
আগামী বছরের বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নিয়েও বিরোধ
প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতের পূর্বে যোবায়ের গ্রুপ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল আগামী বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের মাওলানা যোবায়ের অনুসারীদের প্রথম পর্ব বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে ১০, ১১ ও ১২ জানুয়ারি। মাঝে ৫ দিন বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় পর্ব সা’দ অনুসারীদের ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে ১৭, ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি।
এদিকে সোমবার এক ঘোষণায় মাওলানা সা’দ অনুসারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী বছর তাদের ইজতেমার তারিখ পরে ঘোষণা করবেন মাওলানা সা’দ কান্দলভী। সোমবার দুপুরে ইজতেমা ময়দানে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান সা’দ অনুসারী মাওলানা মো. আশরাফ আলী।
মোনাজাতে নারীদের অংশগ্রহণ
নারীদের বিশ্ব ইজতেমায় অংশ গ্রহণের সুযোগ না থাকলেও অনেক নারী মুসল্লি ময়দানের আশপাশে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে ও ছাদে বসে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন।
ওদিকে আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে মুসল্লিদের চলাচলের সুবিধার্থে প্রশাসন সোমবার মধ্যরাত থেকে ইজতেমা মাঠের চার পাশের (ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস, টঙ্গী ব্রিজ, টঙ্গী-কালীগঞ্জ স্টেশন রোড থেকে মীরেরবাজার পর্যন্ত, আশুলিয়া সড়কের কামারপাড়া ব্রিজ পর্যন্ত) গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখে। ফলে মোনাজাতে শরিক হতে আসা মুসল্লিরা ওই সব এলাকা দিয়ে হেঁটে ইজতেমাস্থলে আসেন। আখেরি মোনাজাত শেষে ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী মুসল্লিসহ আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে আশপাশের জেলা হতে আসা মুসল্লিরা পুনরায় হেঁটে বাড়ি ফিরেন।
যৌতুকবিহীন বিয়ে
অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও বেশ কিছু যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিয়ে অনুষ্ঠানের পর খুরমা খেজুর বিতরণ এবং বর ও কনের সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়।
দুই পর্বে ৭ মুসল্লির মৃত্যু
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেয়া মো. ইসমাইল হোসেন (৬০) নামে এক মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। গত রোববার দিবাগত রাত ১টার দিকে বার্ধক্যজনিত রোগে তিনি নিজ খিত্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই মুসল্লিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান। তিনি বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলার লেবু খানের ছেলে। এই নিয়ে দুই পর্বের ইজতেমায় ৭ মুসল্লির মৃত্যু হলো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।