মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
পাকিস্তানের সঙ্গে ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সউদী আরব। সউদী যুবরাজ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে দু’দিনের সফরে গত রোববার পাকিস্তানে পৌঁছার পর দু’দশের মধ্যে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এদিকে যুবরাজ তাকে সউদী আরবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে গণ্য করতে পাকিস্তানিদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। ক‚টনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, সফরকালে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর, নিজেকে সউদী আরবে পকিস্তানের দূত বলে গণ্য করার কথা জানিয়ে, দু’হাজারেরও বেশি পাকিস্তানি বন্দী মুক্তির নির্দেশ প্রদান প্রভৃতির মাধ্যমে পাকিস্তানে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন সউদী যুবরাজ। তিনি পাকিস্তানিদের মন জয় করে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। খবর এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, বিবিসি ও টাইমস অব ইসলামাবাদ।
দু’দেশের মধ্যে যেসব চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে তার মধ্যে গুরুত্বপ‚র্ণ বন্দর গোয়াদরে একটি তেল শোধনাগার নির্মাণসহ ৮শ’ কোটি ডলারের একটি চুক্তি রয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ, পেট্রোকেমিকেল, খনিজ খাতসহ বিভিন্ন বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর করেছে দু’দেশ।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, এই বিনিয়োগ হলো প্রথম দফার। আর অবশ্যই এটা প্রতি মাসে এবং প্রতি বছরে বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে উভয় দেশই সুবিধা পাবে। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে পাকিস্তান। জরুরি ভিত্তিতে এই সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে দেশটি। সে কারণে তারা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। এর মধ্যেই সউদীর সঙ্গে বিশাল অঙ্কের এই চুক্তি দেশটির ভঙ্গুর অর্থনীতিতে গুরুত্বপ‚র্ণ ভ‚মিকা পালন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পশ্চিমা বিশ্বে এমবিএস নামেই পরিচিত সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। রোববার পাকিস্তানে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়।
এদিকে সউদী আরবের এই সহায়তার জন্য দীর্ঘদিনের মিত্রকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, পাকিস্তান এবং সউদী আরবের মধ্যে বর্তমান সম্পর্ক এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে যা আগে কখনই ছিল না। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমুা গ্রহণ করার পর এ পর্যন্ত দু’বার সউদী আরব সফর করেছেন ইমরান খান।
খবরে বলা হয়, সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তাকে সউদী আরবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে বিবেচনা করতে বলেছেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গতকাল সোমবার টুইটারে এ কথা জানান। তিনি বলেন, সউদী আরবে বর্তমানে ২৫ লাখ পাকিস্তানি কর্মরত রয়েছে। এ পাকিস্তানি কর্মীদের সউদী আরবের নিজস্ব লোক হিসেবে বিবেচনা করার জন্য যুবরাজের কাছে তিনি আবেদন জানান। তিনি তার কাছে সউদী আরবে অবস্থানরত পাকিস্তানি শ্রমিকদের কষ্টের কথা তুলে ধরেন।
এর জবাবে সউদী যুবরাজ তাকে সউদী আরবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে বিবেচনা করার জন্য পাকিস্তানের জনগণের প্রতি আহবান জানান। ইমরান খান বলেন, সোমবার সকালে যুবরাজ সালমান প্রতিশ্রুতি দেন যে, সউদী আরবে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য যতটুকু সম্ভব তিনি করবেন। ইমরান খান বলেন, যুবরাজ তার এই কথায় পাকিস্তানের সব মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন।
পাকিস্তানি বন্দী মুক্তির নির্দেশ
সউদী আরবে কারাবন্দী থাকা ২১০৭ জন পাকিস্তানি নাগরিককে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। তার এই ঘোষণার পরেই তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী টুইটে জানান, সউদী আরবের বিভিন্ন জেলে থাকা দুই হাজারেরও বেশি পাকিস্তানি নাগরিককে তাৎক্ষণিক মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন এমবিএস হিসেবে পরিচিত সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।
রোববার রাতে সউদী যুবরাজকে স্বাগত জানিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার বাসভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এমবিএসের প্রতি একটি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছিলেন। ইমরান খান বলেন, বর্তমানে প্রায় তিন হাজার পাকিস্তানি বন্দী সউদী আরবের বিভিন্ন কারাগারে রয়েছেন। আমরা আপনাকে এটা মনে করিয়ে দিতে চাই যে, এরা খুবই দরিদ্র, যারা নিজেদের পরিবার-পরিজনকে রেখে সউদী আরবে পাড়ি দিয়েছেন।
যুবরাজ বলেন, আমরা পাকিস্তানকে না করতে পারি না। আমরা যতটুকু করতে পারি তা করব।
পাকিস্তানি বন্দীদের তাৎক্ষণিক মুক্তির নির্দেশের ব্যাপারে যুবরাজের সম্মতির কথা নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশিও। তিনি জানান, যারা এখন মুক্তি পাচ্ছেন না তাদের মামলা পর্যালোচনা করা হবে। তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অনুরোধে তাৎক্ষণিক সাড়া দেয়ায় যুবরাজকে ধন্যবাদ জানিয়েছে পাকিস্তানের জনগণ।
পাকিস্তান সফর শেষে গতকাল ভারত সফরের কথা রয়েছে ক্রাউন প্রিন্স সালমানের। সেখানে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। বৃহস্পতি এবং শুক্রবার চীন সফরের মাধ্যমে তিনি তার সফর শেষ করবেন।
সউদী যুবরাজ এমন এক সময়ে ভারত এবং পাকিস্তানে সফর করছেন যখন দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তিক্ততায় পরিণত হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলায় সিআরপিএফ-এর কমপক্ষে ৪৪ সদস্য নিহত হয়েছে। ওই হামলার পর থেকেই দু’দেশ একে অপরকে দোষারোপ করে চলছে।
হাই কমিশনারকে তলব
এদিকে ভারতে নিযুক্ত হাই কমিশনারকে ইসলামাবাদে ডেকে পাঠিয়েছে পাকিস্তান। বৃহস্পতিবার কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ভারতীয় কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনীর গাড়ি বহরে জঙ্গি হামলায় ৪৪ সদস্য নিহত হয়। এ নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে চরম উত্তেজনা শুরু হয়েছে। এর মাঝেই সোমবার সকালের দিকে কাশ্মীরের একই জেলায় সংঘর্ষে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন মেজর ও তিন সদস্যের প্রাণহানি ঘটেছে। চলমান উত্তেজনার মাঝে ভারতে নিযুক্ত হাইকমিশনারকে দেশে তলব করল পাকিস্তান।
সোমবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ ফয়সাল টুইটারে দেয়া এক বার্তায় বলেছেন, আমরা পরামর্শের জন্য ভারতে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে ডেকে পাঠিয়েছি। সোমবার সকালের দিকেই তিনি নয়াদিল্লি ত্যাগ করেছেন।
এর আগে গত শুক্রবার ভারতে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাই কমিশনার সোহাইল মাহমুদকে তলব করে পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানায় নয়াদিল্লি। একই দিনে পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার অজয় বিসারিয়াকেও নয়াদিল্লিতে ডেকে পাঠায় ভারত।
আরেক খবরে জানা গেছে, সোমবার পুলওয়ামায় সেনাবাহিনীর এনকাউন্টারে বৃহস্পতিবারের হামলার মূলহোতা আব্দুল রশিদ গাজী ওরফে কামরান ওরফে আফগানি নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী জয়েশ-ই-মোহাম্মদের এই কমান্ডার ছাড়াও আরো এক জঙ্গি অভিযানে নিহত হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।