মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দের মধ্যে আলোচনা সফল হয়েছে। তারা দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটের সাইডলাইনে সাক্ষাত করেন। সামিটে মূল বক্তা ছিলেন খান। তিনি সেখানে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজের স্বপ্ন তুলে ধরে। খানের বক্তৃতায় পাকিস্তানের সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নের কেন্দ্রিয় গুরুত্বটি তুলে ধরা হয়। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, মন্ত্রী ও ব্যবসায়ী নেতারা যোগ দেন।
পাকিস্তানের অর্থনীতির নতুন ক্ষেত্রগুলোর সুযোগ গ্রহণ করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে খান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সবুজ উন্নয়নের মতো খাতগুলো গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন। দেশের আর্থিক দৃষ্টিভঙ্গী উন্নত করার লক্ষ্যে সংস্কার জোরদারের কথা উল্লেখ করেন খান। তিনি স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে অধিক ব্যয়ের মাধ্যমে মানব উন্নয়ন জোরদারের পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। এসময় খান বলেন, সংস্কার কষ্টকর হলেও তা জরুরি।
দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন লাগার্দে। তাই তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আইএমএফ’র আলোচনার টোনটি কি হতে পারে তা আগেই বুঝেছিলেন। বিস্তারিত তুলে ধরে খান বলেন যে তার সরকার দেশের অর্থনৈতিক নীতিগুলো সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছিলো কিন্তু টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াই চলমান সংকট নিরসন সম্ভব ছিলো না। বিশেষ করে পাকিস্তানের মূল সমস্যা হলো আমদানি বেড়ে যাওয়া। ফিসকেল ঘাটতি কমানের জন্য ব্যয় সংকোচন করা হয়েছে। ব্যবসায় সুবিধার জন্য কর আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
জরুরি ভিত্তিতে পাকিস্তানের সহায়তা প্রয়োজন হলেও ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে আইএমএফ’র সঙ্গে চলা বৈঠকগুলো ফলদায়ক হয়নি। কর রাজস্ব আয় ব্যবস্থা জোরদার ও ফিসকেল ঘাটতি কমানোর উপর আইএমএফ জোর দেয়ায় কোন চুক্তিতে পৌঁছানো যায়নি। কিন্তু এবার আইএমএফ কর্মকর্তারাই বৈঠকটিকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
আইএমএফ যে ধরনের কাঠামোগত সংস্কার চায় পাকিস্তান সরকার তাতে রাজি না হওয়ায় সাহায্য করার প্রশ্নটি আটকে যায়। ফলে তহবিলের জন্য পাকিস্তান বন্ধু দেশগুলোর দ্বারস্থ হয়। চীন, আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের মতো দেশগুলো পাকিস্তানের সহায়তায় এগিয়ে আসে। এরই মধ্যে পাকিস্তান ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ ও অন্যান্য সুবিধা আদায়ে সক্ষম হলেও দেশটির অর্থনৈতিক সমস্যা পুরোপুরি কেটে যায়নি। স¤প্রতি পাকিস্তানের ব্যাংকিং খাতকে ‘নেতিবাচক’ মার্কিং করেছে মুডি র্যাংকিং।
লাগার্দের সঙ্গে আর্থিক বেইল আউট নিয়ে খান কথা বলেন। এসময় অর্থমন্ত্রী আসাদ উমর পাশে ছিলেন।
উৎসাহের ব্যাপার হলো আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছিলো তার অনেকগুলোর ব্যাপারে মতৈক্য প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বৈঠকটি শেষ হয়। পাকিস্তানকে আইএমএফ সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত উল্লেখ করে লাগার্দে আশা প্রকাশ করেন যে এর মাধ্যমে দেশটি সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে।
আইএমএফ প্রধানের এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পাকিস্তান সরকারের নীতি এজেন্ডাগুলো প্রশংসার যোগ্য। কারণ এতে দরিদ্রদের রক্ষা ও সুশাসনের উপর মনযোগ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের উপরও নজর দেয়া হয়।
একইভাবে খান তার টুইটার একাউন্টে লিখেন, লাগার্দের সঙ্গে তার বৈঠকে কাঠামোগত সংস্কারের ব্যাপারে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফলে আইএমএফ’র সঙ্গে চুক্তি করার ক্ষেত্রে অচলাবস্থার নিরসন নিকটে বলে মনে হচ্ছে।
পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাত্র ৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। বেইল আউট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া মাত্র দুই মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারবে দশটি। একই সঙ্গে ডলারের মজুত বাড়ানোও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তেল, যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির জন্য ডলারে পরিশোধ করতে হয়। তাই অর্থনীতিকে সঠিক পথে রাখতে শিগগিরই আইএমএফ’র ঋণের ঘোষণা দেয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গত বছর পাকিস্তানের মুদ্রা মানের ২০% পতন ঘটে। এতে অর্থনৈতিক অবস্থার আরো অবনতি হয়। অন্যদিকে মাসের পর মাস কোন চুক্তি ছাড়াই আইএমএফ’র সঙ্গে আলোচনা চলে। গত দশকে তুরস্ক ও হাঙ্গেরির সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে। তবে মূল শর্ত হলো সময় মতো ঋণ পরিশোধ। আর সেজন্য রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য পূরণ করতে হবে। তারপরও পাকিস্তান শিগগিরই আইএমএফ’র অর্থনৈতিক কর্মসূচি পেতে যাচ্ছে বলে ধরে নেয়াই ভালো। সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।