Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঐক্যফ্রন্টের এমপিদের সংসদে আসার আহ্বান

মনটা গ্রামেই পড়ে থাকে : সংসদে প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

গ্রামে বড় হওয়ার পর শহরে চলে এলেও এখনও মন গ্রামেই পড়ে থাকে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ী সংসদ সদস্যদের সংসদে আসার আহবান জানিয়েছেন সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যারা (ঐক্যফ্রন্ট) নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেও অল্প সিট পেয়েছেন বলে অভিমানে তারা পার্লামেন্টে আসছেন না। আমার মনে হয়, তারা একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ ভোটের মালিক জনগণ, জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দেবে এবং সেভাবেই জনগণ ভোট দিয়েছে। কাজেই আমার আহবান থাকবে, যারাই নির্বাচিত সংসদ সদস্য তাঁরা সবাই পার্লামেন্টে আসবেন, বসবেন এবং যার যা কথা সেটা বলবেন। মঙ্গলবার গাজীপুরে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষার (ভিডিপি) ৩৯তম জাতীয় সমাবেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, রাজনীতি থেকে অবসরের পর গ্রামে চলে যাব। গতকাল বিকেলে জাতীয় পার্টির এমপি ফখরুল ইমাম টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর আসনে আসীন শেখ হাসিনার কাছে তার অবসরের পর গ্রামে চলে যাওয়ার বিষয়েও জানতে চান। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে গ্রামে জন্মেছি ও বেড়ে উঠেছি সে গ্রামের স্মৃতি বড় মধুর। গ্রামের কাদামাটি মেখে বড় হয়েছি। এ স্মৃতি কোনো দিন ভোলা যায় না, মোছা যায় না। শেখ হাসিনা বলেন, গ্রামের নির্মল বাতাস এখনও আমাকে টানে। ইট পাথরের এই নগরী আর ভালো লাগে না। গ্রামের নির্মল বায়ু, খোলা মেলা আকাশ। প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নেওয়া যায়। এ কারণে অবসরে গ্রামে থাকা আমার খুব আকাঙক্ষা।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে এসংক্রান্ত সম্পুরক প্রশ্নটি উত্থাপন করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মো. ফখরুল ইমাম। জবাবে তিনি আরো বলেন, ভোটের মালিক জনগণ, জনগণ যাকে খুশি তাঁকে ভোট দেবে এবং সেভাবেই তারা দিয়েছে। সংসদে আসলে তাদের (বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ী এমপিরা) যদি কোন কথা থাকে, তাহলে তারা কিন্তু বলার একটা সুযোগ পাবে। আর এই সুযোগটা শুধু পার্লামেন্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। যেহেতু মিডিয়াতে সম্পূর্ণভাবে অধিবেশন সরাসরি দেখানো হয় এবং সংসদ টিভিও আছে, তার মাধ্যমে সারাদেশের মানুষ তাদের কথা জানতে পারবে। এই সুযোগটা তাঁরা কেন হারাচ্ছেন আমি জানি না। আমার আহক্ষান এটাই থাকবে, যারাই নির্বাচিত সদস্য তারা সবাই পার্লামেন্টে আসবেন, বসবেন এবং যার যা কথা সেটা বলবেন এটাই আমি আশা করি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ী হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতসহ ৯৭টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিভিন্ন সংস্থান প্রধানরা তাঁকে অভিনন্দন জানানোর কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব অভিনন্দন বার্তায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির জন্য আমাদের সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করার ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। আমি যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন দেশের অব্যাহত উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য কাজ করে যাবো। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে উন্নত, সমৃদ্ধ এবং শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করব। আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের এ অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ, সুখী ও শান্তিময় দেশ। প্রধানমন্ত্রী অবসরের সময় নিজ গ্রাম টুঙ্গীপাড়ায় ফিরে যাওয়ার ইচ্ছার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চেয়েছি সকলে সম্মিলিতভাবে দেশটাকে গড়ে তুলবো। তাই আমি নির্বাচনের আগে সকল দলকে ডেকেছিলাম, সুন্দর পরিবেশে বৈঠক করেছি এবং সকলকে আমি আমন্ত্রণ করেছিলাম যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। তিনি বলেন, গত ১০ বছরের দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে, সেই উন্নয়নের সুফল দেশের জনগণ পেয়েছে। আর সুফল পেয়েছে বলেই জনগণ বহুপূর্ব থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েই রেখেছিল যে, তারা আমাদের নৌকা মার্কায় ভোট দেবে এবং জনগণ সেই ভোট দিয়েছে।
বিশ্বের গণতান্ত্রিক সকল দেশ সরকারের পাশে জাপার এমপি রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নোত্তরে সংসদ নেতা বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বিগত দশ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের অভাবনীয় সাফল্য বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের জনবান্ধব নীতি ও কর্মসূচির বাস্তবায়ন, জনগণের কঠোর পরিশ্রম এবং সহযোগিতার ফলে। আমি জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলাদেশকে একটি আত্ম-মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দেশ আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশকে আজ বিশ্ব সম্প্রদায় সম্মানের দৃষ্টিতে দেখে। তাছাড়া আমি মনে করি সকল চ্যালেঞ্জ উপেক্ষা করে নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে।
অপরাধীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর সরকারি দলের সদস্য মামুনুর রশীদ কিরনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত। স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্র মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে রাজনীতি করে দেশের সুনাম ক্ষুন্ন করতে চেয়েছে। তবে আমাদের ঐকান্তিক চেষ্টার ফলে বারবার তা ব্যর্থ হয়েছে। কুচক্রি মহল যাতে কোনো ভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ক্ষেত্র তৈরী না করতে পারে, সে ব্যাপারে আমরা সজাগ রয়েছি।



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:০৭ এএম says : 0
    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখানে খুবই স্পষ্ট ভাবে ওনার কথাগুলো ব্যক্ত করেছেন এখানে উনি যা বলেছেন সবই সত্য বলেছেন এবং ওনার এই জবাবের পর কোন কথাই থাকতে পারেনা। নেত্রী হাসিনা বলেছেন, ‘যারা নির্বাচনে অংশ নিয়ে অল্প সিট পেয়েছে, সেই অভিমানে তারা পার্লামেন্টে আসছে না। আমার মনে হয় রাজনৈতিকভাবে এটা ভুল সিদ্ধান্ত।’ কথাগুলো খুবই যুক্তি সংগত, ওনার কথাই আমাদের সবারই কথা, আর এটাই সত্য কথা। আমরা মনে করি বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট তাদের অভিমান ভুলে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সংসদে যোগদান করবেন। আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি ওনারা নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন আইন অনুযায়ি ওনারা মামলা করতেই পারেন। এখন মামলা চলবে মামলার গতীতে এবং একসময় এর সিদ্ধান্তও হবে কিন্তু তাই বলে কি ওনার স্বাভাবিক কাজ কর্ম বন্ধ করে দিবেন??? কাজেই আমরা মনে করি প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বানে ওনাদের সাড়া দেয়া উচিৎ। আমরা দেখতে পাচ্ছি নেত্রী হাসিনা বার বার ওনাদেরকে কোন না কোন ভাবে সুযোগ করে দিচ্ছেন বিষয়টাকে নিয়ে সহজ ভাবে সমাধান করার জন্যে। এখন যদি অপর পক্ষ কোন সাড়া না দেয় তাহলে কোন কিছুই করার থাকেনা। একটা কথা আমরা সব সময় ভুলে যাই সেটা হচ্ছে রাজনীতিতে আপোষহীন বলে কোন কথা নেই। এই সহজ বিষয়টা বুঝতে বিএনপি যত দেরী করবে তাদের জন্যে ততই বিপত্তি ডেকে আনবে। কাজেই এখন তাদের উচিৎ হবে প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়াদিয়ে একপা এগিয়ে যাওয়া। তাহলে আমরা বুঝতে পারবো প্রধানমন্ত্রীর প্রকৃত মনোভাব। আল্লাহ্‌ আমাকে সহ সবাইকে সত্য বলা, সত্য বুঝা ও সত্যের পথে চলার ক্ষমতা দান করুন। আমিন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ