মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ কমিশনারকে বাঁচাতে ধর্মঘটে বসেছিলেন। কিন্তু এই রাজ্যেই বহু পুলিশকর্মী নীরবে যোগ দিচ্ছেন অপেক্ষাকৃত কম বেতন ও মর্যাদার অন্য চাকরিতে| রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও অতিরিক্ত কাজের চাপই এর কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরাI
কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে তৎপর হয়েছিলেন রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর তিনি ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেল ধর্না মঞ্চ থেকে ভারতীয় পুলিশ বাহিনীকে রক্ষা করার ডাকও দিয়েছিলেন। এই ঘটনাক্রমে মনে হতে পারে, পশ্চিমবঙ্গে পুলিশের কর্মীরা সরকারের ছাতার আশ্রয়ে নিশ্চিন্তে রয়েছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়েই দেখা যাচ্ছে, পুলিশের চাকরির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছেন পুলিশকর্মীদের একটা অংশ। গত ৮ বছরে শুধু ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট পদ থেকেই প্রায় ৬০ জন ইস্তফা দিয়েছেন।
অতি সম্প্রতি কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক কন্ট্রোলে কর্মরত সার্জেন্ট করুণাময় চট্টোপাধ্যায় কলকাতা পুলিশের চাকরি ছেড়ে রেলের গ্রুপ ডি পদে যোগদান করেছেন। বেতন ও মর্যাদা তো বটেই, প্রভাব-প্রতিপত্তির দিক থেকেও যা পুলিশের চাকরির সঙ্গে তুলনীয় নয়। তার চাকরি ছাড়ার আবেদন ঘিরে পুলিশমহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল। প্রশ্ন উঠছে, ভালো বেতন ও সম্মানের চাকরি ছেড়ে অপেক্ষাকৃত কম বেতন ও নিচু পদের চাকরিতে যোগদান কি তবে পুলিশি পেশায় বিরক্ত হয়েই? অনেকের মতে, পুলিশের চাকরিতে স্বাধীনতার অভাব, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং সর্বোপরি পুলিশ হেনস্থার যে সংস্কৃতি পশ্চিমবঙ্গে চালু হয়েছে, তাতে এই চাকরি মোটেও আর সম্মানের নয়। এর পাশাপাশি পুলিশ কর্মীদের রয়েছে নানাবিধ অভিযোগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের এক কর্মচারী বলেন, ‘ঠিকঠাক বেতন পেলেও পুলিশরা ভালো নেই। কাজের চাপ এত বেশি যে, ছুটিই পাওয়া যায় না। পাশাপাশি বিমার জন্য টাকা কেটে নিলেও ভালো চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যায় না। আমাদের যা কিছু অভাব-অভিযোগ তা যদি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছাতে যাই, তাহলে বদলির আশঙ্কা। পাশাপাশি সাধারণ মানুষ অশ্রদ্ধা করে, উপরতলার চাপ তো আছেই। এ জন্যই অনেকে চাকরি পরিবর্তন করে স্কুলে জয়েন করেছেন বা বাড়িতে ব্যবসা শুরু করেছেন।’
পুলিশমহলের অনেকেই স্বীকার করেছেন যে, রাজনৈতিক চাপে পিষ্ট পুলিশমহলকে যখন তখন রাজনৈতিক কর্তারা অপদস্থ করে থাকেন। এ ব্যাপারে নজির গড়েছেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। পুলিশ যে ঠিকঠাক কাজ করতে পারছে না সেটার প্রেক্ষিতেও বহু উদাহরণ আছে। অতীতে পুলিশকে বোমা মারার হুমকি দিয়ে সেই মামলায় খালাসও পেয়ে গিয়েছেন তিনি। রায় দেওয়ার আগে বিচারকও তার মন্তব্যে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ার মূল কারণ পুলিশি ব্যর্থতা।
এ ব্যাপারে প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তা সন্ধি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘পুলিশকে সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে দেওয়ার পরিস্থিতি নেই। দেশের ভয়ংকর গণতান্ত্রিক পরিস্থিতিতে আজ পুলিশকে যদি বোমা মারাও হয়, তা-ও পুলিশ কিছু করতে পারবে না।’ এই প্রাক্তন পুলিশ কর্তা মনে করেন আগের চেয়ে পরিস্থিতি অনেক খারাপ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘পুলিশকে যেভাবে দুর্বৃত্তদের কথা অনুযায়ী চলতে হচ্ছে, সেটা আগে এতটা ছিল না। অবস্থার অবনতি হতে হতে আজ এই জায়গায় পৌঁছেছে। সে কারণেই বিবেকের তাড়নায় আজ অনেকে পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিচ্ছে।’
একই সুরে প্রাক্তন আইপিএস ড. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ চিরকালই শাসকদলের হয়ে কাজ করে এসেছে। এটা নতুন নয়। তবে আগের সরকারের আমলে যেটুকু রাখঢাক ছিল, এই সরকারের আমলে সেটাও নেই। মুখ্যমন্ত্রীর ধর্না মঞ্চে যেভাবে আইপিএস অফিসাররা বসে ছিলেন রাজনৈতিক আশ্রয়ে, সেটা থেকে এটা স্পষ্ট।’
করুণাময় চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পরিবারকে সময় না দিতে পারার জন্যই তিনি পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তুকলকাতা পুলিশের এক প্রাক্তনী জানিয়েছেন, তিনি ক্রমবর্ধমান চাপের কাছে নতি স্বীকার করেই স্কুল শিক্ষকতা বেছে নিয়েছেন। ওই ব্যাচের আরো অনেকে ভূমি রাজস্ব আধিকারিক বা আরো কম বেতনের চাকরিতে যোগদান করেছেন।
রাজ্যের প্রাক্তন পুলিশকর্তা নজরুল ইসলাম সরাসরি বলেন, ‘উপরের প্রচণ্ড চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে সৎভাবে কাজ করে যাওয়ার জন্য যে দৃঢ়তা দরকার হয়, তা অনেকেরই থাকে না। এর মধ্যে অনেকে মাথা নিচু করে পদোন্নতি, আর্থিক সমৃদ্ধি বেছে নিয়ে চাকরি করেন। আবার মানসিক শান্তির জন্য অনেকেই কম চাপের চাকরিতে চলে যান।’ সূত্র: এনডিটিভি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।