Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যাটিং ঝড়ে মাশরাফির রেকর্ড

প্রকাশের সময় : ১৫ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী : ছয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে যখন নেমেছেন মাশরাফি, ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে তখন প্রতিপক্ষ শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বোলার-ফিল্ডাররাও ছিলেন ধাঁধায়। ৬ মাস আগে এই পাঁচ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে অসাধ্য সাধন করেছেন, বিপিএল ‘থ্রি’তে চিটাগাং ভাইকিংসের জয় কেড়ে নিয়েছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স অধিনায়ক মাশরাফি ৩২ বলে ৫৬ রানের নট আউট ইনিংসেÑ সেই অতীত থেকেই প্রেরণা পেয়েছেন মাশরাফি। দলের দশা ত্রাহি মধুসুদন। অবনমনের শংকা কাটাতে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বিপক্ষে কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের জয়টা ছিল কামনা। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা কলাবাগান ক্রীড়া চক্রকে সেই সাহসটাই দিয়েছেন ব্যাটিংয়ে মাশরাফি। লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে অতীতের ২০৫ ম্যাচে যে ছেলেটির ফিফটির সংখ্যা সর্বসাকূল্যে ৭টি, ২০৬তম ম্যাচে সেই কিনা উদযাপন করেছে প্রথম সেঞ্চুরি। এবং প্রথম সেঞ্চুরিটিই বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মধ্যে দ্রæততম (৫০ বলে), এবং ১১টি ছক্কায়ও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বাধিক। ৫১ বলে ১০৪ রানের ইনিংসে মাশরাফির ফিফটি উদযাপনে লেগেছে ৩৫টি বল, সেঞ্চুরির জন্য প্রয়োজনী অবশিষ্ট ফিফটিতে সেখানে লেগেছে মাত্র ১৫টি বল! ইনিংসে ১১ ছক্কার পাশে বাউন্ডারি মাত্র ২টি সেঞ্চুরির জন্য শেষ ৫০ রানে ছক্কা মেরেছেন তিনি ৭টি!
জানেন, তার এই ব্যাটিং ঝড়ে সিঙ্গল, ডাবল থেকে এসেছে মাত্র ৩০টি রান। এমন ইনিংসে ভর করে ৩১৬/৭ স্কোর পুঁজিতে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে রান পাহাড়ে চাপা দিতে পেরেছে মাশরাফির দল। তাতেই ব্যাটিং বিনোদন ম্যাচে ২১ রানে শেখ জামালকে হারিয়েছে মাশরাফিরা। ১১টি ছক্কার সব ক’টিতেই বেছে নিয়েছেন লং অন, মিড উইকেট পজিশনকে। কলাবাগান ক্রীড়া চক্র শেষ ৬০ বলে ১০৮, শেষ ৩০ বলে ৭৮ রান যোগ করতে পেরেছে মাশরাফির ঝড়ো ব্যাটিংয়ের কারণেই। আরাফাত সানি ছাড়া এদিন মাশরাফির হাতে ছক্কা খেয়েছেন সবাই। ৪৬তম ওভারে পেস বোলার মোক্তার আলীকে মেরেছেন ৩টি ছক্কা। ৪৮তম ওভারে বাঁ হাতি স্পিনার ওয়াহিদুল আলমের একটু বেশিই চড়াও হয়েছিলেন মাশরাফি, মেরেছেন ওই ওভারে চার চারটি ছক্কা! যার মধ্যে প্রথম তিন বলে টানা ছক্কা!
মাশরাফিময় ফতুল্লায় কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের ১৪টি ছক্কার জবাব দিয়ে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব মেরেছে ১৩টি ছক্কা! এক ম্যাচে ২৭টি ছক্কার বিরল কৃতির সাক্ষীও হয়ে থাকলো ফতুল্লা। শেষ ৩০ বলে ৯১Ñজয় অসম্ভব, তা ধরে নিয়ে শেখ জামাল টেল এন্ডার ওয়াহিদুল ব্যাটে তুলেছেন ঝড়, ২৭ বলে ৪৯ রানের ইনিংসে ৬টি ছক্কা মেরেছেন। যার মধ্যে নিহাদুজ্জামানকে এক ওভারে মেরেছেন ৩টি ছক্কা। ছক্কা মেরেছেন তিনি মাশরাফি এবং শফিউলকেও। রান আউটে কাটা না পড়লে এদিন ফিফটি পেয়ে যেতে পারতেন এই টেল এন্ডার। এমন ম্যাচে চতুর্থ ডেলিভারীতে শেখ জামাল ওপেনার মাহাবুবুল করিম মিঠুকে ফিরিয়ে দিয়েছেন মাশরাফি। তবে ব্যাটিং ফ্রেন্ডলী উইকেটে তার খরচাও কম নয় (৬-০-৪২-১)।
ছেলে-বেলায় ক্যারিয়ার শুরু যখন, তখন পেস অল রাউন্ডার হিসেবেই চিনিয়েছেন মাশরাফি। ব্যাটিং পজিশনটা ছিল মিডল অর্ডারে। ২০০১ সালে এশিয়া অনূর্ধ্ব-১৭ ক্রিকেটে কুয়েতের বিপক্ষে ১৬ বলে ফিফটিতে নিজেকে জাত ব্যাটসম্যান হিসেবেই ধরেছিলেন মেলে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর ব্যাটসম্যান পরিচয়টা মুছে ফেলেছেন নিজেই। তবে প্রয়োজনে দায়িত্ব নিয়ে করতে পারেন ব্যাটিংÑ ২০০৭ সালে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ বাঁচানো চট্টগ্রাম টেস্টে ৭৯ রানের হার না মানা ইনিংসে জানিয়ে দিয়েছিলেন তা। ২০০৬ সালে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের আন্তর্জাতিক অভিষেকে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ২৭ বলে মাশরাফির ম্যাচ উইনিং ফিফটিকেও মনে রেখেছে ঢাকার দর্শক। ২০০৫ সালে জাতীয় লীগে টেল এন্ড মাশরাফির সেঞ্চুরিতে ম্যাচ বাঁচিয়েছে খুলনা। ওয়ানডেতে দ্রæততম ফিফটিতে বাংলাদেশের সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও ছিল তার। ২০০৬ সালে বগুড়ায় কেনিয়ার বিপক্ষে ১৬ বলে নট আউট ৪৪ রানের সেই ইনিংসটা এখনো মনে রেখেছেন মাশরাফি। ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে বল করে নড়াইল এক্সপ্রেস খেতাব পেয়েছেন ঠিকই, তবে দলের প্রয়োজনে ব্যাটিংয়ের চাহিদা যে পারেন মেটাতে, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) থ্রি’তে চিটাগাং ভাইকিংসের বিপক্ষে ৩২ বলে ৫৬ রানের ম্যাচ উইনিং ইনিংসে জানিয়ে দিয়েছেন তা। গতকাল পেস বোলার মাশরাফি ফতুল্লায় রীতিমতো ব্যাটে তুলেছেন ঝড়! ৫০ বলে সেঞ্চুরি করে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মধ্যে দ্রæততম এখন তিনি! সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ২০০৯ সালে বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৬৩ বলে সাকিবের সেঞ্চুরিকে টপকে এই রেকর্ডটা গড়ে ফেলেছেন মাশরাফি! বাংলাদেশের মাটিতে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে মাশরাফির রেকর্ডটি অবশ্য তৃতীয়Ñ১৯৯৯ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪৫ বলে লারার সেঞ্চুরি এবং ২০১৩ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে রাজশাহীতে কলাবাগান একাডেমীর বিপক্ষে প্রাইম ব্যাংকের জিম্বাবুইয়ান ব্রান্ডন টেলরের ৪৬ বলে সেঞ্চুরির পর গতকাল শেখ জামাল ধানমন্ডির বিপক্ষে ৫০ বলে মাশরাফির সেঞ্চুরিটি ঠাঁই পেয়েছে তৃতীয় দ্রæততম তালিকায়। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মধ্যে শুধু দ্রæততম ফিফটির রেকর্ডই নয়, লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে এক ইনিংসে রেকর্ড ১১টি ছক্কার রেকর্ডও গড়েছেন মাশরাফি। বাংলাদেশের মাটিতে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তার চেয়ে বেশি ছক্কার ইনিংস আছে কেবল অজি ক্রিকেটার শেন ওয়াটসনের। ২০১১ সালে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ১৮৫ রানের ইনিংসে ১৫টি ছক্কা ছিল তার।
৬ষ্ঠ ম্যাচে দ্বিতীয় জয় পেলো কলাবাগান ক্রীড়াচক্র, সেখানে সম সংখ্যক ম্যাচে শেখ জামাল ধানমন্ডির তৃতীয় হার।

শেখ জামাল-কলাবাগান কেসি
কলাবাগান কেসি : ৩১৬/৭ (৫০.০ ওভারে), সাদমান অনীক ১৭, জসিমুদ্দিন ৬৪, মাসাকাদজা ৪৫, তাসামুল ৩৩, মেহরাব জুনি. ১৬, মাশরাফি ১০৪, শরীফুল্লাহ ১৫, শফিউল ১/৬৩, সোহাগ গাজী ২/৩৯, মাহামুদুল্লাহ ২/৫৬, নাজমুস সাদত ১/১৮।
শেখ জামাল : ২৯৫/১০ (৫০.০ ওভারে), মামুন ৪০, সোহাগ গাজী ৪৭, মাহামুদুল্লাহ ২৭, জাবিদ ৫২*, মোক্তার ৫১, ওয়াহিদুল ৪৯, মাশরাফি ১/৪২, দেওয়ান সাব্বির ১/৩৫, রাজ্জাক ১/৫৫, মাসাকাজদা ৪/৩৭, নিহাদুজ্জামান ১/৭৩, তানভীর ১/২৫।
ফল : কলাবাগান কেসি ২১ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : মাশরাফি (কলাবাগান কেসি)।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্যাটিং ঝড়ে মাশরাফির রেকর্ড
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ