Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তামাদি হতে চলেছে সিটিজেনশিপ বিল

আসামের বরাক ভ্যালিতে বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

ভারতীয় পার্লামেন্টের উভয় হাউজই অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি করা হয়েছে বুধবার এবং আবার অধিবেশন বসার কোন সময় ঘোষণা করা হয়নি। এ অবস্থায় বিতর্কিত সিটিজেনশিপ (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল ২০০৬ তামাদি হতে চলেছে। আসামের বরাক ভ্যালি -যেখানে এই বিলটির পক্ষে ব্যাপক সমর্থন ছিল, সেখানকার মানুষ ভারতীয় জনতা পার্টির উপর ব্যাপক হতাশা ব্যক্ত করেছে, যে দলটি এই বিল উত্থাপন করেছিল।

এই বিলে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে আসা অমুসলিম অভিবাসীদের ভারতের নাগরিকত্ব দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। এই বিল উত্তরপূর্বাঞ্চলে বাকি প্রায় সমস্ত জায়গায় তীব্র প্রতিবাদের জন্ম দেয়। এই সব এলাকার আদিবাসী গ্রুপগুলো অভিযোগ করেছিল যে, এই বিল পাস হলে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং সংস্কৃতি হুমকির মুখে পড়বে। কারণ বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু অভিবাসীদের এখানে নাগরিকত্ব দেয়া হবে।
‘রাজনৈতিক কৌশল’
৪ জানুয়ারি বরাক ভ্যালির শিলচরে বক্তৃতা দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন যে, “ভারত ভাগের সময় যে ভুল হয়েছিল, এই বিল হবে সেই ভুলের মাশুল”। দেশ ভাগের কারণে পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে যে বাঙালি হিন্দুদের চলে আসতে হয়েছিল, তাদের দিকে ইঙ্গিত করেই এ মন্তব্য করেন তিনি।
এর কয়েক দিন পরেই ৮ জানুয়ারি বিলটি লোকসভায় পাস হয়। বাজেট অধিবেশনে বিলটি রাজ্যসভায় উপস্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু বিলটি তালিকাভুক্ত হওয়ার পরও উপস্থাপন করা হয়নি।
বুধবার ছিল বাজেট অধিবেশনের শেষ দিন এবং এটা ছিল আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে চলতি পার্লামেন্টের সর্বশেষ অধিবেশন। লোকসভায় পাসের পর রাজ্যসভায় কোন বিল পাস না হলে পার্লামেন্ট বিলুপ্তির সাথে সাথে বিলটি তামাদি হয়ে যাবে। ৩ জুন বর্তমান লোকসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
বিজেপির ক্ষতি?

বাঙালি প্রধান বরাক ভ্যালি আর আসামি প্রধান ব্রহ্মপুত্র ভ্যালি এলাকার মানুষদের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবেই টানাপড়েনের সম্পর্ক চলে আসছে। গত কয়েক মাসে বরাক ভ্যালি বিলের পক্ষে তাদের সমর্থন জানিয়েছে এবং ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার মানুষ তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়ায় দুই জনগোষ্ঠির মধ্যে বিভেদটা আরো বেড়েছে। পুরকায়স্থ বলেন, “তারা (বিজেপি) উত্তরপূর্ব অঞ্চলের বিভিন্ন স¤প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ বাড়িয়েছে এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে”।

তিনি আরো বলেন যে, বিলটি পাস করতে না পারায় বিজেপির ঐতিহ্যগত সমর্থনের এই বরাক ভ্যালিতে তাদের নির্বাচনী সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, “যারা নাগরিকত্বের জন্য অপেক্ষা করছে, তারা সবাই বুঝবে যে রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের জন্যই কেবল এতসব নাটক মঞ্চস্থ করেছে বিজেপি, দেশভাগের শিকার মানুষদের সহায়তার জন্য নয়”।
‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি’

বরাক ভ্যালির বিজেপি নেতারা অবশ্য সমালোচনায় দমে যাননি। দলের কাসার শাখার প্রধান কৌশিক রায় বলেছেন বিলটি পাশ করানোর জন্য সরকার তার সামর্থ্যের মধ্যে সবরকম চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, “সবাই জানে যে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। লোকসভায় আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, সেখানে আমরা একদিনেই বিলটি পাস করেছি। রাজ্যসভায় আমরা সেটা করতে পারিনি, কারণ এখানে সময়সীমার একটা ব্যাপার রয়েছে, আর সেখানে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতাও নেই। তাছাড়া বিরোধী দল আমাদের অনেক সময় নষ্ট করেছে এবং এই বিল পাসের প্রক্রিয়া ব্যাহত করেছে”।

বিজেপির কাসার জেলা কমিটির নির্বাহী সদস্য সান্তনু নায়েকের অবস্থানও একই রকম। তিনি বলেন, “কেউই অস্বীকার করতে পারবে না যে, সরকার বিলটি পাস করার ব্যাপারে শতভাগ আন্তরিক ছিল”। সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তামাদি হতে চলেছে সিটিজেনশিপ বিল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ