পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সরকারি-বেসরকারি দুই ধরনের হজ যাত্রায় এবারো খরচ বেড়েছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় দু’টি প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনের বিধান রেখে হজ প্যাকেজ, ১৪৪০ হিজরি/২০১৯-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতি-২০১৯ এবং ‘হজ প্যাকেজ-২০১৯’-এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের চলতি বছর পবিত্র হজ পালনে খরচ বেড়েছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় দু’টি প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনের বিধান রেখে ‘হজ প্যাকেজ, ১৪৪০ হিজরি/২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ’-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এবার হজ পালনে প্যাকেজ-১এ খরচ পড়বে চার লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা এবং প্যাকেজ-২এ তিন লাখ ৪৪ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। গত বছর প্যাকেজ-১এ তিন লাখ ৯৭ হাজার ৯২৯ টাকা এবং প্যাকেজ-২এ তিন লাখ ১৯ হাজার ৩৫৫ টাকা নির্ধারিত ছিল। সেই হিসেবে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজ-১এ এবার ২০ হাজার ৫৭১ টাকা এবং প্যাকেজ-২ এ ২৪ হাজার ৬৪৫ টাকা বেশি খরচ পড়বে। ২০১৭ সালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজ-১এর তিন লাখ ৬০ হাজার ২৮ টাকা এবং প্যাকেজ-২এ তিন লাখ চার হাজার ৯০৩ টাকা নির্ধারিত ছিল।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এবার বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় তিন লাখ ৪৪ হাজার টাকার কম নেয়া যাবে না। এ বছর যারা হজে যেতে চান, তাদের পাসপোর্টের মেয়াদ ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকতে হবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১০ আগস্ট হজ হতে পারে। সউদী আরবের সঙ্গে হজ চুক্তি অনুযায়ী, এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় সাত হাজার ১৯৮ জন ও অবশিষ্ট এক লাখ ২০ হাজার জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করার সুযোগ পাবেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোও দু’টি প্যাকেজ করতে পারবে। এজেন্সিগুলো প্যাকেজ-২এর জন্য নির্ধারিত তিন লাখ ৪৪ হাজার টাকার নিচে কোনো প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে না। তিনি বলেন, বাড়ি ভাড়ার সুবিধার ওপর ভিত্তি করে দু’টি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়। বাড়ি কাবা শরীফের ৫০০ মিটারের মধ্যে প্যাকেজ-১ আর সর্বোচ্চ ২ কিলোমিটারের মধ্যে বাড়ি হচ্ছে প্যাকেজ-২। মিনা, মুজদালিফা, আরাফাতের ময়দানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে প্যাকেজ-১ এর হজযাত্রীরা ট্রেন সুবিধা পাবেন। তিনি বলেন, এবার হজের খরচ কোনো ক্ষেত্রে বেড়েছে, কোনো ক্ষেত্রে কমেছে। এবার বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ২৮ হাজার টাকা। এই ভাড়া গতবারের চেয়ে ১০ হাজার ১৯১ টাকা কম। গত বছর বিমান ভাড়া ছিল এক লাখ ৩৮ হাজার ১৯১ টাকা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এবার বাড়ি ভাড়া একটু বেড়েছে। যে ভাড়া এক লাখ ৫৭ হাজার ৬১৯ টাকা ছিল, তা এক লাখ ৬৭ হাজার ৯৬২ টাকা হয়েছে। ১০ হাজার টাকা বেড়েছে। তিনি বলেন, হজযাত্রীদের কোরবানির টাকা এবারো ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। কোরবানির টাকা এবার বেড়েছে। আগে ছিল ৪৭৫ রিয়াল, এবার হয়েছে ৫২৫ রিয়াল। ৫০ রিয়াল বাড়িয়েছে সৌদি সরকার।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ ছাড়া সৌদি হজ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে প্রতি হজযাত্রীর জন্য ৫০ সৌদি রিয়াল এবং জেনারেল কার সিন্ডিকেটের অনুক‚লে ১৮ রিয়াল বাবদ মোট ৬৮ রিয়াল সমপরিমাণ অর্থ অর্থাৎ এক হাজার ৫৩০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। এটা প্রত্যেক হজযাত্রীর গ্যারান্টি। এটি ওখানে অ্যাডজাস্টমেন্টের সুযোগ আছে। সৌদি সরকারের ট্রেন সুবিধা গ্রহণকারী হাজীদের ২৪ হাজার ৯৮১ টাকা ও অন্য হাজীদের ১৯ হাজার ২৫ টাকা সার্ভিস চার্জ এবং ভাড়া বাবদ বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, এবার একটা নতুন প্রস্তাব আছে, সৌদি আরব মিনায় তাঁবুতে বহুতলবিশিষ্ট খাটের ব্যবস্থা করবে। যদি এই ব্যবস্থা করা হয়, তবে প্রত্যেক হজযাত্রীকে চার হাজার ১৬ টাকা বাড়তি দিতে হবে। এখন সেখানে ফ্লোরিং করা হয়। যদিও তারা বহুতল খাটের বিষয়ে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসেননি। এলে দিতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই বছরের হজের অনুসরণীয় বিষয়গুলোর একটি হচ্ছে এমআরপির পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সাল পর্যন্ত থাকতে হবে। এবারো একটি হজ এজেন্সি সর্বনিম্ন ১৫০ জন ও সর্বোচ্চ ৩০০ জন হজযাত্রী পাঠাতে পারবে। এক ফ্লাইটে তিনটি মোয়াল্লেমের বেশি হজযাত্রী দেয়া যাবে না। শফিউল আলম বলেন, যেসব ব্যক্তি দু’বার বা এর বেশি হজ করেছেন বা ভিসা পেয়েছিলেন, কিন্তু হজে যেতে পারেননি; তাদের মধ্যে যারা এ বছর হজে যাবেন তাদের সৌদি সরকারের আরোপ করা দুই হাজার ১০০ রিয়াল সমপরিমাণ অর্থ অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে। এটা পেনাল্টি, ডিসকারেজিং।
নতুন জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রচারের জন্য আগে শুধু ওয়েবসাইটে দেয়া হতো। এখন একই সঙ্গে বিজ্ঞপ্তি আকারে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশসহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসনের কার্যালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও সরকারের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মাধ্যমে বহুল প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, আগে নিয়ম ছিল ৪৫ জন হজযাত্রীর জন্য একজন গাইড। সৌদি আরবের বাসে সাকুল্যে ৪৫ জন ধরে। একজনও বেশি নেয়া যায় না। তাই এখন ৪৪ জনের জন্য একজন গাইড নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রীর সম্মতি ছাড়া তার স্থানে অন্য কাউকে প্রতিস্থাপন করা যাবে না। মৃত্যু ও গুরুতর অসুস্থতা ছাড়া রিপ্লেসমেন্ট হবে না, রিপ্লেসমেন্ট করতে হবে এবং জীবিত থাকলে সম্মতি লাগবে। আগে ছিল ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী আর্থিক, দৈহিকভাবে সামর্থ্যবান ব্যক্তি হজে গমনের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। এখন আরেকটু এক্সপ্লেইন করা হয়েছে। এখন বলা হয়েছে, আর্থিক ও দৈহিকভাবে সামর্থ্যবান এবং মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তি হজে গমনের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যদি একাধিক এজেন্সি সমন্বিতভাবে হজ কার্যক্রম পরিচালনা করতে চায়, তবে এজেন্সিগুলোকে হজ পরিচালকের উপস্থিতিতে পারস্পরিক লিখিত সম্মতির ভিত্তিতে নেতৃত্ব প্রদানকারী এজেন্সি নির্ধারণ করা হবে। কারণ, এটা নিয়ে অনেক সময় এজেন্সিগুলোর মধ্যে মনোমালিন্য হয়। সউদী আরবে বাংলাদেশ হজ অফিসে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের জন্য নতুন নীতিতে বিধান রাখা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখানে অনেক লোক লাগে, কিন্তু লোক নেই। এ জন্য সেখানে সর্বোচ্চ ষষ্ঠ গ্রেডে দু’জন এবং ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডে পাঁচজন কর্মচারী সাময়িকভাবে সংযুক্ত করার বিধান রাখা হয়েছে। আগের নীতিমালায় রমজান মাসের ৭ তারিখের মধ্যে বাড়িভাড়া সংক্রান্ত ই-হজের চুক্তিপত্র ঢাকায় পাঠানোর নিয়ম থাকলেও এখন এটা রমজান মাসের আগেই করতে হবে।
শফিউল আলম বলেন, নীতিতে নতুন একটি বিধান যুক্ত করা হয়েছে যে, প্রবাসী নাগরিকদের স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেয়া যাবে। অবৈতনিক এসব স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেয়া হলে তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, হজযাত্রীদের বাড়িভাড়া, সার্ভিস চার্জ, ক্যাটারিংয়ের (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) অর্থ অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে। হজযাত্রীদের বিমানবন্দর থেকে সহজে হোটেলে পাঠানোর সুবিধার্থে পাসপোর্টের পেছনে বাড়ির ঠিকানার স্টিকার ও বিভিন্ন বাড়ির হজযাত্রী সহজে শনাক্ত করার জন্য লাল, সবুজ, হলুদ, নীল, গোলাপি রংয়ের কাগজ লাগিয়ে দেয়া হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, হজ গাইডের ৫০ ভাগ সউদী আরব থেকে নিয়োগ দেয়া যাবে। ধর্ম মন্ত্রণালয় বা হজ পালন করেছেন, এমন অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের প্রেষণে মৌসুমি হজ অফিসার নিয়োগ করা হবে।
নীতি অনুযায়ী বিমানভাড়া বাবদ জমা করা অর্থ সরাসরি এয়ারলাইন্স বরাবর পে-অর্ডার ছাড়া অন্য কোনোভাবে দেয়া যাবে না। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে হজযাত্রীদের মতো ওমরাহ যাত্রীদেরও প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে। ওমরাহ এজেন্সিকে হজ পরিচালকের কাছে যাত্রী প্রত্যাবর্তন প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। যাতে কেউ থেকে না যায়। এ বিষয়ে নতুন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনিছুর রহমান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।