Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নসর ক্ষেপণাস্ত্র ও দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

পাকিস্তান গত ২৪, ২৮ ও ৩১ জানুয়ারি ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নসরের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। সেনাবাহিনীর স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ড প্রশিক্ষণ মহড়ার অংশ হিসেবে এই পরীক্ষা চালায়। আর্মি স্ট্র্যাটেজিক ফোর্স কমান্ডের অপারেশনগত দক্ষতা বাড়ানোর জন্য এআর১এ/এ১০০-ই মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম (এমএলআরএস) থেকে একসাথে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়।

নসর দিয়ে হামলা প্রতিরোধ ব্যবস্থা এড়িয়ে দ্রুততার সাথে হামলা পরিচালনা সম্ভব। এটি অস্ত্রটির টেকসইগত মাত্রাও বাড়িয়ে দিয়েছে। ভারতের বর্তমান ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধব্যবস্থা এড়িয়েই তা লক্ষ্যস্থলে হামলা চালাতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ক্ষেপণাস্ত্র এমনকি এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও হারিয়ে দিতে পারবে। উল্লেখ্য, রাশিয়ার কাছ থেকে ভারত এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয় চুক্তি করেছে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার চলমান বৈরিতার কারণে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলকে অস্থিতিশীল বিবেচনা করা হয়ে থাকে। দুই দেশের মধ্যে অনন্ত বৈরিতা থাকা সত্তে¡ও পরমাণু অস্ত্র বড় ধরনের স্থিতিশীলতা নিয়ে এসেছে। ভারত পরমাণু অস্ত্র সংগ্রহের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পর পাকিস্তানও তা অনুসরণ করে। কারণ ভারতের প্রচলিত অস্ত্রে শ্রেষ্ঠত্বকে পাকিস্তান পরমাণু অস্ত্র দিয়ে মোকাবিলা করতে পারবে।
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার নিরাপত্তা প্রতিযোগিতা প্রতিক্রিয়া-পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় জর্জরিত। ভারতের সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের বিরুদ্ধে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য পাকিস্তান তার পরমাণু অস্ত্র নির্মাণের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ২০০৪ সালে ভারত আগ্রাসী সামরিক মতবাদ গ্রহণ করলে পাকিস্তান স্বল্প পাল্লার ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নের দিকে নজর দিয়ে পাল্টা জবাব দেয়। প্রচলিত অস্ত্র সংগ্রহে ভারত যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে, পাকিস্তানের পক্ষে তার সাথে প্রতিযোগিতা করা সম্ভব হবে না। এ কারণে সে পরমাণু অস্ত্রের সহায়তা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পাকিস্তানের সমালোচনা করে বলছে, এটি দক্ষিণ এশিয়ায় অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়াবে। কিন্তু বাস্তবে ভারতের আক্রমণাত্মক সামরিক মতবাদ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্যই নসর মোতায়েন করেছে পাকিস্তান।

ভারতের কোল্ড স্ট্রার্ট ডকট্রিন পাকিস্তানকে বাধ্য করেছে পরমাণু অস্ত্র ভাণ্ডারের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে। ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন ২০১৭ সালে কোল্ড স্ট্রার্ট ডকট্রিনের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। এখন পাকিস্তানের নসর ক্ষেপণাস্ত্র ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার দূর থেকেই ভারতের ওই ধরনের হামলা প্রতিরোধ করতে পারবে। মনে রাখতে হবে, ভারত প্রকাশ্যে ওই ঘোষণা প্রদান করার আগে পর্যন্ত পাকিস্তান নসর ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা সম্পন্ন করেনি।


পাকিস্তান অস্ত্র প্রতিযোগিতা চায় না। তবে ভারতের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতেই হচ্ছে। তাছাড়া পাকিস্তানের নসর ক্ষেপণাস্ত্র অত্যন্ত সুরক্ষিত রাখা আছে। এটি অন্য কারো হাতে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।
নসরের সাম্প্রতিক পরীক্ষা ভারতীয় কমান্ডারদের ভীত করার কারণ হলো এটি ভারতের বিদ্যমান সব ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পরাজিত করতে পারবে। অর্থাৎ প্রতিপক্ষের মনে এটি ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। ভারতীয় নেতারা যতক্ষণ পর্যন্ত নসরকে ভয় পাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তা কার্যকর থাকবে। সূত্র : এসএএম



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নসর ক্ষেপণাস্ত্র
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ