নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
‘বিষ্ময়কর’ বললেও কি কম বলা হবে না? কুশল পেরাকে কি বলবেন, নায়ক? নাকি মহানায়ক? সে যাই বলুন, সকল বিশেষণ ঢেকে সোজা কথায় বলতে গেলে, ইতিহাসের অবিস্মরণীয় এক টেস্ট ম্যাচ উপহার দিয়েছেন লঙ্কান এই ব্যাটসম্যান। তার বীরোচিত অপরাজিত ১৫৩ রানে ভর করে দশম উইকেটে সফল রান তাড়ায় রেকর্ড জুটি গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১ উইকেটে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ডারবানের এই ম্যাচকে ইতিহাসের সেরা টেস্ট ম্যাচ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন কেউ কেউ।
শ্রীলঙ্কার নবম উইকেট পড়ে যাওয়ার পর অনেকে টেলিভিশনের চ্যানেল পাল্টেছেন। আর যারা কিংসমেদ স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার পতাকা হাতে গিয়েছিলেন তাদের অধিকাংশ হয়ত মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। পরে তারা নিশ্চয় চুল ছিড়েছেন ঐতিহাসিক মুহূর্ত হাতছাড়া করার ক্ষোভে। নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে কুশান রাজিথা যখন আউট হন জয়ের জন্য শ্রীলঙ্কার তখনও যে দরকার ৭৮ রান।
লঙ্কানদের নিভু নিভু আশার সলতেটা তখন পেরেরার হাতে। সেই সলতেয় আর কোন বাতাস লাগতে দিলেন না এই মিডিল অর্ডার ব্যাটসম্যান। কোমল অথচ দৃড় হাতে সামলালেন স্টেইন-রাবাদা-ফিল্যান্ডার-অলিভারদের সুইং, শর্ট, বাউন্সার, ইয়োর্কার। দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বসেরা পেস আক্রমণ পেরেরাকে আহত করলেও কাবু করতে পারল না। শ্রীলঙ্কাকে ইতিহাসে লিখে রাখার মত এক জয় এনে দিলেন পেরেরা।
ম্যাচ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে চলছে পেরেরা বন্দনা। কারো মতে, উইজডেন রেটিংয়ের শীর্ষ দশ পারফর্মান্সে জায়গা করে নেবেন পেরেরা। এমনকি দ্বিতীয় কিংবা প্রথম স্থানেও যদি উঠে আসেন তাতেও অবাক হওয়ার থাকবে না।
স্বাভাবিকভাবেই একটি ইতিহাস আরেকটি ইতিহাসকে টেনে আনে। ঠিক যেভাবে ২০ বছর আগের অস্ট্রেলিয়া-উইন্ডজ ম্যাচকে টেনে আনলেন পেরেরা। ব্রিজটাইনের সেই ম্যাচে ক্যরিবীয়দের লক্ষ্য ছিল ৩০৮ রান। ঐ ম্যাচে পাঁচে ব্যাটে নেমে দলকে ১ উইকেটের জয় উপহার দিয়েচিলেন ব্রায়ান লারা। সেদিনও ঠিক ১৫৩ রানে অপরাজিত ছিলেন রেকর্ডের বরপুত্র।
তবে পেরেরার এই ইনিংসটা লারার ঐ ইনিংসের চাইতে অনেক মহত্মমাখা। শেষ উইকেটে সেদিন লারাকে পূরণ করতে হয়েছিল মাত্র ৬ রানের লক্ষ্য। কিন্তু পেরেরা কেবল ৭৮ রানের অসম্ভবপ্রায় লক্ষ্যই পূরণ করেননি, শেষ ব্যাটসম্যান ফার্নান্ডোকে নিয়ে তিনি যেভাবে ব্যাটিং করেছেন তার সাথে কারোরই তুলনা চলে না। ৭৮ রানের মধ্যে ফার্নান্ডোর অবদান ৫, ৪ রান আসে ওভার থ্রো থেকে। বাকি রান পেরেরার। এবং প্রতিটা রান নিতে কৌসুলী হতে হয়েছে তাকে। ওভারের শেষ বলে ছাড়া তেমন সিঙ্গেল নেননি। এর মাঝে সুযোগ বুঝে হাঁকিয়েছেন চার-ছক্কা। নিয়েছেন ২ রানও। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি ম্যাচটি সাজিয়েছেন ২০০ বল ১২টি চার ও ৫ ছক্কায়।
অথচ ২৮ বছর বয়সী বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানের ব্যাট করাই শঙ্কায় ফেলে দিয়েচিলেন রাবাদা। পেরেরা তখন ৭২ রানে। রাবাদার একটি শর্ট বলে পুল করতে বল এসে আঘাত হানে পেরেরার ডান হাতের র্তনীতে। সঙ্গে সঙ্গে মাঠে লুটিয়ে ব্যাথায় কাতরাতে থাকেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছিল তিনি আর ব্যাটিং করতে পারবেন না। বেশ কিছু সময় ডাক্তারি শুশ্রুষা নিয়ে, তর্জনী তো বটেই পুরো হাতে টেপ পেঁচিয়ে দেখলেন ব্যাট করতে পারবেন কিনা। শেষ পর্যন্ত ব্যাট চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
৩০৪ রানের লক্ষ্যে শেষ দুই দিনে শ্রীলকার দরকার ছিল ২২১ রান, হাতে ৭ উইকেট। সাত সকালেই স্কোরবোর্ড হয়ে যায় ৫ উইকেটে ১১০। এরপর ষষ্ঠ উইকেটে দনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে নিয়ে ৯৬ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন পেরেরা। প্রোটিয়াদের চিন্তার শুরু মূলত এখান থেকেই। কিন্তু মহারাজের ঘুর্ণীতে জুটি বিচ্ছিন্ন হতেই ২০ রানের মধ্যে আরো ৩ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচের লাগাম প্রায় নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু তখন থেকেই যে শুরু পেরেরা মহাকাব্যের।
পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে এসে পরাজিত অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস পেরেরাকে দিয়েছেন ‘সুপারম্যান’ আখ্যা। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩০-৫০ রান কম সংগ্রহ হওয়াকে পরাজয়ের কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন ডু প্লেসিস। তা তিনি দেখাতেই পারেন, শ্রীলঙ্কা যেখানে শেষ ৫ উইকেটে তুলেছে অবিচ্ছিন্ন ১৯৪ রান সেখানে প্রোটিয়ারা তুলতে পারে মাত্র ৮!
বিজয়ী অধিনায়ক দিমুথ করুনারতে্ন কেবল পেরেরাকে নয় তার সঙ্গি ভিসুয়া ফার্নান্ডোকেও দিয়েছেন কৃতিত্ব। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ধবলধোলাইয়ের পর দক্ষিণ আফ্রিকায় ২ ম্যাচের সিরিজটা অবিস্মরনীয় জয়ে শুরু করতে পারায় খুশি করুণারতে্ন। আর ‘ক্লান্ত’ পেরেরা কথা বলার ভাষাই হারিয়ে ফেলেন মাইক্রোফেনোর সামনে এসে, ‘আমি জানি না এখন কি বলতে হবে। লোয়ার অর্ডাররা আমাকে সাপোর্ট নিয়েছে। নিজের উপর এসময় আস্থা ছিল, এবং আমি পেরেছি।’
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণ আফ্রিকা : ২৩৫ (ডি কক ৮০, বাভুমা ৪৭; ফার্নান্ডো ৪/৬২, রাজিথা ৩/৬৮) ও ২৫৯ (ডু প্লেসিস ৯০, ডি কক ৫৫; আম্বুলদেনিয়া ৫/৬৬, ফার্নান্ডো ৪/৭১)। শ্রীলঙ্কা : ১৯১ (কুসল পেরেরা ৫১, করুনারতে্ন ৩০; স্টেইন ৪/৪৮, ফিল্যান্ডার ২/৩২) ও ৩০৪/৯ (কুসল পেরেরা ১৫৩*, ডি সিলভা ৪৮; মহারাজ ৩/৭১, ওলিভার ২/৩৫)। ফল : শ্রীলঙ্কা ১ উইকেটে জয়ী। ম্যাচ সেরা : কুসল পেরেরা। সিরিজ : ২ ম্যাচ সিরিজে শ্রীলঙ্কা ১-০তে এগিয়ে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।