Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

তীরে এসে ডুবল তরী

প্রকাশের সময় : ১৫ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস ডেস্ক : পথটা কঠিনই ছিল। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সেই পথটাকে নিয়ে গেছিলো স্বপ্নের দুয়ারে। ¯্রােতের বিপরীতে চলা এই ভাঙা ডিঙি নিয়ে ‘অদক্ষ’ নাবিকেরা বেশ ভালোভাবেই যাচ্ছিল তীরের দিকে। তবে হঠাৎই এক ঝড়ে টুকরো হয়ে গেল সেই স্বপ্নযাত্রা। পুরো রাস্তা মোটামুটি ভালোভাবে গাড়ি চালিয়ে গন্তব্যের কাছাকাছি আসার পর যদি চাকাটা ‘পাংচার’ হয়ে যায়, কেমন লাগবে? কেমন লাগবে যদি একটা ক্রিকেট ম্যাচে দলকে জেতানোর কাছাকাছি এনে শেষ বলে আউট হয়ে ম্যাচ হেরে গেলে? বিরক্তি, হতাশা, অসহায়ত্বের মিশ্র অনুভূতিই হয়তো হতে পারে। শেষ মুহূর্তে ভজকট লেগে গেলে কারই বা ভালো লাগবে!
ফুটবলে এমন কিছু ক্লাবের গল্প আছে, যেখানে মৌসুমের শেষদিনে এসে হঠাৎ করেই স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে সমর্থকদের। পুরো মৌসুমে লিগের অবনমন অঞ্চলে না থেকেও শেষ দিনের দুর্ভাগ্যে হতে হয়েছে অবনমিত!
আট-নয় মাস ধরে একটা লিগ মৌসুম চলে। তাতে এত এত ম্যাচ খেলে, এত পরিশ্রমের পর একটা দল শেষ দিনে এসে যদি দেখে তাদের স্বপ্নের চাকা ‘পাংচার’ হয়ে গেছে, সেটা মেনে নেওয়া কঠিনই। এমনই কিছু গল্প আছে ইউরোপের বিভিন্ন ফুটবল লিগে।
১৯০৮-০৯ মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটির গল্পটাই শুনুন। তখনও লিগের ফরম্যাটটা এখনকার মতো ছিল, ২০ দল, প্রত্যেক দলের ৩৮ ম্যাচ। তবে পয়েন্ট তালিকায় সেবার দলগুলোর অবস্থান যেন গায়ে-গায়ে জড়ানো ছিল। মৌসুম শেষে ৬ নম্বরে থাকা উলউইচ আর্সেনাল ও ১৯ নম্বরে থাকা ম্যান সিটির মধ্যে পয়েন্টের ব্যবধান ছিল মাত্র ৪! কিন্তু তাতে সিটিরই কপাল পুড়ল। পুরো মৌসুমে ৩৭ ম্যাচেও কখনো অবনমন অঞ্চলে নামতে হয়নি। সেই সিটিই ৩৮তম ম্যাচে ব্রিস্টল সিটির কাছে ১-০ গোলে হেরে নেমে গেল অবনমন অঞ্চলে।
সিটি তা-ও পুরো মৌসুমে লিগের পয়েন্ট তালিকায় মাঝামাঝিতে ছিল। ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে ডিভিশন ওয়ানে (বর্তমান চ্যাম্পিয়নশিপ) মিলওয়ালের গল্প তো আরও করুণ, বলতে পারেন পাহাড়ের চ‚ড়া থেকে মাটিতে পড়ে যাওয়ার মতো। ডিসেম্বরের শুরুতে মিলওয়াল ছিল লিগ টেবিলে সবার ওপরে। কিন্তু বড়দিনে উৎসবটা সম্ভবত একটু বেশিই হয়ে গিয়েছিল, এরপর যে শেষ ২৫ ম্যাচে এল মাত্র ১৮ পয়েন্ট! মৌসুমের শেষ দিনে তারা অবনমিতই হয়ে গেল ৪৬তম ম্যাচে ঘরের মাঠে মিলওয়াল ড্র করল।
ইয়র্ক সিটিরও দুঃখ ছিল শেষ দিনে নিজেদের কাজটা ঠিকভাবে করতে না পারা। ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে ডিভিশন টু-তে (বর্তমান লিগ ওয়ান) শেষ দিনে তাদের নিচে থাকা দুই দল ওয়াইকম্বে ও ওল্ডহাম নিজেদের ম্যাচ জিতে গিয়েছিল। ওল্ডহাম ২-০ গোলে রিডিংকে হারিয়েছিল, ওয়াইকম্বে তো নিজেদের ম্যাচে ৮৩ মিনিটে এসে জয়সূচক গোল করল লিংকনের সঙ্গে। একই সময়ে চলা ম্যাচে ইয়র্ক সিটিও জিতলেই হতো। কিন্তু শেষ ম্যাচে তাদের ভাগ্যে জুটল ম্যানচেস্টার সিটির কাছে ৪-০ গোলের লজ্জা। মৌসুমে মাত্র সাত মিনিট তারা ছিল অবনমন অঞ্চলে (ওয়াইকম্বে গোল করার পর), সেটিই শেষ পর্যন্ত হয়ে গেল ললাট-লিখন!
শুধু ইংলিশ দলগুলোর ভাগ্যেই এমন অসহায় পরাজয় জুটেছে, তা নয়। ইতালির ভেরোনাও আছে হতভাগাদের তালিকায়। অনেকটা ১৯০৮-০৯ মৌসুমের সিটির মতো, তারাও মৌসুমের অনেকটা সময় ছিল মাঝামাঝি অবস্থানে। কিন্তু লিগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসেই শুরু হয় তাদের পথ হারানো। তবু কখনো অবনমন অঞ্চলে নামতে হয়নি আলবার্তো জিলার্দিনো, আদ্রিয়ান মুটুদের দলের। অভিজ্ঞতাটা হলো শেষ দিনে। অবনমনের লড়াইয়ে তাদের প্রতিদ্ব›দ্বী পিয়াসেঞ্জার কাছে হারটাই লিখে দিল, পরের মৌসুমে দ্বিতীয় বিভাগে খেলতে হবে হেল্লাস ভেরোনাকে।
১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে লিংকন সিটিকেও অবনমিত হতে হয়েছে শেষ দিনে এসে। মজার ব্যাপার, ফুটবল লিগ (ইংলিশ ফুটবলের চতুর্থ স্তর) থেকে অবনমিত হতো একটাই দল, শেষ দিনে এসে সেই দুর্ভাগ্য হলো লিংকনের। যারা কিনা এর আগে একটা দিনও অবনমনের ‘লাল রঙা’ ঘরটাতে ছিল না। ঘটনাটাও বেশ নাটকীয়। শেষ দিনে লিংকন হেরে গিয়েছিল সোয়ানসি সিটির কাছে। তা-ও সমস্যা হতো না, যদি টরকেই ইউনাইটেড নিজেদের ম্যাচে জয় না পেত। তাদের এক খেলোয়াড়, জিম ম্যাকনিকোলকে আবার কুকুরও কামড়েছিল। সব মিলিয়ে সমীকরণ টরকেইয়ের বিপক্ষেই ছিল। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে যোগ করা সময়ে গোল করে ক্রিউই আলেক্সান্দ্রার সঙ্গে ম্যাচটা জিতে যায় টরকেই।
জার্মান দ্বিতীয় বিভাগে কিকার্স অফেনবাখ এখন ভাবতে পারে, আমাদের শেষ দিনের ‘দুর্ভাগ্য’টা এক মৌসুম পরে এলে কী এমন ক্ষতি হতো। ২০০৭-০৮ মৌসুমের শেষ দিনে অবনমনের লড়াইয়ে থাকা অসনাবর সিকের সঙ্গে ৩-০ গোলে হেরে পয়েন্ট তালিকায় ১৩ থেকে ১৫-তে নেমে আসে অফেনবাখ। ১৮ দলের লিগ থেকে সেবারই শেষবার চারটি দল অবনমিত হয়েছিল, পরেরবার থেকে দুটি দলকে অবনমিত করা হয়।
এত এত হতভাগাদের ভিড়েও শেফিল্ড ইউনাইটেডের গল্পটা সম্ভবত সবচেয়ে বেশি দুঃখের। ১৯৮০-৮১ মৌসুমে ইংলিশ ফুটবলের তৃতীয় স্তরের শেষ ম্যাচে তারা ড্র করেছিল ওয়ালসালের সঙ্গে। তাতেই অবনমন হয়ে যেত, কিন্তু হঠাৎই স্টেডিয়ামে গুজব শুরু হয়ে যায়, অন্য ম্যাচের ফলগুলো তাদের পক্ষে আসায় শেফিল্ডকে অবনমিত হতে হচ্ছে না। সমর্থকেরা তো উদযাপনও শুরু করে দিয়েছিলেন, ‘স্টেয়িং আপ! স্টেয়িং আপ!’ কিন্তু মিনিট দুয়েক পরই উৎসবটায় নেমে এল শ্মশানের নীরবতা। গুজব ভুল প্রমাণিত হলো, অবনমিতই হতে হলো শেফিল্ডকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তীরে এসে ডুবল তরী
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ